ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - ৩০ বছর পর হারানো ছেলের খোঁজ পেলেন মা শৈলবালা !

৩০ বছর পর হারানো ছেলের খোঁজ পেলেন মা শৈলবালা !

দেবদাস মজুমদার >

অমল চন্দ্র গোলদার ১০ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। এরপর আর বাড়ি ফেরেনি মা শৈলবালা গোলদারের পেটের সন্তান। ছেলেকে মৃত ভেবেই সন্তান হারা মায়ের জীবনে টানা ৩০ বছর কেটেছে। বহুু সন্ধানেও মিলছিলনা ছেলের হদিস । হঠাত সন্তানহারা বৃদ্ধা মায়ের কাছে খবর আসে তার হারানো ছেলে বেঁচে আছে। হারানো অমলের বেঁচে থাকার খবর মেলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক এর কল্যাণে । অশীতিপর শৈলবালার ঘরে এখন সুখের কান্না বইছে।
হারিয়ে যাওয়া শিশুর পরিবর্তিত হয়েছে দেশে বদলে গেছে ভাষা ও সংস্কৃতি। তবু বদলে যায়নি মাটির টান। গর্ভধারিণী মায়ের প্রতি মমত্ববোধ। অবশেষে ৩০ বছর পর ব্যাকুল ছেলে তার মায়ের খোজ পেয়ে যায়। কয়েক হাজার মাইলের দুরত্বের ব্যবধানও তাই হার মানলো মাতৃত্বের কাছে। এ যেন অন্য আনন্দ, অন্য অনুভূতি। হারিয়ে যাওয়া ছেলে বেঁচে থাকার আনন্দে মা শৈবালার কান্না থামছে না। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেরই নীরবে দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়েছে।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর মিঠাখালী গ্রামের নীল কান্ত গোলদার ও শৈলবালা গোলদার দম্পতির ছোট ছেলে অমল কান্তি গোলদার টানা ৩০ বছর ধরে নিখোঁজ থাকার পর গতকাল রবিবার তার পরিবার জানতে পারেন ১০ বছর বয়সে হারিয়ে যাওয়া অমল এখন কাতার প্রবাসি। এই দীর্ঘ সময়ে পরিবার স্বজন ছেড়ে শিশু অমল নিদারুণ লড়াইয়ে এখন পরিনত মানুষ। তবে স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল তার পরিবার ঘর বাড়ি আর স্বদেশভূমি।

স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর মিঠাখালী গ্রামের নীল কান্ত গোলদারের তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট অমল গোলদার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৮৬ সালে নিখোঁজ হয়। এরপর আর তাকে তার পরিবার খুঁজে পায়নি। মিশু অমল ওই সময় পাচারকারীদের কবলে পড়ে প্রথমে ভারতে চলে যায়। তারপর এখন সে গত নয় বছর ধরে কাতার প্রবাসি। কাতার প্রবাসি কুষ্টিয়ার সবুর আলি নামে এক ব্যাক্তির সাথে মঠবাড়িয়ার স্থানীয় এক সংবাদ কর্মী রফিকুজ্জামান আবিরের সাথে ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তাদের দুজনের মধ্যে কয়েকদিন আগে ম্যাসেজ আদান প্রদানও হয । এসময় সবুর আলী তাকে জানান মঠবাড়িয়ার একটি ছেলে কাতারে আছে তার নাম অমল গোলদার। তবে সে ১০ বছর বয়সে সে হারিয়ে গিয়েছিল । বাড়ি ঘর আর পরিবারের বৃত্তান্ত কিছু সে নিশ্চিত করতে পারছেনা। এরপর ওই সংবাদ কর্মী জামান আবির মঠবাড়িয়ায় অনুসন্ধান চালিয়ে কাতার প্রবাসি অমলের পরিবারের খোঁ পান। গতকাল রবিবার তিনি মঠবাড়িয়ার উত্তর মিঠাখালী গ্রামের নীল কান্ত গোলদারের বাড়িতে গিয়ে অমলের বিষয়ে তত্য দিলে তার পরিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরে মা শৈলবালা গোলদারের সাথ ছেলে অমলের মোবাইল মাধ্যমে আবেঘন কথোপকথন হয়। এভাবে ৩০ বছর পর অমল তার পরিবারের সন্ধান পায়। মায়ের কান্নায় নিজেকেও স্বাভাবিক রাখতে পারেনি কাতার প্রবাসী অমল গোলদার। মা মা বলে বারবার চিৎকার করেন হারানো মাকে কাছে পাওয়ার জন্য । অমলের মা ও পরিবারের সকলের কান্নায় পাড়া প্রতিবেশেীরা ভির করলে সেখানে এক হৃদয় নাড়িয়ে দেওয়ার পরিবেশের অবতারণ ঘটে।

