মো. রাসেল সবুজ >>
ছোটো বেলায় নানা বাড়িতে বেড়াতে এলে সকল খালাতো-মামাতো ভাইদের কাছে আতঙ্কের নাম ছিল “গহুর নাপিত”। কারন এই গহুর নাপিত (সম্পর্কে আমাদের প্রতিবেশী মামা) আমাদের সবাইকে একটি টুলের উপর বসিয়ে মাথার চুল “কদম ছাট” করে দিত দিতো। চুলের জন্য কত মায় ছিল আমাদের কিন্তু গহুর নাপিত ছিল নির্দয়। চাইলেও সে তার ইচ্ছেমত কচুকাটা করে দিত চুল। যারা একটু শহরে থাকতাম তাদের কাছে চুল বড় রাখা এবং সেলুনে গিয়ে চুল কাটানোটাই ছিলো স্টাইল।কিন্তু গ্রামে ছোটোদের বড় চুলকে মনে করা হতো এক ধরনের অপরাধ। তাই সবার মাথা গণহারে কদম ছাট দেওয়া হতো।এ কারনে গহুর নাপিত মানেই আমাদের কাছে একজন ভিলেইনের প্রতিচ্ছবি..!! কচি অসভ্যতার ছেলেবেলার এই ভিলেনকে অনেক পরে জেনেছি নরসুন্দর নামে ডাকা হয়। মানুষের চেহারা যেহেতু চুলে সেই সৌন্দর্যের চুলে শোভাবর্ধনের কাজটাই করেন নাপিত। তাই তিনি নরসুন্দর ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই গহুর নরসুন্দর মামা আজ বেঁচে নেই। কালের বিবর্তনে তার ছেলে আজ সেই পিতৃ পেশা বেছে নিয়েছেন।তবে যুগ পরিবর্তন হয়েছে।এখন মায়েরা আর তাদের ছেলেদের মাথার চুলের উপর ততটা “অমানবিক অাচারণ” করেন না।বরং চুল কাটানোর জন্য সেলুনেই পাঠিয়ে থাকেন।এখনকার শিশুদের মাথায় তাই সেকালের কদমছাটের পরিবর্তে শোভাপায় “রাহুল কাট”.!! তাই এই “ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের” আগের মত আর আয় রোজগার নেই।মানুষ এখন সেলুনে চুল কাটাতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।তবে নিন্ম আয়ের কিছু মানুষ এখনো তার কাস্টমার হিসেবে ভ্রাম্যমান নরসুন্দরের দ্বারস্থ হয় । তার কাছে মাত্র ১০/১৫ টাকায় চুল ও দাড়িকাটানো যায়। যেখানে সেলুনে লাগে ৫০ থেকে ৭০ টাকা।
ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর জালাল ভাইয়ের ছোটোবেলা থেকেই একটি পা অন্যটির চেয়ে একটু ছোটো।তাই তাকে সবসময় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলতে হয়।মাথায় করে একটি চেয়ার এবং সাথে অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে মাইলের পর মাইল তাকে হাটতে গ্রাম থেকে গ্রামে হয় । আবার প্রতিদিন এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটে চলতে হয় তাকে। দুঃখের কথা হলো তার ১২/১৩ বছরের ছেলেটি ভিষন অসুস্থ।প্রতিমাসে দুইতিন ব্যাগ করে রক্ত দিতে হয় শিশুটিকে। সারাদিন খেটে যে কয়টাকা উপার্জন করেন তার একটা বড় অংশই খরচ হয়ে যাচ্ছে ছেলের চিকিৎসার পিছনে..!!
গল্পচ্ছলে জানতে চাইলাম- এভাবে হেটে হেটে চুল না কেটে বাজারে একটা স্থায়ী সেলুন দিতে পারেন না? উত্তরে বললো- সেলুনতো দিতে পারি ভাইয়ো কিন্তু তাতে অনেক সমস্যা আছে।আরেকজন লোক রাখতে হবে না হলে ঘর ভাড়া কারেন্ট বিল এগুলো উঠানো যাবেনা।
বুঝলাম – তিনি তার পুজির অক্ষমতাকে আড়াল করতে চাইছে।কারন বাজারে একটা সেলুন দিতে ৩০,০০০/ ৩৫,০০০ টাকা দরকার যেটা তার পক্ষে সংস্থান করা অসম্ভব। যেহেতু আমার পক্ষেও তাকে আর্থিক সাহায্য করা সম্ভব নয় তাই আমিও তার কথায় সায় দিয়ে নিজের অক্ষমতাকে আড়াল করার চেষ্টা করলাম।
আমরা মানুষ কত ভাবে টাকা অপচয় করছি। কেউ কি পারিনা তার মত একজন মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়াতে……!!!