ভারতের পাঞ্জাবে একটি বিমান ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত আট জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।
পাকিস্তান সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে শনিবার ভোরে এ হামলা হয়।
রয়টার্স জানায়, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচ সন্ত্রাসীর সবাই এবং দুই সেনা সদস্য মারা গেছে।
তবে পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা আইএএনএস ও এনডিটিভি অন্তত তিন সেনার নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং টুইটে লিখেছেন, “পাঠানকোট অভিযানে পাঁচ সন্ত্রাসীর সবাইকে খতম করায় আমি আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
“যদিও এ অভিযানে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হারিয়েছি। তাদের পরিবারের প্রতি আমি অন্তর থেকে সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের এ আত্মত্যাগের কথা আমরা কখনও ভুলব না।”
প্রথম দফায় ছয় ঘণ্টা গোলাগুলির পর পুলিশ ও সেনাসদস্যরা অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দেয়।
এরপর ঘাঁটিতে থাকা জঙ্গি সদস্যদের ‘ধরতে’ চিরুনি অভিযান চালানোর সময় নতুন করে গুলি ও গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায় বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
ঘাঁটিতে থাকা মিগ-২৯ ও অন্যান্য আধুনিক বিমান নিরাপদে রয়েছে বলে ভারতের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এনডিটিভিকে নিশ্চিত করেছেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লাহোরে ‘সারপ্রাইজ’ সফরের কয়েকদিনের মাথায় এই সন্ত্রাসী হামলা ঘটল।
হামলাকারীরা জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই মোহাম্মদের সদস্য এবং তারা পাকিস্তানের ভাওয়ালপুর থেকে এসেছে বলে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দিল্লিতে রাজনাথ সিং বলেন, “পাকিস্তান থেকে আমাদের উপর যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেব আমরা।
“পাকিস্তান আমাদের প্রতিবেশী, আমরা শান্তি চাই। কিন্তু ভারতের উপর কোনো ধরণের সন্ত্রাসী হামলার কড়া জবাব দেওয়া হবে।”
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা জানানো হয়েছে।
পাঠানকোটের এই বিমান ঘাঁটিতে হামলার বিষয়ে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, বিমান বাহিনীর প্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা এক জরুরি বৈঠক করে।
গোয়েন্দা সতর্কতার পরপরই পাঠানকোট বিমানবন্দরে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড মোতায়েন করা হয়; অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে জম্মু ও কাশ্মিরের পুলিশকে ‘প্রস্তুত থাকতে’ নির্দেশ দেওয়া হয়।
শনিবার ভোর ৪টার দিকে বিমান ঘাঁটির নিকটবর্তী একটি গ্রাম থেকে বন্দুকধারীরা প্রথম গুলি চালায় বলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়।
হামলার সময় সন্ত্রাসীরা গুরুদাসপুরের সাবেক পুলিশ সুপার সালভিন্দর সিং এর একটি গাড়ি ব্যবহার করে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
শুক্রবার রাতে পাঠানকোট-জম্মু সড়ক থেকে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা জঙ্গিরা সালভিন্দর ও তার দুই সহযোগীসহ গাড়িটি অপহরণ করে। পরে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও সালভিন্দরের মোবাইল ফোন ও গাড়িটি জঙ্গিরা রেখে দেয়।
সালভিন্দরের ফোন দিয়েই হামলাকারীরা পাকিস্তানে তাদের ‘নিয়ন্ত্রণকারী’র সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে টাইমস অফ ইন্ডিয়া।
“ওই ফোনে পাঠানকোট বিমানবন্দরের ‘যতটা সম্ভব ক্ষতি করা’র নির্দেশ দেওয়া হয়।”
ছয় মাস আগে গুরুদাসপুরে এক সন্ত্রাসী হামলায় চার পুলিশ ও তিনজন সাধারণ নাগরিক নিহত হওয়ার পর এটাই সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা।
ওই হামলায় তিন জঙ্গি অংশ নিয়েছিল এবং পরে পুলিশের সঙ্গে ১২ ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তাদের প্রত্যেকেই নিহত হয়েছিল।
খবর : রয়টার্স ও টাইমস অফ ইন্ডিয়া