কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি >
প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এক দিন মজুরের ৫০ শতাংশ জমি দখলে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া থানার ওসি জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঝালকাঠি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন কাঁঠালিয়া উপজেলার উত্তর চড়াইল গ্রামের দিনমজুর মো. আলম মীর। শুধু জমি দখলই নয়, বিরোধীয় ওই সম্পত্তিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাকা ভবন নির্মান করা হচ্ছে। ওসি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ভবন নির্মান ও জমি দখলে সহযোগিতা করছেন। এমনকি এতে বাধা দিলে ওই দিনমজুরের নামে কাঁঠালিয়াসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ওসি মামলা দায়েরর হুমকি দিচ্ছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ক্ষতিগ্রস্ত মো. আলম মীর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, কাঁঠালিয়া উপজেলার ২৬ নম্বর উত্তর চড়াইল মৌজার ২০১ নম্বর এসএ খতিয়ানের ১৮ নম্বর দাগের ১একর ৯ শতাংশ জমির মধ্যে ৫০ শতাংশ জমি নিয়ে প্রতিবেশী আব্দুল হাকিম মাস্টারের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে। ২০১৩ সালে বিরোধীয় জমিতে গাছ কাটার অভিযোগে আব্দুল হাকিম মাস্টারের নামে তিনি ঝালকাঠির আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর পরেও প্রতিপক্ষরা জমি দখলের চেষ্টা অব্যহত রাখায় ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে গত বছরের (২০১৫) ২৩ নভেম্বর আরেকটি মামলা করেন। আইনের কোন তোয়াক্কা না করেই বিবাদীরা আবারো জমি দখলের পায়তারা করলে চলতি বছরের ২৭ জুন আদালতে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার আবেদন করেন তিনি। আদালত জমির ওপর স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। বিষয়টি টের পেয়ে রাতের আঁধারে তারা জমি দখল ও পাকা ভবন নির্মানের চেষ্টা চালায়। এ অবস্থায় গত ২৫ জুলাই আদালত অবমাননার মামলা করেন আব্দুল হাকিম মাস্টারের বিরুদ্ধে। এতেও দখল প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। পরে উপায়ান্তু না পেয়ে তিনি ঝালকাঠির পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহার কাছে গিয়ে সহযোগিতা কামনা করেন। পুলিশ সুপার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান রসুলকে বিষয়টি মিমাংসার দায়িত্ব দেন। আব্দুল মান্নান রসুল দুই পক্ষে চারজন আইনজীবীদের নিয়ে সালিস মিমাংসা করার কথা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রতিপক্ষরা গত ২ অক্টোবর বিকেলে জমি দখল ও পাকা ভবন নির্মানের কাজ শুরু করেন। মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ নিয়ে জমি দখল ও ভবন নির্মানের কাজে কাঁঠালিয়া থানার ওসি মো. জাহিদ হোসেন নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে সহযোগিতা করছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
এ ঘটনায় রাজমিস্ত্রি মো. আলম মীর সোমবার ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে উপস্থিত হয়ে পূর্বে দায়েরকৃত মামলার বিবরণ দিয়ে কাঁঠালিয়া থানার ওসির নামে জমি দখল ও ভবন নির্মানে সহযোগিতার অভিযোগ এনে লিখিতভাবে জানান। আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ রমণীরঞ্জন চাকমা আগামী ১৩ অক্টোবর শুনানির জন্য দিন ধায্য করেন।
মো. আলম মীর বলেন, আমাদের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি একাধিকবার দখলের চেষ্টা করেন প্রতিবেশী আব্দুল হাকিম মাস্টার ও তার সহযোগিরা। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও তারা আইনের প্রতি কোন শ্রদ্ধা দেখাননি। উল্টো আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কাঁঠালিয়া থানার ওসিকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের জমি দখল করে। এখন তারা দ্রুত গতিতে ভবন নির্মানের কাজ করে যাচ্ছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কাঁঠালিয়া থানার ওসি মো. জাহিদ হোসেন বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে যাতে সংঘর্ষ না বাধে এজন্য আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে, তারাই ভবন নির্মানের কাজ করছে। এখানে আদালতের নির্দেশ অমান্যের কিছু হয়নি।
আব্দুল হাকিম মাস্টার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে ৫০ শতাংশ জমির বৈধ কাগজপত্র আছে। এতদিন এই জমি বেদখলে ছিল। আমাদের জমিতে আমরা বাড়ি নির্মান করছি।