খায়রুল ইসলাম বাকু, দক্ষিণ সুদান থেকে >
বকুলের গল্প গল্পটা লালফুল, হলুদফুল, সাদাফুল কিংবা সুবাসিত সদা ব্যাকুলতার নয়, প্রেমেরও নয়, গল্পটা প্রতিবাদের…. ১৩ বছর পূর্বে মফস্বল শহরে বেড়ে ওঠা কোনো যুবকের অক্ষমতা, বিরাজমান অস্থিরতা, ও অনিয়মের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের গল্প… মাধ্যমিক পাশের পরে মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হই। শহরের ভালো পরিবেশের নিশ্চয়তা দেওয়া নামিদামি কোনো কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্নটা বেশকিছু কারণে পূরণ না হওয়ায় শুরু থেকেই অনেকটা বিষন্ন ও শিক্ষা জীবনে কেমন যেন অমনোযোগী হয়ে যাই। তবু মেনে নেওয়ার, মানিয়ে নেওয়ার তাগিদটা সব সময়ই অনুভবে টিকে থাকে। চেষ্টাও চালিয়ে যাই কিন্তু নানান প্রতিবন্ধকতা কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। সময়টা জাতীয় নির্বাচনের কিছু আগে কথা। নির্বাচনের ঢামাডোলে মঠবাড়িয়ার রাজনৈতিক উত্তাপ, অস্থিরতা মঠবাড়িয়ার ছাত্র রাজনীতিতেও প্রতিফলিত হয়। তৎকালীন ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের কলেজ শাখা প্রায়ই সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের মিছিল, মিটিং এ অংশগ্রহণে বাধ্য করতো। যা পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশকে মারাত্মক ভাবে বিঘ্ন ঘটাত। ক্লাসের শেষে বা যে কোনো অবসরে বন্ধুদের সাথে একসাথে বসে গল্প করাটাও যেন অনেক বড় চাওয়া অধিকাংশ বিষয়ের শিক্ষকের অনুপস্থিতি বা ক্লাস নেওয়ার অনীহা প্রতিবন্ধকতার ভিন্ন এক রূপ। অথচ কত সুন্দরই হতে পারতো আমাদের কলেজ জীবন। রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকারটা যদি স্বাভাবিক হতো, কলেজ সংসদের নেতৃতে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদেরই প্রতিনিধিত্ব করতো, তাদেরই অধিকার নিশ্চিতে কাজ করত, সৃজনশীলতার সুযোগ সৃষ্টি হত, প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ডিঙিয়ে শত সহস্র ঝড়ে পড়ার গল্প সৃষ্টি হতো না।
কলেজ সংসদের নেতৃত্বে বা কোনো পরিবর্তন সৃষ্টির রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক ক্ষমতা আমার ছিলনা, ছিল স্বপ্ন, শুভবোধ, সুইচ্ছা । তাগিদ অনুভব করতাম একজন ভালো মানুষ হবার। মানবতার সেবার, সৃষ্টিশীলতার, পরিবর্তনের কাছের বন্ধু সহপাঠিদের সাথে স্বপ্ন, ভালোলাগা, মন্দলাগার গল্পগুলো বলে বেড়াতাম। কেউ শুনতো, কেউ হেসেই উড়িয়ে দিত। সদ্য যৌবনে পা দেওয়া শ্রোতাদের কেউ একজন আরও আরও গল্প শুনতে চাইতো, স্পপ্ন দেখতে চাইতো । কিন্তু সংকীর্ণতার কাছে বরাবরই মানবতা হার মেনে যায়, যোগ বিয়োগের জলাঞ্জলি দিয়ে সমাজের শিখানো সংকীর্ণতার পথ বেছে নিতে হয়। কলেজে আমার সমমনা বন্ধু, সহপাঠি, শ্রোতা, সকলকে, নিয়ে