ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - পিরোজপুরে ভাসমান পেয়ারার হাটে নৌকার দোলায় চলে বেচাকেনা

পিরোজপুরে ভাসমান পেয়ারার হাটে নৌকার দোলায় চলে বেচাকেনা

খালিদ আবু : জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর -কুড়িয়ানা এলাকা। এখানকার আটঘর- কুড়িয়ানা খাল ও এর শাখা খালগুলোতে নৌকায় ঢেউয়ের তালে তালে চলে বেচাকেনা। স্থানীয়দের মুখে জানাযায়, ভাসমান এ হাট চলছে দুই শতাধিক বছর ধরে। এখানে নৌকায় করে বিকিকিনি করতে আসেন আশপাশের তিনটি জেলার মানুষ।

আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সবুজ মজুমদার গ্রামের সমাজকে বলেন, বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার প্রায় সব বাড়িতেই নানা সবজি ও ফলমূলের বাগান রয়েছে। এসব পণ্য সহজে বেচার সুযোগ পাওয়ায় তাঁরা এই হাটে আসেন। এলাকার বেশ কয়েকজন বলেন, স্বরূপকাঠি, ঝালকাঠি সদর ও বানারীপাড়ার লোকজনের যোগাযোগ মূলত নৌকাকেন্দ্রিক। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত।

এসব এলাকায় আছে বনজ, ফলদ, মসলার গাছ। অনেক পেয়ারাবাগানও রয়েছে এই অঞ্চলে। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার কুড়িয়ানা এখন বাঙলার আপেল খ্যাত পেয়ারা সমৃদ্ধ গ্রাম। মৌসূমে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টন পেয়ারা এই অঞ্চলের বাজার সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কুড়িয়ানার পেয়ারা গ্রাম বহন করছে পেয়ারা চাষের শত বছরের ঐতিহ্য। প্রতি বছর বর্ষা মৌসূমে এই এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টন পেয়ারা সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সিডর পরবর্তি সময় থেকেই শুরু হয়েছে পেয়ারার বাম্পার ফলন। অধিক ফলনের পরও নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে লাভবান হতে পারছেন না এলাকার কৃষক। পেয়ারা চাষই এখানের কৃষকদের প্রধান জীবীকা। বছরের পর বছর ভাল ফসল উৎপাদন করলে ও আজপর্যন্ত পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য গড়ে ওঠেনি কোন হিমাগার। বিদ্যুৎ এবং যাতায়াতের অভাবে গড়ে ওঠেনি পেয়ারার জ্যাম-জেলি প্রস্তুত কারখানা ও। কৃষকরা প্রকৃত সুফল না পেলেও মুনাফা অর্জন করে নিচ্ছেন স্থানীয় ফরিয়া ও বহিরাগত ব্যবসায়ীরা। বহু আবেদন নিবেদন করে কোন ফল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেন স্থানীয় জনপ্রতিধিরা।

কৃষকের উৎপাদিত এসব পণ্য বিক্রি করার জন্য তিন জেলার সংযোগস্থল আটঘর এলাকায় গড়ে ওঠে ভাসমান সবজিহাট। প্রতি শুক্র ও সোমবার বেচাকেনা চলে এখানে। পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠির আদাবর এলাকা থেকে আসা সত্যেন্দ্রনাথ মন্ডল বলেন, ‘৭০ বছর ধরে নৌকায় সবজি নিয়ে এই বাজারে আসছি। বাবা ও ঠাকুরদার মুখে শুনেছি, এ বাজার নাকি ২০০ বছরেরও পুরোনো।’শুনেছি ব্রিটিশ আমলেরও আগে এই হাট বসেছে।’ স্বরূপকাঠি এলাকার আবুল কাশেম বলেন, ঝালকাঠি সদরের বিনয়কাঠি, ভিমরুলী ও শতদশকাঠি; পিরোজপুরের আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলী, ডুমুরিয়া, স্বরূপকাঠি, জিন্দাকাঠি, আমদকাঠি, রাজাপুর, ব্রাহ্মণকাঠি, রায়ের হাট, আন্দাকুল ও বাউকাঠি এবং বানারীপাড়ার বানারীপাড়া ও রায়ের হাট এলাকার কৃষকেরা ছোট ছোট নৌকায় করে পণ্য নিয়ে এই হাটে আসেন। হরেক রকম সবজি ও ফলমূল মেলে ভাসমান বাজারে। পাওয়া যায় পেয়ারা, তাল, আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আতা, জামরুল, এবং সব্জি বরবটি, করলা,কাকরোল, পানিকচু, কচুরলতি, লেবু, বোম্বাই মরিচ, শসা, পেঁপে, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, তাল, নারিকেল, পাটশাকসহ বিভিন্ন সব্জি। এসব বিক্রি হয় পাইকারি দরে। পাইকাররা এখান থেকে এসব কিনে ট্রলারে বোঝাই করে নিয়ে যান ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায়।

হাটের দিনে আটঘর এলাকার খাল ও আশপাশের কয়েকটি শাখা খালের সব্জিবোঝাই নৌকাগুলোর এগিয়ে চলার দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন নৌ শোভাযাত্রা চলছে। একসময় খাল ছেয়ে যায় পণ্যবোঝাই নৌকায়। সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয়ে যায় বেচাকেনার হাঁক-ডাক। সকাল নয়/দশটার মধ্যেই বেচাকেনা শেষে খালি নৌকা নিয়ে ফেরেন চাষিরা।
জিন্দাকাঠির পাইকার অমল মন্ডল বলেন, ভাসমান এই হাট থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন পাইকার পণ্য কিনে নিয়ে যান। তিনি ২০ বছর ধরে এখান থেকে শাক-সবজি কিনে ঢাকা-বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এখান থেকে পণ্য পাইকারি দরে কেনেন সুকুমার মন্ডল। তিনি বলেন,
আমি সব ধরনের পণ্য কিনি। এরপর ট্রাক বোঝাই করে এবং স্বরুপকাঠী থেকে লঞ্চে করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠাই।

দেশীয় পেয়ারা উৎপাদনের এই সম্ভাবনাময় কৃষিতে বিপত্তি সৃষ্টি করছে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। শত বছর পর ও হিমাগার কিম্বা জেলি প্রস্তুত কারখানা গড়ে না ওঠার কারনে পেয়ারা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই। সংরক্ষণের অভাবে লাভবান হচ্ছেন না কৃষক।
তথ্যঃ গ্রামের সমাজ

Leave a Reply

x

Check Also

এফ-কমার্স ভিত্তিক মঠবাড়িয়া ই-বাজারের সাফল্যগাথা

মঠবাড়িয়া ই-বাজার, একটি এফ কমার্স বা অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম। আর অনলাইন ভিত্তিক ব্যাবসার নতুন ধারণাকেই ...