ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - সুন্দরবনের মুকুটহীন সম্রাট

সুন্দরবনের মুকুটহীন সম্রাট

দেবদাস মজুমদার >>
তিনি ছিলেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন অঞ্চলের সাব-সেক্টর কমান্ডার । বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষীও ছিলেন তিনি। মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ এক দেশপ্রেমিকের নাম। আমরা ছেলেবেলা থেকে তাকে সুন্দরবনের বাঘের মত ভেবে আসছি। সুঠাম দীর্ঘদেহী মানুষটির পুরো অবয়ব জুড়ে একজন দেশপ্রেমিক বিপ্লবীর আদলে ঠাসা ছিল। কি ভিষণ ক্ষীপ্র আর গতিময়তা তাঁর শরীর জুড়ে। মাথাভর্তি বাবড়ি দোলানো ঝাকড়া ঘন কালো চুল। একেবারেই বিদ্রোহী কবি নজরুলের মতোন।
ছেলে বেলায় আমাদের শহরে সমাবেশে বক্তব্য দিতে আসতেন। একবার আমরা পক্ষকাল ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা করেছিলাম। মেজর জিয়াউদ্দিন অতিথি হয়ে সে মেলায় এসেছিলেন। তাঁকে দেখার আর তাঁর দরাজ কণ্ঠের বক্তব্য শুনতে সেদিন আমাদের শহরের শহীদ মোস্তফা খেলার মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়েছিল।
একজন মুক্তিযোদ্ধা একজন বিপ্লবীর ছবি যদি আমি কোনদিন এঁকে থাকি সেটা মেজর জিয়াউদ্দিন। আমরা উপকূলে যারা বেঁচে আছি এখনও তাকে অভিভাবক মনে করি। তাই মেজর(অব:)জিয়াউদ্দিন সর্বজন গ্রহণযোগ্য এক বিপ্লবী মানুষের মুখ।
এ নাম ছাপিয়ে কত নামে আমরা তাঁকে চিনি। জিয়া ভাই, সুন্দবনের মুকুটহীন সম্রাট, কিংবা উপকূলের বাঘ।
পিরোজপুর জেলা শহরের সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দীন আহম্মেদের ছেলে মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন তিনি। পরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জুলাই মাসে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দায়িত্ব পান ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন অঞ্চলের সাব সেক্টর কমান্ডার হিসেবে।
মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সের অধীনে প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বীরত্বের সঙ্গে সুন্দরবন অঞ্চলকে শত্রুমুক্ত রাখার জন্য তাকে সুন্দরবনের মুকুটহীন সম্রাট বলা হয়ে থাকে। সুন্দরবন রক্ষার জন্য সুন্দরবন বাঁচাও নামে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনও গড়ে তুলেছিলেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন অনেকদিন থেকেই অসুস্থ ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ১ জুলাই তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে তাকে কেবিনে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্ট্রোক করেন তিনি। পরে ১১ জুলাই সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয় তাকে। এর আগে প্রয়াত জিয়ার স্ত্রী কানিজ মাহমুদা বলেছিলেন, সাব সেক্টর কমান্ডার জিয়ার লিভার সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। তাই তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে।
আমাদের দুর্ভাগ্য আজ শুক্রবার ভোরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুন্দরবনের মুকুটহীন সম্রাট মেজর জিয়াউদ্দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কিন্তু তাঁর বর্ণাাঢ্য জীবনের কর্মময়তার ইতিহাস রেখে গেলেন। দেশের জন্য লড়াই করেছেন। আমরা তাঁর লড়াইটা আগলে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি।
অকুতভয় সংগ্রামী বীরের মহাপ্রয়াণে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সমবেদনা জানাই শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি।
>> লেখাক : সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...