খুব প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা হত। অক্ষম প্রশাসন, ছাত্রসংসদ, কিংবা সমাজ কারো বিরুদ্ধেই কোথাও প্রতিবাদ করতে ভরসা হয় না, ভরসা পাই প্রকৃতির কাছে কলেজের সব অনিয়ম, অশৃংখলা, ও ব্যাক্তিগত অপারগতার প্রতিবাদ আমাদের বাণিজ্য বিভাগের সবাই ও অন্য বন্ধুদের নিয়ে কলেজ প্রাঙ্গনে বকুল গাছের চারা রোপনের মাধ্যমে একটা শিক্ষাঙ্গনে সু পরিবেশের স্বপ্ন দেখি। এটাই স্বপ্ন বকুল । আমার প্রিয় শিক্ষাঙ্গন মঠবাড়িয়া সরকারী কলেজের বিশাল পুকুরের পশ্চিম পাড়ে স্বপ্ন বকুলের চারাটি রোপন হয়ে যায়। আমাদের স্বপ্ন বকুল গাছটি দিনে দিনে বেড়ে উঠছে…।
দুর প্রবাসে এসে শুনতে পাই..প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ উদযাপন হচ্ছে আমাদের স্বপ্নে বকুল তলায়। মঠবাড়িয়া উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি এখানে কয়েকবছর থরেই নাকি এ নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। আশা করছি আমাদের কলেজ ক্যাম্পাসের স্বপ্ন বকুল তলা ঘিরে আমাদের আপন সংস্কৃতির লড়াইটা নিশ্চয়ই টিকে থাকবে।
নিশ্চয়ই একদিন ফুল ফুটবে। বকুলের ফোটা ফুলের সুবাসে কলেজ ক্যাম্পাস আরও মোহনীয় হয়ে উঠবে। স্বপ্ন দেখি একদিন এভাবেই আমাদের যৌবনের সব প্রতিকূলতার জয় হবে,। কলেজের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে। হয়তো এই বকুল গাছই যুগে যুগে হাজারো প্রতিবাদে, সফলতায়, অক্ষমতায় নিরব সাক্ষী হয়ে রবে আমাদের স্বপ্নের বকুল গাছটা বেঁচে থাক…আর পরিবেশ ও জনবান্ধব মানুষেরা বেড়ে উঠুক…স্বপ্ন বকুল বেড়ে উঠুক মঠবাড়িয়ার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনাজুড়ে ..।
পুনশ্চ : আমাদের মঠবাড়িয়ার শুভজন মো. রাসেল সবুজ, আহ্বায়ক, জাগো লক্ষ নূর হোসেন ও নির্বাহী সম্পাদক আজকের মঠবাড়িয়া অনলাইন। তিনিও স্বপ্ন বকুলে তাড়িত হয়ে একটি মহতি উদ্যোগ নিয়েছেন শুনে দুর প্রবাসে মন ভাল হয়ে গেল। মঠবাড়িয়ার প্রতিটি স্কুল এবং কলেজ ক্যাম্পাসে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন গাছ ও একটি করে বকুল গাছ লাগাবেন তিনি । তার এই মহতি উদ্যোগের সাথে আমার পরিচিত অনেক বন্ধুরাও সাড়া দিয়েছেন। প্রবাসে আছি তাই দূরত্বের কারনে হয়তো সময়ের সঙ্গী হতে পারবনা। কিন্তু সকল পরিবেশ ও জনবান্ধব উদ্যোক্তা মানুষগুলোর প্রতি আমার স্বপ্ন বকুলের সমর্থন রইলো। উদ্যোক্তা রাসেল সবুজের পরিবেশ বান্ধব গাছ লাগানোর উদ্যোগটা নিশ্চয়ই মহতি উদ্যোগ।
# লেখক পরিচিতি : খায়রুল ইসলাম বাকু, মঠবাড়িয়া সরকারী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র, বর্তমানে ফ্রান্সভিতিক সলিডারিটিস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় দক্ষিণ সুদানে কর্মরত।
…………………………
# প্রতিবেদনের ছবি > দেবদাস মজুমদার