ব্রেকিং নিউজ
Home - সারাবিশ্ব - তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী?

তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে পৃথিবী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মূলত পৃথিবী দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। যার এক ভাগের নেতৃত্বে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, অন্য পক্ষে রাশিয়া। চার দশকের বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করে। যে সময়টিকে বলা হয় কোল্ড ওয়ার বা ঠাণ্ডা যুদ্ধ বা স্নায়ুযুদ্ধের সময়।’৯০ সালে রাশিয়া ভেঙে যাওয়ার পর পৃথিবীর এক মাত্র মোড়ল বনে যায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই মোড়লিপনায় আবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাশিয়া। মূলত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও আইএসের জঙ্গিপনা এই অবস্থাকে ত্বরান্বিত করছে। সিরিয়াকে ঘিরে এখন বিশ্ব দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পাশের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র। যার সঙ্গে আছে, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্ব ও সামরিক জোট ন্যাটো।

অন্য পাশে রাশিয়া, ইরান। মধ্যপন্থায় অবস্থান করছে আরেক পরাশক্তি চীন। যদিও দক্ষিণ চীন সাগরকে ঘিরে এখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক যাচ্ছেতাই খারাপ। এর মধ্যে গত পরশু আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে তুরস্ক একটি রুশ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এটিকে তিনি পেছন থেকে ছুরি মারার সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। তুরস্ককে ভয়াবহ পরিণতির হুমকিও দিয়ে রেখেছেন পুতিন। এর মধ্যেই সদস্য রাষ্ট্র তুরস্কের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে সামরিক জোট ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এ অবস্থাকে নতুন করে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে অনেকে বলছেন, বিশ্ব এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

মূলত সিরিয়ায় আইএস দমন করা নিয়ে একযোগে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে রাশিয়া। তবে এ হামলায় সমন্বয় নেই। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো একভাবে হামলা চালাচ্ছে। অন্যভাবে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। দুই পক্ষের যুদ্ধবিমানগুলো কাছাকাছি এসে হামলা চালিয়ে ফিরে যাচ্ছে। এসব যুদ্ধবিমানের মধ্যে সংঘাত যে কোনো মুহূর্তে লেগে যেতে পারে- তা নিয়ে বিশ্লেষকরা আগে থেকেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসছেন। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে তুরস্ক একটি রুশ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল সিরিয়ায় বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে রাশিয়া। একই সঙ্গে তুরস্ক থেকে খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগকে কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। রাশিয়ার মোট আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে দুই দশমিক তিন শতাংশ আসে তুরস্ক থেকে। অর্থাৎ দেশটি থেকে সাত দশমিক তিন বিলিয়ন (৫৬ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা) ডলারের পণ্য আমদানি করে থাকে রাশিয়া। এর মধ্যে ৯১০ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলারের (সাত হাজার ২৩ কোটি টাকা) ফলমূল ও ৫৭১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের (চার হাজার ৪০৯ কোটি টাকা) সবজি রয়েছে।

এদিকে সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের খবরকে উদ্বেগজনক বলছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বুধবার মন্ত্রণালয়ের টুইটার ফিডে বলেছেন, সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে লাটাকিয়ার কাছে হেমিম বিমান ঘাঁটিতে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করছে তার দেশ। এই রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ২৫০ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইলের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম, যেখানে তুরস্ক সীমান্তের দূরত্ব ৩০ মাইলেরও কম। মূলত তুরস্ক মঙ্গলবার তার সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় একটি রুশ জঙ্গি বিমান ভূপাতিত করার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের ঘোষণা দিল রাশিয়া। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এ অবস্থাকে নতুন করে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গত অর্ধশতাব্দীতে কোনো ন্যাটো রাষ্ট্রের রুশ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামানোর ঘটনা এই প্রথম। এর আগে রুশ জঙ্গি বিমানগুলো বহুবার ন্যাটো দেশগুলোর আকাশসীমা লঙ্ঘন করলেও সেগুলোকে নামানোর সাহস করেনি কেউ। তুরস্কই প্রথম। তুরস্কের সমর্থনে তাই ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জেন্স স্টোলেনবার্গ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘জোটের সবকটি দেশই তুরস্কের পাশে রয়েছে।’ এদিকে রাশিয়ার ‘রক্তচক্ষু’ দেখে শিগগিরই ন্যাটোকে জরুরি বৈঠক ডাকতে বলেছে সদস্য দেশ তুরস্ক। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়াকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরেই দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে গোটা বিশ্ব। এর মধ্যে গত সপ্তাহে প্যারিস হামলার পর পরিস্থিতি অল্প সময়ের জন্য হলেও কিছুটা বদলেছিল। আইএস জঙ্গিদের নির্মূল করতে সিরিয়া ও সিরিয়ার বাইরে অন্য দেশেও রাশিয়া ও ফ্রান্সের কাছে আরও বেশি সামরিক সক্রিয়তার দাবি জানিয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু মঙ্গলবার রুশ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করার ঘটনা ফের পরিস্থিতিকে থমথমে করে দিল। আর এ অবস্থা খুব শিগগিরই স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৬ সাল বিশ্ব পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হবে। তা গড়াতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকেও। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অবলম্বনে।

Leave a Reply

x

Check Also

২১ ফেব্রুয়ারির পাশাপাশি ৮ ফাল্গুন লেখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

আজকের মঠবাড়িয়া ডেস্ক <> বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি নথিপত্র, আমন্ত্রণপত্রসহ সব ক্ষেত্রে ২১ ফেব্রুয়ারি লেখার ...