ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - কাব্য ভাবনা

কাব্য ভাবনা

আমি মানুষ হিসেবে প্রচণ্ড অভিমানী, খিটখিটে মেজাজের এবং বোরিং টাইপের। আর রাগ তো আরো বেশী। আর আমার কবিতা? আমার কবিতা নিয়ে কথা শুরু হলে আমি মেধাবী কবিদের মতন অত সুন্দর গুছিয়ে কিছুই বলতে পারিনা। আমি কিছুদিন আগে মঠবাড়িয়া শেরে বাংলা পাঠাগারে সাপ্তাহিক পাঠচক্রে বিশেষ অতিথি হিসেবে গিয়েছিলাম। সেখানের প্রধান অতিথি অনুষ্ঠানের এক ধাপে আমার কাছে কবিতা ভাবনা জানতে চাইলো। আমি কবিতা ভাবনা বলতে লিখতে সবসময়ই বিব্রত বোধ করি। আর অত বিস্তারিত কবিতা ভাবনা নেইও। আমি স্রেফ আমাকে লিখি। বাবার ঘাম মায়ের চোখ এসব লিখি। মাঝে মাঝে রাষ্ট্রের উপর রাগ ঝাড়ি। আর যৌনতা? হ্যাঁ ওটা আছে আমার লেখায় প্রবল। তো এইরকম খিটখিটে রাগী স্বভাবের মানুষ যে লেখে মাঝে মাঝে প্রেমিকা বৃত্তান্ত বা রাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ । সেই মানুষটাই যে বাচ্চাদের জন্য ছড়া লিখবে এটা আমি নিজেই কখনো ভাবিনি। কারন বাচ্চাদের লেখা অনেক কঠিন একটা ব্যাপার। আর আমার মত বদমেজাজী লোক দিয়ে তা সম্ভব না একদমই। বাচ্চাদের লেখার জন্য দরকার শান্ত নিরিবিলি মন। আর আমার মন তো সর্বদা খারাপ থাকে। তো সেই আমাকেই বাচ্চাদের লেখা লিখতে প্রথম অনুরোধ করলো ফারজানা।
এই ভয়ংকর অনুরোধ ও করেছিল বইমেলা দুই হাজার সতেরো চলাকালীন। আমি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম। মেলা থেকে বেরিয়ে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত বারোটার বেশি বেজে যেত ও সেই রাত বারোটার পরে বলত, মলয় আমাদের পত্রিকার জন্য লেখা দে।
যাক সাহস করে একদিন লিখেই ফেললাম। লেখাটা ” দুরন্ত শিশু কিশোর পত্রিকায় একুশে সংখ্যায় ছাপা হলো ” আমি বিকেলে মেলায় ঢুকতেই ফারজানা আমার হাতে পত্রিকাটা দিল। বাচ্চাদের জন্য আমার লেখা তাও আবার ছাপার অক্ষরে ভাল লাগছিল কিন্তু ফারজানার অতিরিক্ত প্রশংসায় ভয় ও লাগছিল পেপার টা পড়তে দিলাম কবি জায়েদ বিন ফরিদ ও সোয়েব মাহমুদ কে। মেলার মধ্যে তারা কতটুকু মনযোগ দিয়ে পড়লেন তা নিয়ে আমার সন্দেহ শুরু হলো।
বাসায় ফেরার পথে পত্রিকার এক কপি দিলাম কবি রাকিবুল হায়দার কে। পরে যখন আবার একদিন রাকিব ভাইর সাথে আমার দেখা হলো উনি ডেকে বললো মলয় দুরন্তে তোমার ছড়া পড়লাম বেশ ভালো লাগলো। আমি একটা অন্য রকম সাহস পেলাম। এরপর আমার প্রকাশক কবি আলী আফজাল খান এর সাথে দেখা হলে উনিও বেশ প্রশংসা করলেন। যাক এবার আমি একটু নিশ্চিন্ত। পরের মাসে এলাম পিরোজপুরে। লিমুকে আমার বই দেবার পাশাপাশি পত্রিকা টা দিলাম। ও পড়ে যখন ভালো বললো
তখন আর ভয়টা থাকলোনা। তবে সবটুকু ধন্যবাদ ফারজানার জন্য ও এভাবে অনুপ্রেরনা না দিলে যতই যা লেখি বাচ্চাদের জন্য কবিতা লেখা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। যাহোক ফারজানার টানাটানিতেই আবার দুরন্ত শিশু কিশোর পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় আবারো লেখা দেই।

আচ্ছা, ফারজানা দুরন্তের নেক্সট সংখ্যা কবে আসবে?
আমিতো বাচ্চাদের লেখা লিখেই দিন কাটাচ্ছি।

কবিতা –

চল তোকে দেখাই
লালপাহাড়ের গায় উপছে পড়া তারা
রং বেরংএর ফুলেরা আর পাতারা মনকারা

চল তোকে দেখাই
ধানসিঁড়িটির তীরে আঁকা বাকা আলো
পূর্ণিমাতে খানিক চাঁদে ভেসে যাওয়া খোওয়াই
দেখবি কত ভালো।

চল তোকে দেখাই
স়াঁওতালি সব কালো মেয়ের নাচ
ধামসা মাদল বাজিয়ে নাচে
খোঁপায় ফুলের সাজ।

চল তোকে দেখাই
দীঘির জলে পানকৌড়ির ডুব
দুষ্টু ছেলে ছিপ ফেলেছে তাই
এক্কেবারে চুপ।

চল তোকে দেখাই
উদোম গায়ে গ়াঁয়ের ছানাপোনা
একটু খেতে পাবে বলে
স্কুলে আনাগোনা।

চল তোকে দেখাই
সুখের অসুখে ভুগছে যে আজ কারা
রাতে চোখে ঘুম কেড়েছে
সুখের কান্নারা।

(প্রকাশিত, দুরন্ত শিশু কিশোর পত্রিকা)

বৈশাখের সংখ্যার ছড়া টা না হয় অন্যদিন।

লেখক : মলয় দত্ত, কবি

 

 

Leave a Reply

x

Check Also

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহবায়ক আলমগীর হোসেন আটক

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনকে আটক করেছে ...