ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - পবিত্র ঈদুল ফিতরের শিক্ষা

পবিত্র ঈদুল ফিতরের শিক্ষা

নূর হোসাইন মোল্লা >>

ঈদুল ফিতর আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে রজমান মাসের রোজা বা সিয়াম শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিনের উৎসব। এটি হচ্ছে মুসলমানদের প্রধান ২টি ধর্মীয় উৎসবের একটি। ঈদুল ফিতর মুসলমানদের বৃহত্তম উৎসব। ধনী-গরীব নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলিম পরিবারে দেখা দেয় অবর্নণীয় আনন্দের ঢেউ। এদিন রোজা রাখা হারাম। এদিন যে ব্যক্তি ইবাদত বন্দেগী করে, পরম করুণাময় আল্লাহ হাশরের দিনে দুঃখ কষ্ট থেকে তাকে নাজাত প্রদান করবেন। এদিন আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীর বাড়ীতে খাওয়া এবং তাদের খোঁজ-খবর নেয়া কর্তব্য। ঈদুল ফিতর যেমন আনন্দের দিন তেমনি ত্যাগ ও মিলনের দিন। এ দিনের প্রথম ভাগে ২ রাকাত ওয়াজিব নামাজ জামাতে আদায় করার জন্য ঈদের মাঠে যাবার পূর্বে নিঃস্ব, গরীব, দুঃখী ও মিসকিনদেরকে ফিতরা প্রদানের নির্দেশ রয়েছে। এটি ওয়াজিব। এ ওয়াজিব পালন না করলে রোজা বা সিয়ামের কোন মূল্য থাকে না। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন যে,“তোমাদের রোজা আসমান ও জমিনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকবে, যতক্ষণ তোমরা এটির যাকাত আদায় না করবে। অর্থাৎ ফিতরার মাধ্যমে রোজার যাকাত আদায় করতে হবে। স্বচ্ছল পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের ফিতরা প্রদান করা ওয়াজিব। অন্তত ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম খাদ্যদ্রব্য বা সমপরিমান মূল্য ফিতরা স্বরূপ প্রদান করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে সমাজে যারা স্বচ্ছল তাদেরকে বাধ্যতামূলক ভাবে নিঃস্ব, গরীব ও মিসকিনদেরকে দান করতে হবে। ফিতরা, গরীব, দুঃখী, নিঃস্ব ও মিসকীনদের হক। ঈদুল ফিতরের পূর্বে স্বচ্ছল ব্যক্তিরা গরীব ও দুঃখীদের মধ্যে যাকাতও বিতরণ করেন। উল্লেখ্য, জাকাত হচ্ছে ফরজ। এটি হচ্ছে আর্থিক ইবাদাত। এটি সম্পদকে পরিশুদ্ধ ও বরকতময় করে এবং প্রতি বছরে একবার আদায়যোগ্য। রমজানে মাসে যাকাত আদায় করলে অধিক সওয়াব পাওয়া যায়। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করবে সে যেন অন্য মাসের একটি ফরজ আদায় করবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে ফরম আদায় করবে সে যেন অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায় করল। যাকাত সবাই আদায় করলে ধনী ও গরীবের মধ্যে বৈষম্য থাকে না। যাকাতের হিসাব হল ৮৭.৪৫ গ্রাম সোনা বা ৬১২.১৫ গ্রাম রূপা বা সমমূল্যের অর্থ বা পণ্য সামগ্রী এক বছর জমা থাকলে শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে যাকাত দান করতে হয়। গরীব-দুঃখী যাকাত ও ফিতরা পেলে যেমন তাদের হৃদয় তৃপ্ত হয় তেমনি তারা দাতার প্রতি কৃতজ্ঞ ও শ্রদ্ধাশীল হয়। অন্যদিকে যাকাত ও ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিদের হৃদয় ও হাত প্রসারিত হয়। এভাবে মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভাল বাসার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। ঈদুল ফিতর আমাদের ত্যাগ এবং কল্যাণের শিক্ষা দেয়। এদিন আমরা হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই।