অমল গোলদার জানায়, ছোট বেলায় সে খুব ডানপিটে আর দুরন্ত ছিল। ১০ বছর বয়সে সে বাড়িে থেকে বেরিয়ে তুষখালী লঞ্চঘাটে এসে একটি লঞ্চে চড়ে। এরপর সে হারিয়ে যায়। পরে সে পাচারকারীদের কবলে পড়ে ভারতে চলে যায়। সেখানে ষ্টেশনে কুলির কাজ শুরু করে। পরে রুটির দোকানে কাজ করে বড় হতে থাকেন শিশু অমল। এমন অবস্থায় পরিবার থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায় মাতৃভূমি ও পরিবার স্বজন। পথের মানুষ হিসেবেই সেখানে সে বড় হতে থাকেন। পরে ভারতের নদীয়ায় সে এক লোকের কাছে আশ্রয় মেলে তার। সেখানে সে বিয়ে করে সংসারীও হয়। তার দুই মেয়ে এখন স্কুলে লেখা পড়া করছে ।

মঠবাড়িয়া পৌর শহরের নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সংবাদ কর্মী মো. রফিকুজ্জামান আবির জানান, অমল টানা ৩০ বছর নিখোঁজ ছিলেন। গত নয় বছর আগে সে ভারতের নদয়িা থেকে কাতারে চলে যায়। সেখানে সে একটি কারখানায় কাজ করে আসছেন। একই কারখানায় বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার সবুর আলী নামে এক ব্যাক্তির সাথে তার পরিচয় হয়। অমল বাংলাদেশে মঠবাড়িয়ায় তার ঘর বাড়ি ও পরিবারের স্বজনরা ছিল । তাদের কারও সে খোঁজ জানেনা। হারানো স্মৃতি কিছুটা অমলের কেবল আবছা মনে পড়ে। এরপর বাংলাদেশের সবুর আলি অমলের বৃত্তান্ত সন্ধানের চেষ্টা চালিয়ে সফল হন। সবুর আলি আমার ফেসবুক বন্ধু ছিলেন। তিনি আমার প্রোফাইলে মঠবাড়িয়া অবস্থানের বিষয়টি জানতে পেরে বিষয়টি তিনি আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানান। পরে আমি অনুসন্ধান চালিয়ে অমলের বাড়ি ঘর আর পরিবারের খোঁজ পেয়ে তাদের সাথে অমলের যোগাযোগ স্থাপন করে দেই। তিনি আরও জানান অমল জানিয়েছে পরিবারের হারানো স্বজনদের কাছে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে ফিরে আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

অমল গোলদার বলেন, আমি ভীষণ খুশি। মাকে দেখার তর আর সইতেছেনা। বারবার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আমার। দীর্ঘ ৩০ বছর পর আমার মা ও মাতৃভূমির সন্ধান পেয়েছি। সন্তান হিসেবে মায়ের প্রতি যে দায়িত্ববোধ থাকা উচিত আমি তা পালন করতে চাই। বাড়ি থেকে বেড়িয়ে হারিয়ে যাওয়া এই আমি পথে পথে ঘুরেছি। আজ আমার মাকে পাওয়ার অপেক্ষাটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। মাকে পাওয়ার আনন্দটা শেয়ার করার জন্য শিগগিরই আমার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মঠবাড়িয়ার নিজের ভিটে মাটিতে আসবো। আমি এখন এই অপেক্ষার প্রহর গুনছি ।

অমলের মেঝ ভাই বিমল গোলদার জানান, আমার ছোট ভাই হারিয়ে যাওয়ার পর আমরা আর তার খোঁজ পাইনি। বহু চেষ্টার পর পরিবারের সবাই ধরে ধরে নেই অমল হয়ত আর বেঁচে নেই। কিন্তু ঈশ্বর তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। হারানো রক্তের ভাইকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ বলে বোঝানোর মত নয়। আমরা সবাই এখন অমলের ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি।

প্রতিবেদনের ছবি > মো. রফিকুজ্জামান আবির

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...