দেবদাস মজুমদার >>
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের শেষ মাথায় আমাদের জাতীয় নেতা প্রয়াত মহিউদ্দিন আহম্মেদ এর বাসা খুঁজে পেতে আমার একটুও সেদিন বেগ পেতে হয়নি। গ্রাম থেকে একটা সমস্যা নিয়ে বহু বছর আগে এক আত্মীয়র সাথে ওই বাসাতে আমি জীবনে একবার গিয়েছিলাম। প্রয়াত মহিউদ্দিন আহম্মেদ তখন পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া আসনের এমপি। আমরা এখনও এই মহান নেতাকে পান্না মিয়া নামে চিনি। অসাধারণ রসাত্মক এক বক্তা ছিলেন তিনি। আমাদের শহীদ মিনারে সেই ছেলেবেলা থেকে তন্ময় আর মায়ামুগ্ধ হয়ে তাঁর বক্তব্য শুনতাম। আমরা আজও তাকে মহানুভব এক অভিভাবক হিসেবে স্মরণে রাখি। এখনও বলি আহা মহিউদ্দিন চাচা বেঁচে থাকলে আমাদের এত দুর্গতি হতোনা। মঠবাড়িয়া জনপদের এমন কোন মানুষ নেই যিনি এ নেতার অভাব বোধ করেন না।
সেই এক ভরদুপুরে ধানমণ্ডির বাসায় একটা মহা সংকট নিয়ে চাচার কাছে গিয়েছিলাম। ড্রয়িং রুমেই চাচাকে পেয়ে যাই । তখন এলাকার অসংখ্য মানুষ চাচার চারপাশে বসে মন্ত্র মুগ্ধের মতোন কথা শুনছেন। আমাকে দেখে ভেতরে ডাকেন। এলাকায় সাহিত্য চর্চা আর একটু আঞ্চলিক পত্রিকায় লেখালেখি করি উনি তা জানতেন। ও কারনে খুব সহজেই চাচা আমায় চিনতেন। গ্রাম থেকে গিয়েছি বলে তিনি সবার আগে আমার আগমনের হেতু জানতে চান । সবিস্তারে বলি সমস্যাটা শুনে কিছুটা চমকে ওঠেন বলেন, কি বলো আমারে আরও আগে জানালে ভাল হতো। আচ্ছা দেখছি বলে কাকে যেনো ফোন করলেন তারপর বললেন যাও তোমার সমস্যা মিটে গেছে। সত্যি ৫ মিনিটে পাহাড় সমান এক সংকট সেদিন মুছে দেন শ্রদ্ধেয় মহিউদ্দিন চাচা। নমস্কার দিয়ে চলে আসার সময় তিনি বলেন আরে বসো। চাচীকে ডেকে পাঠান । চাচী আসেন। চাচী মানে আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় রেবেকা মহিউদিন। ড্রয়িংরুমে সব এলাকার মানুষ বলে আমাদের চাচী দরোজ অবধি আসেন। ওই প্রথম চাচীকে আমি দেখি । আভিজাত্যপূর্ণ এক মায়ের মতোন। সালাম দেই। তিনি সহৃদয়ে আমায় বসতে বলেন। আমার ঘর গেরস্থালীর খবর নেন। আমি সেদিন চাচীর আতিথিয়তায় মায়ামুগ্ধ হই। নতজানু হই। চাচী পরে চা, টোস্ট আর ফল পাঠান। ওইটুকই তাকে দেখা। কিন্তু আমি কোনদিন ওই সময় টুকু ভুলিনি। ভোলার নয়। জীবনের অনেক স্মৃতি হারিয়ে যায় তবু কিছু স্মৃতি জীবনকে নাড়িয়ে দেয়।
সম্প্রতি আমাদের মঠবাড়িয়া কল্যান সমিতির সাবেক সভাপতি শ্রদ্ধেয় আনছার উদ্দিন ভাই ফোন করে বললেন, দেবদাস মহিউদ্দিন চাচী অসুস্থ। মহিউদ্দিন চাচার কলেজের বর্তমান অবস্থার একটা ভিডিও ডকুমেন্টারী বানিয়ে দেও। রেবেকা চাচী ওটা দেখতে চেয়েছেন। আমি কাজটা করে দেই। এরপর আর চাচীর সাথে আমার দেখা হয়নি।
প্রয়াত জাতীয় নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ এর সহধর্মীনি রেবেকা মহিউদ্দিন আজ সকাল ৭.০০ টায় এ্যাপলো হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেছেন। তাঁর প্রয়াণের খবরটা শুনে ব্যাথিত হয়েছি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি ।
গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রিয় চাচী।