ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - উপকূলে আম্রপলি মুকুলে ছড়াছড়ি

উপকূলে আম্রপলি মুকুলে ছড়াছড়ি

দেবদাস মজুমদার >

উপকূলীয় এলাকা জুড়ে আমগাছে এখন মুকুল ধরতে শুরু করেছে। তবে স্থানীয় জাতের আমগাছে প্রচুর পরিমানে মুকুল দেখা না গেলেও আম্রপলি জাতের আমগাছের মগডালে এখন মুকুলে ঠাসা। আম্রপালির ছোট-বড় প্রতিটি গাছে এখন মুকুলে ভরে গেছে। বৈরী আবহাওয়ার দুর্যোগ না হলে এ মৌসুমে উপকূলজুড়ে আম্রপলিসহ স্থানীয জাতের আমের এবার আশানুরুপ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন ।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার বলেশ্বর নদ তীরের হরিণপালা ইকো পার্কে সৃজিত আ¤্রপলি আমগাছে প্রচুর পরিমানে মুকুল ধরেছে। এখানে দুই শতাধিক আম্রপালির ডগাজুড়ে আমের মুকুল ফুটেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের আম গাছ গুলোতেও এখন কম বেশী মুকুল ধধরতে শুর করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা সুস্বাদু ও মিষ্টি আম হিসেবে জনপ্রিয় আম্রপলি আম আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোর ইউনিয়নের জানখালী গ্রামের প্রদর্শনী প্লটের আম চাষী মো. নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, আম্রপলি কম জয়গায় আবাদ করা যায়। তাছাড়া বাজারে এ আমের চাহিদাও বেশী। ফলে ৮০ ভাগই আম্রপলি আবাদ করা হয়েছে। আম্রপলি বানিজ্যিকভাবে আবাদ করতে পারলে যে কেউ লাভবান হতে পারে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, মুকুল আসার আগে এবং মুকুল ধরার সময় প্রয়োজনীয় স্প্রে করা গেলে আমের মুকুল সংরক্ষণ এবং পোকার হাত থেকে আমকে রক্ষা করা সম্ভব। আম চাষে আগ্রহী কৃষকরা কৃষি বিভাগের কাছে পরামর্শের জন্য এগিয়ে এলে সেক্ষেত্রে তারা পরামর্শ দিতে পারেন।
উন্নত জাত, আধুনিক প্রযুক্তি ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে পিরোজপুর উপকূলে হাইব্রীড আমের জাতের মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত জাত হচ্ছে আম্রপলি। এটি উচ্চ ফলনশীল জাতের আম। স্থানীয় জাতের আমগাছের চেয়ে ছোট হলেও আ¤্রপলির ফলন বেশী। স্থানীয় জাতের আমের চেয়ে এটি মৌসুমে আগাম ফলে তাই আম্রপালি জনপ্রিয়তা অর্জণ করেছে। এ আম সুমিষ্ট ও বেশী ফলনের কারনে দিন দিন আম্রপলি আবাদে প্রসারতা বাড়ছে।
১৯৯৮ সাল থেকে পিরোজপুর উপকূলে আম্রপলি আবাদে সম্প্রসারণ ঘটে। কৃষি বিভাগ চাষীদের উদ্বুদ্ধ করতে কিছু প্রদর্শনী প্লটে প্রথমে আম্রপলি আবাদ করে। বর্তমানে আম্রপলি জাতের আমের চারা অত্যন্ত সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। অনেকে শখেও দুই একটি আম্রপলি গাছ রোপন করছেন। তবে আম্রপলি বানিজ্যিক আবাদ ব্যাপকহারে সম্প্রসারণ ঘটলে মৌসুমে আমের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে ।
পিরোজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজিত কুমার হালদার জানান, আ¤্রপলি আমের আবাদ সম্প্রসারণে পিরোজপুর জেলার সাত উপজেলায় ৯৮টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার মঠবাড়িয়ায় আমের ৩০টি প্রদর্শনী বাগান সৃজন করা হয়েছে। উপকারভোগি কৃষকদের মাধ্য এসব বাগান পরিচর্যা চলছে। ৩০টি প্লটে ১৬ শতক করে জমিতে আম গাছ সৃজন করা হয়েছে। এসব আমের মধ্যে আ¤্রপলি হচ্ছে ৮০ ভাগ। এছাড়া কিছু হিম সাগর জাতও রয়েছে। অপরদিকে জেলা সদর উপজেলায় ১৩টি, জিয়ানগর উপজেলায় ৮টি, কাউখালীতে ১১টি, স্বরূপকাঠিতে ১২টি, নাজিরপুরে ১৩টি ও ভান্ডারিয়ায় ১১টি আম আবাদের প্রদর্শনী প্লট রয়েছে। এসব প্লটে ৮০ ভাগই আম্রপলি জাতের আম আবাদ করা হযেছে।
এ বিষয়ে মঠবাড়িয়ার তুষখালী কৃষি ব্লকের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার কর্মকার বলেন, আম্রপলি গাছে পরিপূর্ণ মুকুল ধরেছে। তবে স্থানীয় জাতের আম গাছে মুকুল ধরতে শুরু করেছে। এ জাতের আম গাছ অল্প জয়গায় স্বাচ্ছন্দে বেড়ে উঠতে পারে। ১০ ধেকে ১২ ফুটের মধ্যে আম্রপলি রোপন করতে পারলে ভাল হয়। রোপনের ২/৩ বছরের মধ্যে আম্রপলি ফলন দিতে শুরু করে। আম্রপলি মূলত উচ্চ ফলনশীন হাইব্রীড জাতের আম। মিষ্টি ঘ্রাণ আর সুস্বাদু এ আম উপকূলে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
মঠবাড়িয়া উপজেলা কৃষি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে আমের মুকুল বা আমের ফলনের বিষয়ে চাষিদের মাধ্যমে কোন তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তবে আ¤্রপলি গাছে প্রচুর মুকুল ধরেছে। আম্রপলিসহ উন্নত কিছু জাত নিয়ে আম বানিজ্যিকভাবে চাষ করলে কৃষক লাভবান হবেন।
তিনি আরও জানান, আমের মুকুল ও ফলন সুরক্ষার জন্য ফুল ফোঁটার আগে ও আমের গুটির আসার পর একটি কীটনাশ ও ছত্রাক নাশক স্প্রে করার জন্য কৃষি বিভাগ হতে আম চাষীদের মাঠ পর্যায় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...