ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - কোরবানীর তাৎপর্য ও শিক্ষা

কোরবানীর তাৎপর্য ও শিক্ষা

মো. গোলাম মোস্তফা >

কোরবানী কি ?
কোরবানী হলো মহান আল্লাহ্‌ তালার প্রতি ভালবাসার নিদর্শন, পিতা-পুত্রের সর্বোতকৃষ্ঠ ত্যাগ এবং আত্মোৎসর্গের মহান দৃষ্টান্ত । আমরা সকলেই “কোরবানী” সম্মন্ধে কম বেশি জানি। আল্লাহ্‌র নামে কোরবানী সম্পর্কে কিছু কথা সহজ ও সরল ভাবে পাঠকের উদ্দেশ্যে নিবেদন করছি ।
আল্লাহ্‌র মহব্বতে নিবেদিত হজরত ইব্রাহিম (আঃ) বৃব্দ্ধ বয়সে প্রাপ্ত তাঁর আদরের সন্তান হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে জবাই করার পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহন করেছিলেন। ঘটনাটি যেমন মর্মর্স্পর্শী তেমনি ছিল আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনে ত্যগের এক মহান দৃষ্টান্ত । মানুষের মধ্যে দু’টি জিনিস আছে (Rationality এবং Animality) মনুষত্ব ও পশুত্ব, আর পশু জবাইয়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে থাকা পশুত্তকেই জবাই করার এক প্রতিকি অনুষ্ঠান এই কোরবানি ।
রসুল (সঃ) মদিনায় হিজরত করার পর কোরবানীর বিধান অবতীর্ণ হয় । কোরবারী নতুন কোন বিষয় নয়, এর ধারাবাহিকতা হযরত আদম (আঃ) এর যুগ থেকেই চালু হয়েছে । মহান কিতাব আল-কুরআনে হাবিল-কাবিল দুই ভাই এর কোরবানির কথা এসেছে । মানব ইতিহাসের সর্ব প্রথম কোরবানী ছিল আদম (আঃ) এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের দেয়া কোরবানী । আন্তরিকতা ও উদ্দ্যেশ্যের সততার কারণে হাবিলের কোরবানী আল্লাহ্‌ তালার দরবারে কবুল হলো আর নিষ্ঠার অভাব ও অমনোযোগিতার কারণে কাবিলের কোরবানি আল্লাহ্‌র নিকট প্রত্যাক্ষ্যাত হয়। কোরবানীর ইতিহাসে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সর্বোৎকৃষ্ঠ ত্যাগ এবং ইসমাঈল (আঃ) এর আত্মোৎসর্গ আল্লাহ্‌ তালার কাছে এতই পছন্দ হল যে, তিনি ইব্রাহীম (আঃ) কে আপন বন্ধুরুপে (খলিলুল্লাহ) গ্রহন করলেন। শুধু তাই নয়, মহান আল্লাহ্‌ তাঁকে মুসলিম জাতীর পিতার আসনে অভিষিক্ত করলেন । আর পিতা পুত্রের এই ত্যাগের ইতিহাস মুসলিম মিল্লাতের সকল সচ্ছল মানুষের জন্য কোরবানী বাধ্যতামুলক করলেন । আর তাই প্রতি আরবি বৎসরের জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ (৩ দিন) আমরা সচ্ছল মুসলমানরা কোরবানী করে থাকি ।

কোরবানীর শিক্ষাঃ
আমাদের জীবন ও সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ্‌ সুবহানাতালাহ । আর তাই এ দু’টো জিনিস আল্লাহর ইচ্ছা মোতাবেক ব্যয় করা প্রতিটি মোমিনের ঈমানের অপরিহার্জ দাবি এবং জান্নাত লাভের পূর্ব শর্ত । “ নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ মুমিনের জীবন ও সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন”(সুরা তওবা-১১০) কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বান্দার গোলামি প্রকাশ পায়, প্রভুর জন্য ভালবাসা ও ত্যগের মাত্রা নির্ণীত হয় ।
উপসংহারঃ
সৎ ভাবে উপার্জিত টাকায় কোরবানী করা, কোরবানীর উদ্দ্যেশ্য অবশ্যই সৎ হতে হবে এবং ত্যগের বহিঃপ্রকাশ থাকতে হবে । অনেকে বাহাবা পাওয়ার জন্য লোক দেখান কোরবানী করে থাকে, যাহা বাঞ্ছনীয় নয় । লক্ষ লক্ষ টাকায় উট, দুম্বা, গরু, মহিষ ও ছাগল কিনে লাল ফিতা গলায় বেঁধে বাহাবা পাওয়া বা নিজেকে জাহির করার জন্য পথে পথে ঘোরান, এটা যেমন ঠিক নয় তেমনি সচ্ছল ব্যক্তির জন্য জীর্ণ শীর্ণ কম দামি পশু কোরবানি দেয়াও অনুচিত । আল্লাহ্‌ বলেন “ ঐ সব পশুর রক্ত-গোস্ত আল্লাহ্‌র কাছে পৌঁছায় না, বরঞ্চ তোমাদের পক্ষ থেকে তাকওয়া তাঁর কাছে পৌঁছায়”। (সূরা-হাজ) । পশুটি কত বড় বা কতো দামের সেটা আল্লাহ্‌র কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। ভোগ নয় ত্যগেই আনন্দ, এটিও কোরবানির একটি শিক্ষা । কোরবানীর গোস্ত ৩ ভাগের ১ ভাগ গরিব/মিস্কিনদের মাঝে বিতরন করা মোস্তাহাব । কিন্তু আজকাল কোরবানী এলে দেখা যায় ফ্রিজ/ডিপ ফ্রিজ বিক্রি বেড়ে যায় । কোরবানির গোস্ত খাওয়া এবং সংরক্ষণ বৈধ, তবে তা করতে গিয়ে কোরবানির অন্যতম উদ্দ্যেশ্য ব্যহত না হয় সে দিকেও সকলকে খেয়াল রাখতে হবে । আগেই বলেছি শুধু পশু নয়, নিজের মধ্যে থাকা পশুত্ত্বও যাতে কোরবানী হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে । এই কোরবানির মাধ্যমে ক্রোধ, হিংসা, বিদ্দ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, শত্রুতা ইত্যাদি পশুত্বকে দমন করে মানুষের সুকুমারবৃত্তিগুলোকে জাগিয়ে তুলতে পারলে আমাদের কোরবানী সার্থক হবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে শান্তির সু-বাতাস ছড়িয়ে পড়বে ।

লেখক : মানব সম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ।

Leave a Reply

x

Check Also

লাইটার জাহাজের ধাক্কায় চরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে বিধ্বস্ত 🔴 যানবাহন চলাচল বন্ধ

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার কঁচা নদীর চরখালী-টগরা ফেরিঘাটের চরখালী ঘাটে একটি জাহাজের ধাক্কায় ফেরির ...