ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - আজ পহেলা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস

আজ পহেলা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস

নূর হোসাইন মোল্লাঃ সম্পদ এবং সম্পত্তির বিচারে কেউ মালিক আর কেউ শ্রমিক। মালিক আর শ্রমিকের বিরোধ থেকেই সৃষ্টি হয়েছে ঐতিহাসিক মে দিবস।পহেলা মে দিবসটি কেবল একটা দিবসই নয়, একটি ঘটনা।একটি রক্তাক্ত ইতিহাস, একটা দিক নির্দেশক ও শ্রেণী বৈষম্যের দাসত্ব মুক্তির অণুপ্রেরক।

বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশই ইদবসটি পালন করে শ্রমিক দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে। ১৮৮৬ সালের পূর্বে ইউরোপে পহেলা মে উৎযাপিত হতো আনন্দ উল্লাসে। এদিনে লন্ডন শহরের পশ্চিম প্রান্তস্থ্য অভিজাত পল্লীতে মেলা অনুষ্ঠিত হতো। এদিনে মে বৃক্ষ রোপণ করে সাজানো হতো পুস্প সম্ভারে। জনসাধারণ থেকে শুরু করে রাজা-রানী সবাই মেতে উঠতেন আনন্দ উল্লাসে। কিন্তু ১৮৮৯ সালের পর পহেলা মে হারিয়ে ফেলে তার পুরনো ঐতিহ্য। বিশ্ববাসীর নিকট পরিচিত হয় অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারীতের বিজয় দিবস হিসেবে।

পহেলা মে কেন শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয় কিংবা শ্রমিকের সাথে এদিবসটির সম্পর্ক কি তা জানতে হলে আমাদেরকে যেতে হবে ইতিহাসের পাতায়। অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের ফলে কল-কারখানার মালিকেরা তাদের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্যে দিন-রাত কারখানা চালু রেখে শ্রমিকদের কে দৈনিক১৮ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করতেন।

এর প্রতিবাদে ১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার শ্রমিক ইউনিয়নগুলো দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে। শুমিক সংগঠনগুলো দৈনিক সর্বোচ্চ ৮গন্টা কাজের সময় নির্ধারন করে আইন পাশকরার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাব করেন। শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সংগঠন ফেডারেশন অফ ট্রেডস্ এন্ড লেবার ইউনিয়ন সিদ্বান্ত গ্রহন করে যে, ১৮৮৬ সালে পহেলা মে থেকে কোন শ্রমিকই দৈনিক ৮ঘন্টার অধিক কাজ করবে না।
এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরের শ্রমিকেরা সোভাযাত্রা এবং সমাবেশ করেন।

প্রথম দিনে মিছিল মিটিং শান্তিপূর্নভাবে অনুষ্ঠিত হলেও পরিস্থিতি পাল্টে যায় ৩মে। এ দিন হাজার হাজার শ্রমিক দাবী আদায়ের জন্য মিছিল করে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে সমাবেত হয়। আন্দোলন ঠেকানোর জন্য বিনা উস্কানিতে পুলিশ নিরীহ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে ৬জন শ্রমিক হত্যা এবং আহত করে শত শত শ্রমিককে। রক্তে রঞ্জিত করে হে মার্কেট। গ্রেফতার করে ৪জন শ্রকিনেতা স্পাইজ, পর্সনস, ফিসার ও এঞ্জেস। বিচারে তাদেরকে ফাঁসি দেয়া হয়।

শ্রমিকদের জীবন বিসর্জন স্মরনীয় করে রাখা এবং তাদের কাজের সময় ৮ঘন্টা নির্ধারনের জন্য ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সমাবেশ। এ সমাবেশে ১৮৯০ সাল থেকে প্রতি বছর পহেলা মে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক শ্যমিক সংহতি এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শ্রমিকদের নির্যাতন ও নিপিরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় সর্বচ্চ ৮ ঘন্টা নির্ধারিত হয়।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে আজও মালিক শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। আমাদের দেশের শ্রম আইন শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় যথেষ্ট নয়। এটি অধিকতর সংশোধন করা আবশ্যক। মালিক ও শ্রমিদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে তার সমাধান করতে হবে। আসুন আমরা সবাই শ্রমিদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করি। সবাই মিলে দেশকে সমৃদ্ধশালী করি।

মে দিবসে দেশের সকল শ্রমজীবী মানুষকে জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

লেখকঃ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
মোবাঃ ০১৭৩০৯৩৫৮৮৭

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...