ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - শ্যাষ জীবনে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম দেইখ্যা মরতে চাই

শ্যাষ জীবনে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম দেইখ্যা মরতে চাই

মনোতোষ হাওলাদার, বামনা(বরগুনা) প্রতিনিধি >
রাইতে বুকাবুনিয়ার ক্যাম্পে খাওন লইয়া যাইতাম, নিশিরে শীতে অনেক কষ্ট হরতাম, হের পর মোরে বরগুনায় মিলিশিয়া( শর্ট আর্মস ট্রেনিং) ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ে পাঠায়, ওই হানে ট্রেনিং লইয়া মুই হেহানের অস্ত্রশ^স্ত্র পাহাড়া দিছি আর যোদ্ধাগো খাওন পৌছাইয়া দিছি। হের পরে দ্যাশ স্বাধীন হয়, অনেকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম লেহায়, অনেকে সত্যিকারের যোদ্ধা না হইয়াও হেরা এহন মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। অথচ মুই দ্বারে দ্বারে ঘুইরাও এই ৪৫ বছরের মধ্যে তালিকায় নাম উঠাইতে পারিনাই। শ্যাষ জীবনে মুই মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম দেইখ্যা মরতে চাই। কষ্টে আর গভীর আক্ষেপের সুরে এই কথাগুলো বললেন বরগুনার বামনা উপজেলার বড়তালেশ্বর গ্রামের ৬৫ উর্ধ্ব বয়সী অসহায় দরিদ্র কৃষক মুক্তিযোদ্ধা মো. নূরুল হক। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরেও সচেতনতা আর টাকা পয়সার অভাবে মুক্তিযোদ্ধার নামের গেজেটে নিজের নাম অন্তর্ভূক্ত করতে পারেননি এই কৃষক মুক্তিযোদ্ধা।
সরেজমিনে, বড়তালেশ্বর গ্রামে ওই মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে গিয়ে জানাগেছে, বড়তালেশ্বর গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ যুবক মো. নূরুল হক স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ৯নং সেক্টরের সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার বরগুনা জেলার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়ায় জড়ো হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিদিন রাতের আঁধারে খাদ্য সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র পরিবহন করতো। তিনি যুবক বয়সে বেশ চটপটে হওয়ায় সেখানে অবস্থান নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য প্রকৃত যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলতে বরগুনা মিলিশিয়া ক্যাম্পে নেওয়ার জন্য যেতে উদ্বুদ্ধ করেন। সদ্য বিবাহিত এই যুবক নূরুল হক নববধূকে ঘরে একলা রেখে একদিন গভীর রাতে পালিয়ে যায় বরগুনা মিলিশিয়া ক্যাম্পে। তাঁ স্ত্রী অনেক খোজাখুজির পরে কোন এক মুক্তিযোদ্ধার মাদ্যমে জানতে পারে তাঁর স্বামী বরগুনা ক্যাম্পে অস্ত্র চালনার ট্রেনিং নিচ্ছে। নূরুল হক সেখানে অস্ত্র ট্রেনিং করে আর অস্ত্রস্বস্ত্র পাহারা সহ মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পরিবহনের কাজ করে। এমন সময় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়, দেশ শত্রু মুক্ত হয়। যোদ্ধা নুরুল হক বাড়ি ফিরে আসেন। সহজ সরল এই যোদ্ধা তখন সচেতনতার আর অর্থীক অ-স্বচ্ছলতার কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নাম তুলতে পারেনি। অনেক বার জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে তিনি আবেদন করা স্বত্বেও টাকা পয়সার দৈন্যদশায় তিনি এ বিষয়ে খোজখবর নিতে পারেনাই। আ’লীগ সরকার নতুন করে অনলাইনে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা শুরু করলে কৃষক এই মুক্তিযোদ্ধা এবারে এই তালিকায় অনেক কষ্টে নাম তোলে। যা বর্তমানে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, এই মুক্তিযোদ্ধার নিজের নামে তৎকালীণ সময়ে এম এ জী আতাউল গনী ওসমানীর স্বাক্ষরিত দেশ রক্ষা বিভাগের ৯নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র , বরগুনা শর্টআর্মস ট্রেনিংয়ে অংশ নেওয়ার পরে অস্ত্র জমাদানের সনদপত্র ও ৯ নম্বর সেক্টরের বাংলাদেশ আর্মস ফের্সের সনদপত্র রয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য আজ অবধি তা সংরক্ষণ করে রেখেছেন নূরুল হক।
এ ব্যাপারে ওই কৃষক মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী নূরজাহান বেগম বলেন,আমার স্বামীর টাহা পয়সা নাই তাই তারিকায় আইজও নাম ওডে নাই। হে মুক্তিযোদ্ধা আছিল সবাই জানে। ওনার কবে তালিকায় নাম ওঠবে হ্যা আল্লায় জানে।
১নং বুকাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সবুজ বলেন, নূরুল মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। এটা আমিও শুনেছি। তবে তালিকায় তার আছে না নাই সে বিষয়ে অবগত নই।
বামনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. জয়নাল আবেদীন খান বলেন, বর্তমান তালিকায় সে সব মুক্তিযোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি তারা ইতিমধ্যে অনলাইনে আবেদন করেছেন। বাছাই কমিটি তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার দলিলাদি যাচাই-বাছাইয়ের পরে যদি টিকে যায় তাহলে ওই মুক্তিযোদ্ধার নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত হবে।

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...