ব্রেকিং নিউজ
Home - খেলাধুলা - ক্রিকেট - বাংলাদেশের টাইগাররা এখন বিশ্বকাপের আতঙ্ক!

বাংলাদেশের টাইগাররা এখন বিশ্বকাপের আতঙ্ক!

বাছাইপর্বের পথটা বেশ ভালোভাবেই পাড়ি দিয়ে মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। সুপার টেনে বাংলাদেশ এখন অনেকেরই আতঙ্ক! টাইগারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স রীতিমতো দুশ্চিন্তার রেখা একে দিয়েছে প্রতিপক্ষের ললাটে। পাকিস্তানের কোচ ওয়াকার ইউনুস পরিষ্কার করে বলেছেনও মাশরাফি ব্রিগেডকে নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার কথা। সুপার টেনে বাংলাদেশের অপর তিন গ্রুপসঙ্গী স্বাগতিক ভারত, শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডও নিজেদের পরিকল্পনার বড় অংশজুড়ে রেখেছে বাংলাদেশকে।
রোববার বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে নিজেদের গ্রুপের শেষ ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ওমানকে ৫৪ রানে হারিয়ে মাশরাফিরা সুপার টেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে গেছে, বুধবার ইডেন গার্ডেনসের লাইনআপ। বাংলাদেশ ম্যাচ দিয়েই শুরু হচ্ছে আফ্রিদিদের কাপ-অভিযান। সেই লক্ষ্যে ধর্মশালা থেকে কলকাতায় এসেছে মাশরাফি অ্যান্ড কোং। বাংলাদেশ-ওমানের ম্যাচ দিয়ে রোববার শেষ হয়েছে টি২০ বিশ্বকাপের প্রথমপর্ব। মূলত এই রাউন্ড ছিল মূলপর্বে ওঠার বাছাইপর্ব। দুই গ্রুপ থেকে অপরাজিত থেকে মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ। এই দুই দল ও শীর্ষ আট দলসহ মোট ১০টি দল নিয়ে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে এ আসরের মূলপর্বের লড়াই।
প্রথম পর্বের মতোই সুপার টেনে নিজেদের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় টাইগাররা। অনুশীলনের কমতি থাকলেও দলটা পুরো আত্মবিশ্বাসী। প্রথম ম্যাচেই তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান, সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে ওই দলটিকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দু’দলের সর্বশেষ দুটি লড়াইয়েই জয়ের স্মৃতি বাংলাদেশের দখলে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে অতীতের সুখস্মৃতি ১৬ মার্চ খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না বলেই বিশ্বাস টাইগার দলপতি মাশরাফির, ‘আমার মনে হয় না কাজে লাগবে। অন্তত আমার তাই মনে হয়। হয়তো আগের ম্যাচের রান, , উইকেট আপনাকে আত্মবিশ্বাস দিতে পারে। তারপরও সবই নতুন দিন, নতুন একটা ম্যাচ। নতুনভাবে শুরু করতে হয়। আমাদের বাড়ির কাছে হলেও আমরা সেখানে আগে খেলিনি। উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। অনেক কাজ আছে।’
বৈরী আবহাওয়া, ভিন্ন কন্ডিশন, অপর্যাপ্ত ক্রিকেটের পরও ধর্মশালা পর্ব ভালোভাবেই পার করেছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে বড় স্বস্তি পাচ্ছেন মাশরাফি। ধর্মশালার পর্ব সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘অনেক বড় স্বস্তি। প্রতিটি ম্যাচেই চাপ ছিল। তাছাড়া আবহাওয়া তো পুরোই বিপক্ষে ছিল। ধর্মশালার পর্বটা ভালো-খারাপ দুই ধরনের অনুভূতিই এনে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তাসকিন, সানির বিষয়টা খারাপ লেগেছে। তবে আশা করি, দু’জনই সমস্যাহীনভাবে ফিরে আসবে দলে।’
এদিকে, টাইগারদের সুপার টেনে পেঁৗছানো অনেকের জন্য আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ওমান-বাংলাদেশ ম্যাচ চলাকালে রবিচন্দ্রন অশ্বিন যে টুইট বার্তা দেন এবং সোমবার আনন্দবাজার যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশকে অনেকেরই ঈর্ষার কারণ বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘ডন’ বাংলাদেশ সুপার টেনে যাওয়ার খবরটিই এড়িয়ে গেছে।
আনন্দবাজার অনেকটা পাকদের উসকে দিয়ে লিখেছে, ‘হাতে গরম এশিয়া কাপের একটা হাই ভোল্টেজ ম্যাচ হারের বদলাই নয়, এক জোড়া ওই রকম হারের শোধ নেয়ার সুযোগ পাকিস্তানের সামনে এ সপ্তাহে ইডেনে, বিশ্বকাপ টি২০তে।’ রিপোর্টের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে, ‘শনিবার ভারত-পাক লড়াই তো থাকছেই। তার তিন দিন আগে বুধবার ক্রিকেটের নন্দনকাননে চূড়ান্ত হয়ে থাকল পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ লড়াইও। যে দুই দেশের কাছেই হারায় গত মাসে ঢাকায় টি২০ এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়তে হয়েছিল শহীদ আফ্রিদিদের।’
আনন্দবাজারের এ মন্তব্যে নিজেদের চেয়ে বাংলাদেশকেই যেন দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। আবার ওমান-বাংলাদেশ ম্যাচ চলাকালে রবিচন্দ্রন অশ্বিন টুইটে মন্তব্য করেন- বাংলাদেশকে জয়ী হলে বাংলাদেশের মানুষ খুশি হবে, আর ওমান জয়ী হলে বিশ্ব খুশি হবে। অশ্বিনের এই টুইটের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের সমর্থকরা অশ্বিনকে টুইটারে দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে। অশ্বিন এক বাংলাদেশি সমর্থকের টুইটের রিপ্লাইও দেন। ওই সমর্থক অশ্বিনকে বলেন, ‘আমার মনে হয় তুমি ওমানের জয়ের জন্য প্রার্থনা করছ, যাতে বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে না হয়।’
ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেই নিজেদের প্রমাণ করে দিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়াররা শয়তানি না করলে আরো কিছু ঘটত। সর্বশেষ এশিয়া কাপ টি২০ আসরে বাংলাদেশ নিজেদের নতুন শক্তি হিসেবে প্রমাণ করেছে আরেকবার। এশিয়া কাপে কয়েকটি ক্যাচ মিস করে কিছুটা সমালোচনার মুখেই পড়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। টি২০ বিশ্বকাপের মূলপর্বে যাওয়ার আগে প্রথম রাউন্ডে এই ক্যাচ প্রাকটিসটা হয়তো বেশ ভালোই কাজে লাগবে মাশরাফিদের।
এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেই ভারতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। টি২০ বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় নামার আগে একটা প্রস্তুতি ম্যাচও খেলা হয়নি মাশরাফিদের। ধর্মশালায় লাগাতার বৃষ্টির যন্ত্রণায় ভালোমতো খেলা হয়নি প্রথম রাউন্ডের ম্যাচগুলোও। শিরোপা জয়ের আসল লড়াই শুরুর আগে মাশরাফিদের প্রস্তুতিটা কী পূর্ণাঙ্গ হলো? ব্যাটিং-বোলিং নিয়ে সংশয় থাকলেও রোববার ওমানের বিপক্ষে ম্যাচে ক্যাচ প্রাকটিসটা বেশ ভালোমতোই সেরে নিয়েছেন সাবি্বর-মাহমুদউল্লাহরা!
প্রথম রাউন্ডে হল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটাই বাংলাদেশ খেলতে পেরেছে নির্বিঘ্নে। পরের দুটি ম্যাচেই ছিল বৃষ্টির বাধা। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি তো পরিত্যক্তই হয়ে গিয়েছিল। ওমানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে পুরো ২০ ওভার ব্যাটিং করতে পারলেও বোলিং করা গেছে মাত্র ১২ ওভার। তবে এই ১২ ওভারের মধ্যে ক্যাচ প্রাকটিসটা ভালোমতোই সেরে নিয়েছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।
ওমানের ইনিংসের ৭ ওভার পরই ধর্মশালায় হানা দিয়েছিল বৃষ্টি। সেই সময় ওমানের সংগ্রহ ছিল দুই উইকেটে ৪১ রান। বৃষ্টির পর ওমান যখন নতুন লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামে, তখন শুরু হয় উইকেট বৃষ্টি। ৪১/২ থেকে কয়েক ওভারের মধ্যেই ওমানের স্কোর দাঁড়ায় ৬৫/৯। এ সময় ওমানের ব্যাটসম্যানরা যেন নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ক্যাচ প্রাকটিস করানোর ভূমিকা। একের পর এক উইকেটে এসে আকাশে বল তুলে দিয়েছিলেন ওমানের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও ক্যাচ প্রাকটিসের এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি। তালুবন্দি করেছেন সব ক্যাচই।
ওমানের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে দুটি ক্যাচ নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও মোহাম্মদ মিঠুন। মাশরাফি ও সাবি্বর একটি করে। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের ডিসমিসালও ছিল দুটি। একটি ক্যাচ, একটি স্টাম্পিং। সৌম্য সরকার একটি রানআউট করেছেন সরাসরি থ্রো থেকে স্টাম্প ভেঙে দিয়ে। ওমানের উইকেট বৃষ্টির রাতে টি২০’র ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছেন সাকিব। ১৫ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন চারটি উইকেট।
মূলপর্বে বাংলাদেশ রয়েছে গ্রুপ-২ এ। পাকিস্তান ছাড়াও গ্রুপে তাদের অন্য প্রতিপক্ষ ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। ১৬ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে বাংলাদেশের মূলপর্বের যাত্রা। এছাড়া ২১ মার্চ ব্যাঙ্গালুরুরের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে মাশরাফিরা। ২৩ মার্চ একই মাঠে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ভারত। আর ২৬ মার্চ মূলপর্বের শেষ ম্যাচে ইডেন গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সুপার টেনে বাংলাদেশের ফিকশ্চার
১৬ মার্চ
বাংলাদেশ-পাকিস্তান
সময়: বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট
ভেন্যু: ইডেন গার্ডেন, কলকাতা

২১ মার্চ
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া
সময়: রাত ৮টা
ভেন্যু: এম চেন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, ব্যাঙ্গালুরু

২৩ মার্চ
বাংলাদেশ-ভারত
সময়: রাত ৮টা
ভেন্যু: এম চেন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, ব্যাঙ্গালুরু

২৬ মার্চ
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড
সময়: বিকাল ৩টা ৩০ মিনিট
ভেন্যু: ইডেন গার্ডেন, কলকাতা

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ার গুলিসাখালী জি, কে, ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩দিন ব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা সমাপ্ত

স্টাফ রিপোর্টার : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার গুলিসাখালী জি, কে, ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩দিন ব্যাপী ৭৩ তম ...