ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - রাজাপুরে ব্ল্যাকবোর্ডে উত্তর লিখছেন শিক্ষক, পরীক্ষার্থীর সামনে বই, পাহারায় কেন্দ্র সচিব

রাজাপুরে ব্ল্যাকবোর্ডে উত্তর লিখছেন শিক্ষক, পরীক্ষার্থীর সামনে বই, পাহারায় কেন্দ্র সচিব

রাজাপুর প্রতিনিধি : পরীক্ষাকেন্দ্রে কক্ষের বাইরে পাহারায় দাঁড়িয়ে আছেন সচিব। পরিদর্শনে আসা ম্যাজিস্ট্রেট ও সাংবাদিকদের কাছে আসার খবর কক্ষের ভেতর জানিয়ে সাবধান করে দিচ্ছেন। কক্ষের ভেতরে আছেন পর্যবেক্ষক শিক্ষক। শিক্ষকের পাশেই বেঞ্চের ওপর বইয়ের খোলা পৃষ্ঠা। পরীক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে দেখে দেখে লিখে চলেছেন।
মঙ্গলবার ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আদাখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) শাখার চূড়ান্ত পরীক্ষায় অধিকাংশ কক্ষের চিত্রই ছিল এমন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, পরীক্ষার প্রবেশপত্র নেওয়ার সময় নকল করতে দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন কলেজের শিক্ষকরা। তারাই কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে অর্থের লেনদেনের মাধ্যমে নকল সরবরাহ করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) শাখার ৪টি কলেজের ২৫৭ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত আদাখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

প্রশ্ন দেওয়ার পর পরীক্ষা শুরুর প্রথম ১০মিনিট শিক্ষকরা পরীক্ষার্থীদের বই দেখে উত্তরপত্রের কাগজ কেটে নেওয়ার জন্য সময় দেন। পরবর্তীতের ওই টুকরো কাগজ ছাড়া সকল বই ও নোটপত্র বাইরে বের করে আনেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এরপর শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে থাকেন আর শিক্ষার্থীরা নকল দেখে খাতায় লিখতে থাকেন। যে প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার্থীরা পারছেন না, সেটা ব্লাকবোর্ডে লিখে দেন শিক্ষকরা।
3bb0544eb32538ab43437d3ca54b602c-5706887620fa7

পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. আল আমিন হোসেন বসে থাকেন লাইব্রেরিতে। পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব রেজাউল করিম পরীক্ষার পুরো তিনঘন্টা সময় বারান্দায় পাহারার দায়িত্বে থাকেন।

নকলের মহোৎসবের খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা আদাখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছুলে সাংবাদিকদের দেখে কেন্দ্র সচিব দৌড়ে কক্ষে কক্ষে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের সাবধান করে দেন। এসময় শিক্ষার্থীরা নকল লুকানোর চেষ্টা করেন।
এ ব্যাপারে আদাখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব রেজাউল করিম বলেন, ‘পরীক্ষার হলে যে কোনও কিছু হতে পারে। সেটা সাংবাদিকদের দেখার বিষয় নয়। পরীক্ষা হলে সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারেন না। পরীক্ষার্থীদের আমরা একটু সুযোগ দেই, তবে সেটা অর্থের বিনিময়ে নয়। আমি বারান্দায় তিন ঘন্টা পরীক্ষা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি অন্য কোনও কারণে নয়।’

ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার ছবি তুলতে গেলে শিক্ষকরা কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। এসময় কেন্দ্র সচিবসহ কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য মোটা অংকের টাকার প্রলোভন দেখিয়েছেন।

কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আল-আমিন হোসেন বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের। এখানে দুর্বল শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে, বোঝেনইতো।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম সাদিকুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষায় নকলের কোনও সুযোগ নেই। একটু দূরে হওয়ায় ওই কেন্দ্রে সব সময় আমি যেতে পারি না। তবে নকলের এই ধরনের অভিযোগ মানা যায় না। নকলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Leave a Reply

x

Check Also

শোক সংবাদ : কামরুল আহসান মেম্বর

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন এর চাচাত ...