দেবদাস মজুমদার >>
অন্যের জমিতে কৃষি কাজ দিয়ে দরিদ্র আবু বকর হয়ে ওঠেন দৃষ্টান্ত। ১৯৯৬ সালে সংসারের অভাব ঘোচাতে কৃষিতে আত্ম নিয়োগ করেন তরুণ আবু বকর। তার এই কৃষির সাফল্য দেখে একই এলাকার বহু মানুষ কৃষি কাজে আগ্রহী হয়েছেন। এলাকার অনেক যুবকের কর্মসংস্থানও তৈরী হয়েছে তার হাত ধরে। একটি মাদ্রাসায় চাকুরির পাশাপাশি কৃষি সঙ্গে লড়াই করে হয়ে উঠেছেন কৃষিপ্রাণ। কঠোর পরিশ্রম আর কৃষিতে অদম্য মনোনিবেশের কারনে দরিদ্র এ কৃষক এবার জিতে নিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের মাটিভাংঙ্গা গ্রামের কৃষক আবু বকর বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার লাভ করেছেন। বুধবার বিকালে জাতীয় এ স্বীকৃতি নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি ফিরলে গ্রামবাসি ও কৃষকরা তার বাড়িতে ভীর করে তাকে অভিনন্দন জানান।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে,সরকার ১৯৭৩সালে কৃষকদের মাঝে অনুপ্রেরণা যোগাতে জাতীয় পুরস্কার প্রবর্তণের উদ্যোগ নেয়। তারই ধারাবাহিকতায় কৃষি মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রদান করেন। গত ১৬ই জুলাই ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রঞ্জ এ তিন বিভিন্ন ক্যাটাগড়িতে দেশের মোট ৬৪জনের মাঝে পুরস্কার, সনদ ও নগদ টাকা প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (এমপি)। সভাপতিত্ব করেন কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।
’এতে বরিশাল বিভাগের মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে কৃষি খামার স্থাপনে বিশেষ অবদানের জন্য ব্রঞ্জ প্রদক, সনদ ও নদগ ২৫হাজার টাকা লাভ করেন দরিদ্র কৃষক মো. আবু বকর সিদ্দিক।
স্থানীয়রা জানান, অভাব অনটনের সংসার আবু বকরের। শিক্ষা জীবনের মাঝপথে দরিদ্র পিতার সংসারের হাল ধরতে এসএসসি পাস আবু বকর স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় চাকুরী নেন। ১ হাজার ৭৩৫টাকা বেতনে চাকুরীর পাশাপাশি সে কৃষিতে আত্মনিয়োগ করে সফল হন। ৬ সদস্যের পরিবারে মোটামুটি ভাবেও সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। নিজ উদ্যোগেই ১৯৯৬সালে মাত্র ৩৩শতাংশ অন্যের জমিতে সবজী চাষ দিয়ে যাত্রা শুরু তার। কৃষি সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করেছেন আবু বকর। তিনি বিশ্বাস করে কৃষি আমাদের অর্থনীতির মূল নিয়ামক।
মাদ্রাসায় চাকুরির পাশাপাশি ধীরে ধীরে কৃষিতে উদ্যেমী এ তরুণ সাফল্য অর্জণ শুর করেন। কঠোর পরিশ্রমে লোকায়ত জ্ঞান আর বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদে সাফল্য অর্জণ করেন।
কৃষিতে বিশেষ অবদান রাখায় ২০০৩ সালে তিনি ভা-ারিয়া উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কৃষি পুরস্কার, ২০০৪ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুস্কার ছাড়াও একটি বাড়ি একটি খামার এবং বে-সরকারি সংস্থ্যা আইএফডিসি ও গ্রামীণফোন থেকেও কৃষিতে শ্রেষ্ঠ পুস্কার পান তিনি। তার এই কৃষির সাফল্য দেখে একই এলাকার বহু বেকার যুবক কৃষি কাজে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ফলে অনেক যুবকের কর্মসংস্থান তৈরী হয়েছে।
আবু বকর জানান, তিনি ভূমিহীন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এসএসসি পাস করার পরে অর্থাভাবে আর পড়াশুনা চালাতে পারেননি। পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেলে জীবিকার তাগিদে চট্রগ্রামে গিয়ে একটি গার্মেটস কারখানায় প্যাকিংম্যানের চাকুরী নেন। সেখানে সুবিধা করতে না পেরে সে গ্রামে ফিরে আসেন। হতাশাগ্রস্থ আবু বকর আরও লেখা পড়া করার স্বপ্ন দেখেন। তখন তৎকালীন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র কাছে গিয়ে লেখা পড়া করার কথা জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মন্ত্রী তাকে ভা-ারিয়া সরকারি কলেজে ভর্তির সকল ব্যবস্থা করে দেন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, বিএ পাস করার পরে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় চাকুরীর সুযোগ হয় তার। চাকুরীর পাশা পাশি সে কৃষি কাজে মনোনিবেশ করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে শিক্ষকতার পাশা পাশি নিরলস পরিশ্রম করে কৃষিতে সাফল্য অর্জণ করেন।
সফল কৃষক আবু বকর বলেন, আমার পূর্ব পুরুষ কৃষক। কৃষিই আমাদের প্রাণ ও বেঁচে থাকার উৎসমূল। আমাদের অর্থনীতির প্রধান নিয়ামক। কৃষি না বাঁচলে দেশ ও মানুষের সমৃদ্ধি নিয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। কৃষিই আমার জীবন বদলে দিয়েছে তাই আমি কৃষিকে আমার বেঁচে থাকার শক্তি ওসাহস মনে করি।