এখন ইতিহাসের পাতায় যাব, মুসলমানদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর প্রথম কোথায় এবং কখন উদযাপিত হয়। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজ বংশ কুরাইশদের অত্যাচারে ৬২২ খ্রিঃ জন্মভূমি মক্কা পরিত্যাগ করে মদিনায় হিযরত করেন। তিনি মদিনায় এসে দেখেন যে, মদিনাবাসী নওরোজ এবং মিহিরজান নামে ২টি উৎসব পালন করেন। এ উৎসবে তারা গান, বাজনা, খেলাধূলা, তামাশা, আনন্দ ফূর্তি ইত্যাদিতে মেতে উঠত। তিনি এ উৎসব ২টি সম্পর্কে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা জাহিলিয়াত যুগ থেকেই এ উৎসব ২টি পালন করতেন। তাই আমরাও এ উৎসব পালন করে আসছি। তিনি তাদেরকে বলেন, এ ২টি উৎসবের পরিবর্তে ২টি উত্তম উৎসব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নির্ধারণ করেছেন,একটি ঈদুল ফিতর, অপরটি ঈদুল আযহা। ঈদুল ফিতর প্রথম উদযাপিত হয় ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরবী শাবান মাসে সমগ্র রমজান মাসে রোজা বা সিয়াম পালন করার নির্দেশ জারী করেন। অতঃপর মুসলমানেরা ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে তথা দ্বিতীয় হিজরী সনের রমজান মাসে সর্ব প্রথম রোজা বা সিয়াম পালন করেন। প্রথম সিয়ামের মাস রজমান ছিল ঘটনাবহুল। এ বছর ১৭ রমজান সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে এক হাজার সুসজ্জিত কুরাইশ বাহিনীর সাথে ৩১৩ জন মুসলিম সৈন্য যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনী পরাজিত হয়ে পলায়ন করে। এ বিজয়ের স্মৃতিকে সম্প্রসারিত এবং উৎসবময় করার জন্যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ঐ বছর রমজান মাস শেষে ঈদুল ফিতর পালনের ঘোষণা দেন। বদরের যুদ্ধের ১৩ দিন পর শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে অনুষ্ঠিত হয় ঈদুল ফিতর। এটিই হচ্ছে ইতিহাসের প্রথম ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ধর্মীয় ও শিক্ষামূলক আলোচনা এবং ইসলামী গান, নাটক ইত্যাদির আয়োজন করা যেতে পারে। ইসলাম বিরোধী কোন অনুষ্ঠান করা যাবে না। ঈদুল ফিতর নেনকার মুসলমানদের জন্যে অতি সম্মান, খুশি ও আনন্দের দিন। তবে খারাপ মানুষের জন্যে আযাবের দিন। খুশির দিন ঐ ব্যক্তির জন্যে যারা রমজান মাসে সন্তুষ্ট চিত্তে রোজা পালন করেছেন। আযাব ঐ ব্যক্তির জন্যে যারা বিনা কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা পালন করেনি। ঈদুল ফিতর ঐ ব্যক্তির জন্যে যারা রমজান মাসে রোজা বা সিয়াম পালন করেছেন। রমজান মাসে যারা রোজা বা সিয়াম পালন করেনি, তাদের জন্যে ঈদুল ফিতর নয়। পরিতাপের বিষয়, আমাদের দেশে যারা রোজা রাখেনি তারাই আনন্দ উৎসবে বেশি মেতে ওঠে। আতশবাজি করে সমাজে আতংক সৃষ্টি করে। দয়া করে এটি করবেন না। এতে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দেশে ঈদ উৎসব এখন অনেক ক্ষেত্রে বিকৃতরূপ লাভ করেছে। তাগের উৎসব এখন পরিনত হয়েছে ভোগের উৎসবে। রোজার উপকারিতা হচ্ছে ইহা মানুষের পশু প্রবৃত্তিকে দমনে যেমন কার্যকর তেমনি মানুষের স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও রোগ-ব্যাধি নিরাময়ে ওষুধের মত কার্যকর। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এ ষড়রিপু মানুষের উন্নতির প্রধান অন্তরায়। রোজা ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণ করে। ইবনে মাজাহ ও মিশকাত শরীফে বর্ণিত আছে, “প্রত্যেক বস্তুর যাকাত আছে, আর শরীরের যাকাত হল রোজা”। ঈদুল ফিতরের দিনের দ্বিপহরের পূর্বে ধনী, গরীব, দুঃখী, নিঃস্ব, কৃষক-শ্রমিক ও আবালবৃদ্ধ ঈদের মাঠে সারিবদ্ধ হয়ে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। জামায়াত ছাড়া একাকী এ নামাজ আদায় করা যায় না। নামাজ শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন। ঈদুল ফিতর মানুষের মনে প্রেম, ভালবাসা, সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে। আসুন আমরা ঈদুল ফিতরের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করি।

সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

——————————————-

লেখকঃ>>অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এবং
সচিব,
মঠবাড়িয়া উপজেলা নাগরিক কমিটি।
মোবাঃ ০১৭৩০৯৩৫৮৮৭

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...