ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - পিরোজপুর উপকূলে সংরক্ষণের অভাবে বিস্মৃত অর্ধশতাধিক বধ্যভূমি ! 🇧🇩️

পিরোজপুর উপকূলে সংরক্ষণের অভাবে বিস্মৃত অর্ধশতাধিক বধ্যভূমি ! 🇧🇩️

খালিদ আবু ➡️

অমর্যাদা, অবহেলা আর ভূমিলোভীদের কবলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ উৎসর্গকারী পিরোজপুরের হাজারো শহীদদের স্মৃতিবহনকারি বধ্যভূমিগুলো। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের সাক্ষ্য বহনকারী ঐতিহাসিক ¯স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি অনেক বধ্যভূমি সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিতও করা হয়নি। নানা কারণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু এলাকা বেদখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় বধ্যভূমি চিহ্নিত সহ সংরক্ষেনর উদ্যোগ নেয়া হলেও মাঝপথেই তা থেমে গেছে।
তথ্য অনুযায়ী,২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলেও পাকহানাদার বাহিনী ক্যাপটেন এজাজের নেতৃত্বে ২ মে পিরোজপুরের হুলারহাট থেকে প্রবেশ করে। পথে কৃষ্ণনগর গ্রামের মন্ডল পাড়ায় ২৮ জন নিরীহ মানুষকে গুলিকরে ও বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে। ৫ মে শহরের বলেশ্বর নদী সংলগ্ন খেয়াঘাটের সিড়িতে হত্যা করে তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসক আঃ রাজ্জাক, প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট সাঈফ মিজানুর রহমান, মহাকুমা পুলিশ অফিসার ফয়জুর রহমান আহম্মেদকে (সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের পিতা)। দখলদার বাহিনীর ক্যাপ্টেন এজাজ নিজ হাতে এদের গুলীকরে হত্যা করে। এরপর এই বধ্যভূমির অদূরে চানমারীতে আরও একটি বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা গণপতি হালদার, ফজলুল হক খোকন, বিধান, মন্টু, পুর্নেন্দু, বাচ্চু, সেলিম আখন্দ, মোস্তফা এবং নারী মুক্তিযোদ্ধা ভাগিরথীকে। হুলারহাটের কঁচা নদীর তীরের বধ্যভূমি, কদমতলার পোরগোলা বধ্যভূমি, টোনা ইউনিয়নের তেজদাসকাঠীর খেজুরতলার বধ্যভূমি, জুজখোলার বধ্যভূমি, পাড়েরহাটের বধ্যভূমিতে সদর থানার পাঁচ সহস্রাধিক নারী-পুরুষ নির্মম হত্যার শিকার হন। মঠবাড়িয়া থানার সূর্যমনির বেড়ি বাঁধের বধ্যভূমি, ধানী সাফা ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি বধ্যভূমি, মিরুখালীর বধ্যভূমি, সাপলেজার বাড়ৈ বাড়ি বধ্যভূমি, বড় মাছুয়ার স্টীমার ঘাটের বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় সাড়ে তিন সহাস্রাধিক বাঙ্গালীকে। স্বরূপকাঠীর শুধুমাত্র অটঘর কুড়িয়ানা গ্রামের বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয় সহস্রাধিক সংখ্যালঘুকে। এছাড়া অলংকারকাঠীর বধ্যভূমিতে শতাধিক, স্বরূপকাঠীর পাইলট বিদ্যালয়ের পিছনের জলাশয়ের বধ্যভূমি, ছারছিনা মাদ্রাসার বধ্যভূমি, ভীমকাঠীর বধ্যভূমি, ছৈলাবুনিয়ার বধ্যভূমি, বাশঁতলার বধ্যভূমি, দৈহারীর চিলতলা বধ্য ভূমি, বরচাকাঠীর দুটি বধ্যভূমি, গুয়ারেখার বধ্যভূমিতে হাজার হাজার নরনারীর প্রাণ প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হয়।
নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠী বধ্যভূমি, গাবতলার বধ্যভূমি, চৌঠাইমহল বধ্যভূমি, কালিকাঠী বধ্যভূমি, চালিতা বাড়ির বধ্যভূমি, ষোষকাঠী বধ্যভূমি, দীর্ঘা বধ্যভূমি, গোবর্ধন বধ্যভূমি, বলিবাবলা বধ্যভূমি, শাখারীকাঠীর বধ্যভূমি এবং রঘুনাথপুরের বধ্যভূমি রঞ্জিত হয় সহস্রাধিক স্বাধীনতা প্রিয় নাজিরপুর বাসীর রক্তে।
কাউখালী লঞ্চঘাটের বধ্যভূমিতে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় কালু মহাজন সহ আওয়ামীলীগের ৫ জনকে। এছাড়া এখানে সহস্রাধিক নর-নারীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।
ভান্ডারিয়া থানার পশারীবুনিয়া বধ্যভূমি, কাপালিরহাটের বধ্যভূমি, খেয়াঘাটের বধ্যভূমিতে জবাই করে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে আবার কখনও কখনও গুলী করে হত্যা করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অকাতরে প্রাণ বিসর্জনের এ জেলার অর্ধশতাধিক বধ্যভূমির মধ্যে শহরের খেয়াঘাটের বধ্যভূমিতে পিরোজপুর পৌরসভা এবং স্বরূপকাঠীর বরছাকাঠী বধ্যভূমিতে গণপুর্ত মন্ত্রনালয় দুটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে। মঠবাড়িয়ার সূর্যমনি বধ্যভূমিতে শহীদ পরিবারের প্রিয়জনরা একটি স্মৃতি সৌধ এবং বরছাকাঠীর ‘সাত শহীদের এক কবর’টি আত্মীয়-স্বজনরা পাকা করলেও অন্যান্য বধ্যভূমি সংরক্ষণের অভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...