ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - চিরকুমার চেয়ারম্যানের ৭০ বছর বয়সে এসে বিয়ে !

চিরকুমার চেয়ারম্যানের ৭০ বছর বয়সে এসে বিয়ে !

মো. খালিদ আবু, পিরোজপুর > চিরকুমার ইউপি চেয়রম্যান ৭০ বছর বয়সে এসে হঠাৎ বিয়ে করে বসলেন। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সামসুর রহমান খান কাবিননামা করেই বিয়ে করলেন ৪৫ বছরের বিধবা কনে জাহানুর বেগমকে। এক লাখ টাকা দেন মোহরে সামাজিকভাবেই গত শুক্রবার এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সামসুর রহমান খান ৭০ বছর বয়সে বিয়ে করে চিরকুমারের নাম ঘুচিয়েছেন। তাঁর এ বয়সী বিয়ে নিয়ে মানুষের মনে আনন্দ আর কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনীতি আর জনসেবার জন্য এতদিন বিয়ে করতে সময় পাননি তিনি। মায়ের শত অনুরোধ, এলাকাবাসীর পিড়াপিড়ি, হাজারো সমর্থকদের অনুরোধ কোন কিছুই এতদিন তাকে কথা শোনাতে পারেনি। অবশেষে কথা রাখলেন তিনি। তবে আক্ষেপ, তার মা পুত্রবধু দেখে যেতে পারলেন না।

স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে,জিয়ানগর উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সামসুর রহমান খান। গত শুক্রবার (১৭ জুন) সকালে উপজেলার চন্ডিপুর কাজী অফিসে সাবেক এই চেয়ারম্যান তার নিকট আত্মীয়দের উপস্থিতিতে বালিপাড়া গ্রামের বিধবা জাহানুর বেগমের সাথে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । জাহানুর বেগমের স্বামী ফজলু মৃধা চার বছর আগে মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর ২ ছেলে আর ১ মেয়ে রেখে যাওয়া অসহায়ত্বের এ জীবনে জাহানুর বেগম যেমন নতুন ঘর আর বর পেয়ে খুশি, তেমনি চিরকুমারের তালিকা থেকে নিজের নামটি বাদ দিতে পেরে বর নিজেও বেশ উৎফুল্ল। বিয়ের দিনে শত শত উৎসুক গ্রামবাসি বয়সী বর আর নব বধূকে এক নজর দেখতে ভীর জমান।

বর সামসুর রহমান খান বলেন, যৌবন বয়সে মা আমার জন্য নেছারাবাদ উপজেলায় বি.এ পাশ এক পাত্রী ঠিক করেছিলেন। তখন আমি রানিং চেয়ারম্যান। তাই জনসেবার ব্যঘাত ঘটবে বলে তখন আমি বিয়ে করিনি। দু:খ করে মা বলেছিলেন, “বিয়ে তো করবি, আমি মরার পর”। মায়ের সেই কথাই সত্যি হল। দেখতে দেখতে বেলা গড়িয়েছে অনেক। তাই শেষ জীবনের একাকিত্ব কাটাতেই এই বিয়ের পিঁড়িতে বসা বলে জানালেন তিনি।
তিনি জানান,ব্যক্তিগত জীবনে সামছুর রহমান খান স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে খুলনা সিটি কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে খুলনা জেলা ছ্ত্রালীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। এরপর পড়াশুনা শেষে নিজ গ্রামে এসে ১৯৮৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দাঁড়ালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি পিরোজপুর জেলা আ’লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সদস্য ছিলেন। নিজ ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় ছোট বড় সকলের কাছে একজন জনপ্রিয় নেতা ”সামছু ভাই” হিসেবে পরিচিত পান তিনি। জীবনের বেশির ভাগ সময় সমাজসেবা আর রাজনীতির পিছনে ব্যয় করেই ৭০টি বছর পেরিয়ে গেছে তার। ছাত্র জীবনে পিতা আর মধ্য বয়সে মাকে হারিয়ে এক প্রকার একাকিত্ব জীবন চলে তার। রান্না বান্না থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় কাজ এবং নিজের দেখাশুনা নিজেই দেখভাল করতেন তিনি। তবে তাকে সাংসারিক জীবন অর্থ্যাৎ বিয়ের আসনে বসাতে এর আগে বহুবার চেস্টা করেও ব্যার্থ হয়েছেন তার আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখিরা। শুক্রবার দুপুরের দিকে আচমকা তার এ বিয়ের খবরটি চাউর হয়ে গেলে এলাকার সব বয়সী নারী পুরষের কাছে মুখরোচক সংবাদে পরিনত হয়। উভয়ের পারিবারিক সম্মতিতে এ বিয়ে হওয়ায় স্বজনদের মধ্যেও যেন আনন্দের বান ডেকেছে।
তার এ বিয়ের খবরে সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাধনা হালদার, পত্তাশী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও আ’লীগ নেতা মোবারক আলী হাওলাদার, বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন বয়াতী, বালিপাড়া ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু হানিফ খান বাঙ্গালী সহ অনেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...