ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - মঠবাড়িয়ার গর্বের তারুণ্য শহীদ নূর হোসেন

মঠবাড়িয়ার গর্বের তারুণ্য শহীদ নূর হোসেন

দেবদাস মজুমদার <>

মানুষ কৃতি হয় তাঁর মহতী কর্মে। সমাজে যখন অস্থিরতা চলে, চলে শোষণ আর বিরুদ্ধচারণ তখন কেউ এসে আলোর পথ দেখান। আমাদের বিদ্বজন তো বটেই যে কোন সাহসী তরুণ দেশ ও মানুষের অধিকারের দায়বোধে নিজের জীবন সার্বজনীন করে তোলেন। তার দ্রোহ , তাঁর লড়াই আর মননশীতা আমাদের বাতিঘর হয়ে ওঠে। সমাজের তারুণ্য উল্টো পথে হাঁটলে অথবা বেপথু বাতাসে গা ভাসালে নসমাজে সভ্যতা বিনস্ট হয়। যদিও আমাদের তারুণ্য এমন হবার নয়।

আমাদের শোষণ আগ্রাসন আর নির্দয়তার বিরুদ্ধে বুদ্ধিবাদী সাহসী তারুণ্যর লড়াই জীবনদানে সমৃদ্ধ ইতিহাস বিশ্ব স্বীকৃত। ৫২ জাগিয়েছে তারুণ্য, ৬৯ এর গণজাগরণ জাগিয়েছে তারুণ্য , ৭১ জাগিয়েছে তারুণ্য, গণতন্ত্রের জন্য লড়াইটাও চালিয়েছে তারুণ্য। তারুণ্যের রক্তজীবন মাখা আমাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস আমাদের নিয়ত গর্বের দিকে নিয়ে যায়।

৮০র দশকে গণতন্ত্র বিপন্ন হলে সাহসী তারুণ্য স্বৈরচার এর অপশাসন হটিয়েছে। আমরা আজন্ম তাই তারুণ্যের কাছে নতজানু। কেননা তারুণ্যের বুক আসলে বাংলাদেশের হৃদয়।

শহীদ নূর হোসেন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে স্মরণীয় প্রতিবাদি তরুণের নাম। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগঠিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। এই তরুণের বিস্ময় জাগানো প্রতিবাদের ভাষা আজও আমাদের সংকটে যেন দৃঢ়তা শেখায়।
তৎকালীন দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একত্র হয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা করেছিল।
এ অবরোধ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকায় একটি মিছিলে নূর হোসেন অংশ নেন এবং প্রতিবাদ হিসেবে বুকে পিঠে সাদা রঙে লেখেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ ।
শহীদ নূর হোসেন দেশে গণতন্ত্র পুনুদ্ধারে শহীদ নূর হোসেনের জীবনদান আজ এক ইতিহাস। প্রতিবছর ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস পালিত হয়।

আমারা গর্বিত এই সাহসী তরুণের জীবনদানে। কেননা শহীদ নূর হোসেন এর পৈত্রিক নিবাস উপকূলীয় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা ইউনিয়নের ঝাঁটিবুনীয়া গ্রামে। এই বিপ্লবী তরুণ আমাদের মঠবাড়িয়া জনপদের নূর। নূর হোসেন বাংলার তারুণ্যের বাতিঘর ।

আমাদের দুর্ভাগ্য আজ অবধি শহীদ নূর হোসেনের পিতৃ পুরুষের জনপদ মঠবাড়িয়ায় আগামী প্রজন্মের জন্য কোনও স্মৃতি ফলক,ম্যূরাল গড়ে তোলা হয়নি।

আশার কথা দেরী হলেও শহীদ নূর হোসেন এর স্মৃতি, তাঁর দৃঢ়তা আর স্বদেশ প্রেমের স্মৃতিস্মারক নির্মাণে স্থানীয় কতিপয় তরুণরা মিলে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মঠবাড়িয়ার তরুণ সমাজই নয় সমাজহিতৈষীরা চান মঠবাড়িয়া শহরে গড়ে উঠুক শহীদ নূর হোসেন চত্বর । সেই সাথে মঠবাড়িয়া পৌর শহরের দৃশ্যমান স্থানে একটি নূর হোসেন চত্বর গড়ে তুলে সেখানে নূর হোসেনের ম্যুরাল স্থাপন করা হোক।
ইতিমধ্যে মঠবাড়িয়ায় শহীদ নূর হোসেন চত্বর ও ম্যুরাল স্থাপনে জনমত গড়তে তরুণরা সমবেত হয়েছেন। শহীদ নূর হোসেন চত্বর নির্মাণের দাবিতে আগামী ১০ নভেম্বর ধেকে জনমত গঠনে নানা কর্মসূচি নিয়ে বাস্তবায়ন করছে। মঠবাড়িয়ার তারুণ্য বেড়ে উঠুক নূর হোসেনের আলোয়। এই আশাবাদ যেন আমরা ভুলে না যাই, যেন উপেক্ষা না করি।

শহীদ নূর হোসেন এর স্মৃতি বিজড়িত পিতৃপুরুষের জনপদ মঠবাড়িয়ায় নূর হোসেন চত্বর গড়ে তুলে ম্যুরাল স্থাপনের দাবিটা শুধু তরুণ প্রজন্মেরই নয় এ দাবি হোক সমৃদ্ধ মঠবাড়িয়ার জনমানুষের দাবি। এ দাবি পূরণের দায় এখন রাষ্ট্রেরও ।

মঠবাড়িয়া পৌর শহরের চৌরাস্তার মোড় অথবা থানা ভাবনের মোড়ের ত্রিমোহনা এ চত্বর করা যেতে পারে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন ও দল মত নির্বিশেষে মঠবাড়িয়ার মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, সংস্কৃতিজন সকল মানুষ ও প্রবাসিদের সার্বিক উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।

এ জনদাবি পূরণে সকলে সমবেত সংহতি জানালে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে পারবো।

আগমী ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে মঠবাড়িয়ার কৃতি সন্তান গণতন্ত্র বিপ্লবী নূর হোসেন প্রতি জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক <> সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...