ব্রেকিং নিউজ
Home - অপরাধ - মঠবাড়িয়ায় ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের অকাল মৃত্যুর অভিযোগ

মঠবাড়িয়ায় ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মায়ের অকাল মৃত্যুর অভিযোগ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি >

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বিউটি বেগম (৪০) নামে প্রসূতি এক নারী বেসরকারী ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায়
মৃত্যু ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে মঠবাড়িয়া পৌর শহরের কাছিছিড়া মহল্লায় অবস্থিত পল্লী সার্জিক্যাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টার নামে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে ওই প্রসূতি মায়ের মৃত্যু ঘটে। পরিবারের অভিযোগ ওই প্রসূতি মায়ের অস্ত্রোপাচারের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে তার মৃত্যু ঘটেছে। এমনকি মৃত্যুর পর ক্লিনিকের লোকজন রোগির লাশসহ পরিবারের স্বজনদের ক্লিনিক থেকে দ্রুত নামিয়ে দেয়।
মৃত গৃহবধূ পাশ্ববর্তী বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোলাঘাটা গ্রামের কাচামাল বিক্রেতা মজিবর রহমানের স্ত্রী ও মঠবাড়িয়ার দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামের সুলতান মোক্তারের মেয়ে।

নিহত গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানাগেছে, সোমবার রাতে ওই গৃহবধূর প্রসব বেদনা উঠলে পরিবারের স্বজনরা মঠবাড়িয়া পৌর শহরের কাছিছিড়া মহল্লায় অবস্থিত আ.লীগ নেতার মালিকানাধিন পল্লী সার্জিক্যাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টারনামে বেসরকারী ক্লিনিকে ভর্তি করে। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে ১৩ হাজার টাকা চুক্তিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডা, সুব্রত কর্মকার ওই গৃহবধূর অস্ত্রোপাচার করেন। গৃহবধূর একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। তবে অস্ত্রোপাচারের সময় প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ ঘটে। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। অবস্থা আশংকা জনক হলে চিকিতসক গৃহবধূর পরিবারকে এ পজেটিভ রক্ত সংগ্রহ করার কথা জানায়। ওই রক্ত সংগ্রহের আগেই বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে গৃহবধূ মারা যায়।

মৃত গৃহবধূর ছোট ভাই উপজেলার দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামের নির্মান শ্রমিক শাহ্ আলম জানান, তার বোন বিউটি বেগমের প্রসব বেদনা শুরু হলে সোমবার রাতে এক দালালের মাধ্যমে মঠবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক জলিলুর রহমানের মালিকাধিন পল্লী সার্জিকাল ও ডায়াগস্টিক সেন্টার ক্লিনিকে ভর্তি করে। তের হাজার টাকায় সিজারিয়ান অপারেশনের চুক্তিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ওই গৃহবধূকে কথিত চিকিৎসক ডা. শুভ্রত কর্মকার ও ডা. হাবিবুর রহমান দিপু অপারেশন করেন। অপারেশনে প্রচুর রক্তক্ষরণ হলে সময়মত রক্ত দিতে না পারায় নবজাতক শিশুটি বেঁচে থাকলেও বিউটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার বোনকে মৃত জেনেই ক্লিনিকের লোকজন ঝামেলা এড়াতে তাদের নামিয়ে দেয়। পরে সে বোনের লাশ নিয়ে শহরের বহেরাতলা মহল্লায় কুয়েত প্রবাসি হাসপাতালে গেলে সেখা চিকিতসক তার বোনকে মৃত ঘোষণা করে। পরে সেখান থেকে লাশ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে দ্বিতীয় দফা চিকিতসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্লিনিকটি ঘেরাও করে। পুলিশ খবর পেয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এদিকে এ ঘটনার পর পল্লী সার্জিক্যাল ও ডায়গনিস্টিক সেন্টারের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক
ও ক্লিনিকের লোকজন গা ঢাকা দেয়। তাদের কাউকেই ক্লিনিকে পাওয়া যায়নি।

তবে ওই ক্লিনিকের সেবিকা তপু বেপারী দাবি করেন, প্রসূতি ওই নারীকে সংকট জনক অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা এখানে ভর্তি করেছেন। সে শারিরীকভাবে দুর্বল ছিল। তবে রক্তক্ষরনে নয় অন্য কারনে তার মৃত্যু হয়েছে।
নিহত বিউটির মা মমতাজ বেগম অভিযোগ করেন, অপারেশনের আগে রক্ত মজুদ না রেখে ও অজ্ঞান না করেই ডাক্তার অপারেশন শুরু করেন।
বিউটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার স্বজনসহ এলাকাবাসী ওই ক্লিনিক ঘেরাও করে। খবর পেয়ে ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসক পালিয়ে যান।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে ক্লিনিকের মালিক ও ডাক্তার এর সাথে বার বার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। এ রিপোর্ট লেখা রাত ৭টা পর্যন্ত স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে

উল্লেখ্য এর আগেও ওই ক্লিনিকে উত্তর মিঠাখালী গ্রামের আনসার সদস্য মো. ফরিদ এর স্ত্রী সিজারিয়াল অপারেশনে অকাল মৃত্যু ঘটে ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...