ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - পিরোজপুরে মাল্টা চাষে বিপ্লব

পিরোজপুরে মাল্টা চাষে বিপ্লব

 

খালিদ আবু, পিরোজপুর , পিরোজপুর >
বিগত কয়েক বছরে পিরোজপুরে ঘটেছে মালটা চাষের বিপ্লব। আর এই বিপ্লবকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে বড় ধরণের ঝুকি নিয়েছেন শেখ হুমায়ুন কবির (৪৫) নামের সদর উপজেলার বড় খলিশাখালী গ্রামের এক ব্যবসায়ী। তিনি নিজ গ্রামে ৫০.৮৬ একর জমির উপর গড়ে তুলেছেন দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম মালটার বাগান। তার বাগানে ২১ হাজার মালটার পাশাপাশি রয়েছে আম সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় ফলের গাছ।
গত বছর তিনি মালটার বাগান করলেও, এ বছরই তার বাগানের প্রায় এক-চতুর্থাংশ গাছে মালটা ধরেছে। আর এ থেকে এ বছরই তার বাগান খরচের অনেকটাই উঠবে বলে আশা করেন তিনি। বিদেশী মালটার তুলনায় বেশ রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায়, স্থানীয় বাজারে এ বাগানের মালটার চাহিদাও অনেক। প্রতি কেজি মালটা পাইকারী ১২০-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মালটা ১৪০- ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।Pirojpur Malta Picture-01
কম্পিউটার সায়েন্স এ লেখাপড়া করা হুমায়ুনকে একটি ঘটনা প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ মালটা তথা দেশীয় ফল চাষের ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছে। ২০১৪ সালে গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি (হজমজনিত সমস্যা) রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান তিনি। সেখানে কয়েক মাস চিকিৎসা চলাকালীন সময় সেদেশের বিষমুক্ত বিভিন্ন ফল নিশ্চিন্তে খেয়েছেন। এখান থেকেই তিনি ফল চাষের প্রতি উদ্ব্দ্ধু হন। কৃষিতে হুমায়ুনের এই ঝুকি নেওয়ার পেছনে তার স্ত্রী শামসুন্নাহারের রয়েছে বিশেষ অবদান। তিনি জানান, স্ত্রীর প্রেরণায়ই তিনি ফলের চাষের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
হুমায়ুন জানান, বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফলগুলোতে বিভিন্ন প্রকার বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় এবং এই ফলগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ। তাই দেশের মানুষকে বিষমুক্ত ফল উপহার দেওয়ার জন্য তিনি ফল চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এক্ষেত্রে তার স্ত্রী শামসুন্নাহার সার্বক্ষণিক তাকে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। সরকারি চাকরির পাশাপাশি তিনিও ফলের বাগান দেখভাল করার জন্য সময় দেন।
এ অঞ্চলে মালটা চাষকে আরও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এ বছরই টিস্যু কালচারের মাধ্যমে এক লক্ষ মালটা চারা উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। বর্তমানে তার বাগানে তিনি ৩০ জন লোকের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করেছেন।
পিরোজপুর সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রহমান জানান, অন্যান্য ফসল সর্বোচ্চ ডিএস ৪ মাত্রার লবন সহ্য করতে পারে। কিন্তু মালটা গাছ সর্বোচ্চ ১২ ডিএস মাত্রার লবন সহ্য করতে পারার কারণে লবনাক্ততার ঝুকিতে থাকা অন্যতম উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে নিশ্চিন্তে মালটা চাষ করা সম্ভব।
পিরোজপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এমডি আবুল হোসেন তালুকদার জানান, পিরোজপুরে বর্তমানে চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে মালটা চাষ করছেন। তিনি আরও জানান, বিগত কয়েক বছরে মালটার বিপ্লব ঘটায়, জেলায় বর্তমানে ৪৫ হেক্টর জমিতে ৩১৯ টি মালটার বাগান তৈরী হয়েছে। আর এই বিপ্লবের সাথে যোগ হয়েছে হুমায়ুনের করা দেশের সবচেয়ে বড় মালটা বাগান। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে মালটার কলম করা হয় বাতাবি লেবু গাছের সাথে। আর বাতাবি লেবু এ এলাকার ব্যাপক হওয়ায়, মালটার চাষও পিরোজপুর সহ সারা দেশে করা সম্ভব।
সম্প্রতি কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান হুমায়ুনের এই মালটা বাগান পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি জানান, পিরোজপুরে হুমায়ুনের মালটা বাগান সারা দেশের ফল চাষীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত এবং এটি এই মূহুর্তে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় মালটা বাগান। তিনি আরও জানান, পিরোজপুরে যেভাবে মালটার বিপ্লব ঘটছে, তা সারাদেশে সম্প্রসারিত হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও মালটা রপ্তানি করতে পারব। এছাড়া দেশীয় মালটায় সহনীয় মাত্রায় সুগার থাকায় তা ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগীরাও সহজে খেতে পারেন। তিনি আরও জানান, সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে কোন দেশীয় ফল থাকে না বললেই চলে। সে কারণে এ সময় বাজারে মালটার চাহিদাও ব্যাপক।
এদিকে অল্প সময়ের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে হুমায়ুন দম্পতির সন্তানদের নামে গড়ে তোলা ‘জয়-শুভ-তাহা মালটা বাগান’ এর সুখ্যাতি। এ বাগানটির একটি বৈশিষ্ঠ্য হল এ বাগানটি গোছালো ও পরিপাটি। সেই কারণে প্রতিদিনই তার মালটা বাগানে পিরোজপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ফলচাষী ও দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...