ব্রেকিং নিউজ
Home - অন্যান্য - ঝালকাঠি গাবখান চ্যানেল খননে শুভংকরের ফাঁকি

ঝালকাঠি গাবখান চ্যানেল খননে শুভংকরের ফাঁকি

আল-আমিন, ঝালকাঠি থেকে: বাংলার সুয়েজ খাল খ্যাত গাবখান চ্যানেল সুরক্ষার অভাবে ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। নাব্য সংকট আর দুই পাশে চর পড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক রুটের এ চ্যানেলটি এখন অনেকাংশেই হুমকিতে। এ অবস্থার উত্তরণে কয়েক মাস ধরে ড্রেজিং বিভাগ গাবখান চ্যানেল খনন শুরু করলেও তাতে চলছে শুভংকরের ফাঁকি। নৌযান চালক ও মালিকরা অভিযোগ করেছেন, ভরা জোয়ারে নামে মাত্র খনন চলছে। খনন করা মাটি ফেলা হচ্ছে নদীর পাড়েই। চ্যানেলটিতে জাহাজ চলাচলে গভীরতা কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ মিটার দরকার হলেও ৩ মিটারের বেশি খনন হচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক ও দেশের অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ গাবখান চ্যানেলের সুগন্ধা মোহনা এবং সেতুর পাশে চর জেগে ওঠায় দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। কৃত্রিম এ চ্যানেলটি দিয়ে প্রতিদিন অভ্যন্তরীণ ও ভারতীয় জাহাজ এবং ঢাকা-খুলনা রুটের যাত্রীবাহী জাহাজ যাতায়াত করছে। এমনকি চট্টগ্রাম থেকে মংলা, যশোর, খুলনা, নওহাটা ও বেনাপোলে বাণিজ্যিক জাহাজ যাতায়াত করে। বাংলাদেশ থেকে নদীপথে ভারত যাতায়াতের রুট হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। সরেজমিন বুধবার গাবখান চ্যানেলে গিয়ে দেখা গেছে, ড্রেজিং বিভাগ নদীর চর কেটে মাটি পাশেই রাখছে। পাশে রাখা মাটি জোয়ারের পানিতে মিশে আবার সেই খনন স্থানে গিয়েই নামছে।

বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ এমভি মধুমতির মাস্টার ক্যাপ্টেন আবিদ বদরুল আলম বলেন, গাবখান চ্যানেল খননে দৃশ্যমান কোনো কাজ হচ্ছে না। ঝালকাঠি ব্রিজের নীচে উত্তর পাশ থেকে খনন চলছে। এটি অত্যন্ত জটিল স্পট। চ্যানেলের মুখের এক পাশে খনন করা হয়নি। তিনি বলেন, এ চ্যানেল থেকে বড় জাহাজ চলাচলে ৫ থেকে ৬ মিটার গভীরতা দরকার। কিন্তু ড্রেজিং বিভাগের খননে এ গভীরতা ৩ থেকে ৪ মিটারের বেশি হচ্ছে না। তাছাড়া নদীর কিনারা থেকে মাটি খনন করে পাড়েই রাখা হচ্ছে, যা বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে। যে বেল্টে খনন চলছে তা থেকে আধা কিলোমিটার খনন দ্রুত দরকার।

যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি রেডসান-৫ এর মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, গাবখান চ্যানেল খনন নিয়ে লুকোচুরি চলছে। শীত মৌসুমে না কেটে এখন ভরা নদীতে মাটি কেটে পাশেই ফেলা হচ্ছে। এগুলো নদীতেই পড়ে যাবে। আসলে সরকারি অর্থ অপচয় করাই লক্ষ্য। বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল মালিক সমিতির নির্বাহী সদস্য মোঃ ইউনুস জানান, গাবখান চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেলে পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে সুন্দরবন ও বরগুনা উপকূল হয়ে বেশি পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হবে। অথচ চ্যানেলটি খননে বাস্তব পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিএ বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিদর্শক রিয়াদ হোসেন বলেন, এ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সব বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা হয়। সভায় আন্তর্জাতিক প্রোটোকল রুট হিসেবে গাবখান চ্যানেল খননে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন, এ চ্যানেলে পানির গভীরতা সবচেয়ে বেশি দরকার। তবে খননের অভাবে নৌযান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটলে তারা সংশ্লিষ্ট দফতরে অবহিত করবেন।

ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (গাবখান চ্যানেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত) মোঃ সফিউল্লাহ বলেন, গাবখান চ্যানেল খননে বর্তমানে ঝালকাঠি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় খনন চলছে। এর আগে গাবখান চ্যানেলের মুখ কাটা হয়েছে। অবশ্য চ্যানেলের মুখের পূর্ব পাশে স্থানীয় লোকজনের বাধার কারণে খনন করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, চ্যানেলের গভীরতা কমপক্ষে ১০ ফুট থাকবে। তবে নৌযান চালকরা যদি মনে করেন গভীরতা সঠিক হচ্ছে না, তাহলে তারা অবহিত করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নদীর মাটি কেটে নদীর পাড়ে ফেলা প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী সফিউল্লাহ বলেন, জায়গা না থাকায় পাশেই ফেলা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখার সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক একিন আলী মাস্টার বলেন, নদী খননে যারা টেন্ডার নেন তারা এবং ড্রেজিং বিভাগের কারসাজিতে গাবখান চ্যানেল সঠিকভাবে খনন হচ্ছে না। এখন পানি উঠে গেছে, অথচ খনন চলছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে যেখানে ৫ ফুট পানিও থাকে না। এখন সেখানে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ ফুট। তাহলে আন্তর্জাতিক এ চ্যানেলটির কী খনন করা হলো।

Leave a Reply

x

Check Also

এফ-কমার্স ভিত্তিক মঠবাড়িয়া ই-বাজারের সাফল্যগাথা

মঠবাড়িয়া ই-বাজার, একটি এফ কমার্স বা অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম। আর অনলাইন ভিত্তিক ব্যাবসার নতুন ধারণাকেই ...