ব্রেকিং নিউজ
Home - দৃশ্যকাব্য - মঠবাড়িয়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি ফল জাম

মঠবাড়িয়া থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশি ফল জাম

মোঃ রাসেল সবুজ>

‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ,
পাকা জামের শাখায় চড়ে রঙ্গিন করি মুখ’।

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন এর লেখা এই কবিতার মতো আমাদের শিশুরা বাস্তবে এখন আর মামা বাড়ি গিয়ে মুখ রঙ্গিন করার সুযোগ পাচ্ছেনা।কারন জাম গাছ এখন খুজেই পাওয়া যায়না।অপ্রিয় হলেও সত্যি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মঠবাড়িয়া থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে দেশি ফল জাম।প্রিয় এই ফল এখন চলে গেছে দামি ফলের তালিকায়।মঠবাড়িয়ার সর্বত্র এক সময় প্রচুর জাম গাছ চোখে পড়লেও এখন তেমন দেখা যায় না।তাই অত্যন্ত ঔষধি গুণসম্পন্ন পাকা জামের মধুর রসে এখন আর মুখ আগের মতো রঙিন হয় না।নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনই এর প্রধান কারন।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফল স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।ফলটিতে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয়।এই ফ্রি র‌্যাডিক্যালস ক্যান্সারের জন্য দায়ী।জাম রক্তের শর্করা ও কোলস্টেরলের মাত্রা কমায়।আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, বিশেষ করে জামের বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।জামে প্রচুর আঁশ রয়েছে যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।জাম রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।শরীরে দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।জাম বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়ক।জামে স্যালিসাইলেট নামক এক ধরনের উপকরণ আছে, যা ব্যথানাশক হিসেবেও কাজ করে।ডায়াবেটিসের রোগীরা মৌসুমে প্রতিদিন ৮-১০টি জাম খেতে পারেন।জাম ভারতবর্ষ থেকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়েছে।

জাম গাছ ২০-২৫ মিটার পর্যন্ত উচু হয়।এটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ।কান্ড সরল, শাখা-প্রশাখাযুক্ত, ছাল ধূসর বর্ণের।পাতা সরল, বৃন্তক, প্রতিমুখ।মার্চ-এপ্রিলে ফুল আসে, ফুল সবুজাভ সাদা।জামের ফুল ছোট এবং ঘ্রাণওয়ালা।মে-জুন মাসে ফল বড় হয়।ফলটি লম্বাটে ডিম্বাকার।শুরুতে এটি সবুজ থাকে যা পরে গোলাপি হয় এবং পাকলে কালো বা কালচে বেগুনি হয়ে যায়। এটি খেলে জিহ্বা বেগুনি হয়ে যায়।স্বাদ মধুর।ফলের মজ্জা হালকা গোলাপি ও রসাল।যাদের ডায়বেটিস আছে তাদের জন্য জাম বেশ উপকারী।

বাংলাদেশে প্রধানত দুই জাতের জাম পাওয়া যায়।জাত দুটি হলো ক্ষুদি জাত- খুব ছোট এবং মহিষে জাত- বেশ বড় ও মিষ্টি।এটি বর্ষাকালে পাওয়া যায়। ফলের গা কালো এবং খুব মসৃণ পাতলা আবরণযুক্ত।ফলের বহিরাবরণের ঠিক নিচ থেকেই গাঢ় গোলাপী রংয়ের টক মিষ্টি শাস।জামে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি আছে।জাম গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত।কাঠ দিয়ে আসবাব ও ঘরের জানালা-দরজা তৈরি করা হয়।প্রতি কেজি জাম ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

আমরা সবাই যদি নিজেদের বাড়িতে এবং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে একটি করে জাম গাছ রোপণ করি তাহলে অচিরেই কবিতায় উল্লেখ করা সেই রঙ্গিন মুখ আবারো ফিরিয়ে আনতে পারবো।তাই আসুন আমাদের শিশুদের জন্য হলেও এই বর্ষাতেই অন্তত একটি করে জাম গাছ লাগাই।

Leave a Reply

x

Check Also

ব্যাঙের ছাতায় ভেষজ গুণ

দেবদাস মজুমদার <> স্থানীয় পরিচিতি ব্যাঙের ছাতা । অঞ্চলভেদে ভূঁইছাতা, কোড়ক ছাতা, ছত্রাক, পলছত্রাক, ভুঁইছাতি, ...