স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনী তাদের নিশ্চিত পরাজয় জেনে ১৪ ডিসেম্বর এ দেশীয় দোসরদের সহায়তায় হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। তাদের মধ্যে রয়েছেন পিরোজপুরের কৃতী সন্তন ড. আবুল খায়ের।
পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার কাঠালিয়া গ্রামে ড. আবুল খায়েরের জন্ম ১ এপ্রিল ১৯২৯। বাবা আবদুর রাশেদ, মা সৈয়দা ফখরুননেছা। পিরোজপুর সরকারি স্কুল থেকে ১৯৪৫-এ প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৪৭-এ প্রথম বিভাগে আইএ পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান থেকে ১৯৫০-এ ইতিহাসে অনার্স (দ্বিতীয় শ্রেণিতে তৃতীয়) এবং ১৯৫১-এ এমএ পাস করেন। ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ এবং ১৯৬২ সালে আমেরিকান ইতিহাসে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন। আবুল খায়েরের শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় বরিশালের চাখার ফজলুল হক কলেজে। ১৯৫৩-৫৪ পর্যন্ত এই কলেজে শিক্ষকতা করে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক নিযুক্ত হন। পরে রিডার (বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক) পদে উন্নীত হন। ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর আল-বদরবাহিনী তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কোয়ার্টার থেকে ধরে নিয়ে রায়ের বাজার বধ্য ভূমিতে অত্যাচার করে হত্যা করে। ৪ জানুয়ারি তার লাশ উদ্ধার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কবর দেয়া হয়। গত ৩রা নভেম্বর, ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খান কে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আবুল খায়ের সহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ । মো. আবুল খায়েরের স্ত্রী সাঈদা বেগম। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রিয়াজুল ইসলাম মারা গেছেন। দ্বিতীয় ছেলে কামরুল ইসলাম ও তৃতীয় ছেলে রাশেদুল ইসলাম—দুজনই চাকরিজীবী। মেয়ে হোমায়রা ইয়াসমীন গৃহিণী। স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী বুদ্ধিজীবীদের অন্যতম ড. খায়ের পিরোজপুরের বীর সন্তান হলেও এ জেলার মানুষ তাকে শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে জানে না। এর কারণ পিরোজপুরের সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ তার মহান আত্মত্যাগের বিষয় ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে আজ পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়নি। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের অবদানের কথা ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে স্থানীয়ভাবে প্রতি বছর এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ করার দাবি জানিয়েছে ড. খায়েরের পরিবার।