ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা

আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা

মো. গোলাম মোস্তফা >
সেই ৬০ এর দশকের ছোট বেলা, সাদাকালো টেলিভিশিন, একটি মাত্র চ্যানেল কয়েক ঘন্টার জন্য আমাদেরকে যে বিনোদন দিতে পারতো, তা-কি এখনকার এই রঙিন টেলিভিশন, ২৪ ঘন্টার শত শত চ্যানেল, সেই আনন্দ দিতে পারছে কি! তখন পছন্দ অপছন্দের গন্ডির সীমাবদ্ধতার মধ্যে ১টি মাত্র চ্যানেলে ঘরের ছোট বড় সকলে অনুষ্টান দেখার জন্য ১টি রুমে একত্রিত হতাম, আর মনে হতো আমরা যেন সবাই একে অপরের হৃদয়ের কত কাছাকাছি আছি।
অথচ আজ একই গৃহে বসবাস করেও ছোটো বড় সকলেই ভিন্ন ভিন্ন জগতে বিভক্ত । চারিদিকে মাত্রাহীন পছন্দ ও বিনোদনের আতিশয্যে, যাহা ঐ সময়ে তেমনটি ছিলনা । এযুগে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে তবে আমাদের মানসিক অগ্রগতি, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে তাল মিলাতে পারেনি বলেই আমরা বর্তমান প্রযুক্তির দাসে পরিণত হয়েছি । প্রযুক্তির অভিনব কলাকৌশলকে যতখানি শান্তি সৃষ্টির কাজে লাগাতে পেড়েছি, তার চেয়ে বেশি অশান্তিতে লাগিয়েছি ।
এজন্য প্রযুক্তি দায়ী নয় । এজন্য দায়ী আমাদের অবিবেচক মন ও মানসিকতা । ফলে আমরা ব্যপক ভাবে হীনমন্যতায় ভুগছি আর তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছি নানা উপায়ে; হানাহানি, রক্তারক্তি, ইভটিজিং, মাদক, সর্বশেষ সংকলন ফেসবুক ইত্যাদির মাধ্যমে । একটি মাত্র বোতাম টিপে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছি বিশ্বের নানা প্রান্তে কিন্তু পারছিনা আপনদের হৃদয়ে পৌঁছতে ? আগে মুরুব্বি/গুরুজনরা আমাদের কাছ থেকে যে সম্মান পেতেন, আমরা কি এখনকার প্রজন্মের কাছ থেকে তা পাচ্ছি ? আমরা যে শিক্ষা পেয়েছি আমাদের গুরুজন/শিক্ষকদের কাছ থেকে, তা-কি আমরা দিতে পারছি বর্তমান প্রজন্মকে ? শিক্ষকতার পেশা মহান । যারা শিক্ষা দানকে ব্রত হিসাবে নিয়েছেন সমাজের চোখে তাঁরা মর্যাদাবান । ছাত্র ছাত্রীদের কাছে তাঁরা আদর্শনীয় । শিক্ষকের আচার আচরণ দ্বারা শিক্ষার্থীরা দারুণভাবে প্রভাবিত হয় । সমাজেও এর প্রভাব পড়ে । এজন্য তাঁদের হতে হয় দায়িত্বশীল । বিশেষ করে শ্রেণী কক্ষে পড়ানোর সময়ে শিক্ষার্থীদের ভুলত্রুটি ধরার চেয়ে তাদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করার দিকেই জোর দেওয়া উচিৎ। একজন স্নেহ প্রবন শিক্ষক শ্রেণীর দুর্বল শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সহজেই পড়া আদায় করতে পারেন কিংবা দুষ্ট শিক্ষার্থীকে বশে আনতে পারেন অনায়াসেই । শিক্ষার্থীরা যদি সব জানবেই, তাহলেতো আর বিদ্যালয়ে আসার প্রয়োজন হতো না । শিক্ষার্থীদের ভুল হতে পারে, হওয়াটাই স্বাভাবিক । তাদের ভুলত্রুটি শোধরানোর দায়িত্ব শিক্ষকদেরই, এইজন্যই শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর । আমাদের সমাজে শিক্ষকরা স্নেহময়, হৃদয়বান মহৎ প্রাণের মানুষ কিন্তু এমন দু’চারজন শিক্ষকও রয়েছেন যারা শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলেন এমন কি গরু-মোষের মত পেটান । বলার অপেক্ষা রাখেনা এদের কারনেই সমাজে শিক্ষকদের বদনাম হয় । শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক হওয়া উচিৎ অত্ত্যন্ত মধুর যেখানে ভয় ভীতির কোন স্থান নেই । আমরা অভিভাবকরা এই আধুনিক জুগেও কতটুকু সচেতন হতে পেরেছি ? সন্তানদের কাছ থেকে কেবল মাত্র ভাল রেজাল্টই তাঁরা আশা করেন । ভাল রেজাল্ট পেতে হলে কি কি করনীয় সে দিকে খুব একটা নজর আছে কি ? শুধু মাত্র ভাল রেজাল্ট বা মেধাবী হলেই কি একজন ভাল ছাত্র হওয়া যায় ? চরিত্র গঠনেও মনোনিবেশ দেয়া অতিব জরুরী । সমাজে অতি মেধাবী এবং ভাল রেজাল্ট করা শিক্ষার্থীর অভাব নেই কিন্তু মেধাবী ও ভাল রেজাল্ট করার পাশাপাশি ভাল চরিত্রবান লোকের অনেক অভাব আছে । আর তাই প্রতিটি অভিভাবকেরই দায়ীত্বশীল হতে হয় । সন্তান কোথায় যাওয়া আসা করে, কার সাথে বন্ধুত্ত্ব করে, সঠিক ভাবে শ্রেনীকক্ষে যায় কি-না, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঝে মধ্যে গিয়ে শিক্ষকদের সাথে সাক্ষাৎ করে খোঁজ খবর নেয়া অতিব জরুরী । সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করতে সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপকে খেয়াল রাখতে হবে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে । চাহিদা মত সকল বিষয়ের প্রতি অভিভাবকের সঠিক নজরদারিই একজন শিক্ষার্থীকে আগামী দিনের সুযোগ্য নাগরিক তৈরিতে সহযোগিতা করতে পারে ।
অতএব, শিক্ষার্থীর মেধামননকে মূল্যায়ন করে জাতি গঠনে প্রতিটি শিক্ষক ও অভিভাবক স্ব-স্ব স্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করলে আগামী দিনে আমরা একটি সুন্দর সমাজ ও জাতি বিনির্মাণের সহযাত্রী হতে পারব বলে আশা করা যায় ।
আসুন সকলে শপথ নেই আগামী দিনের আধুনিক সমাজ বিনির্মাণে সকল বাঁধা বিপত্তিকে অতিক্রম করতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ্‌ আমাদের সহায় হউন । আমিন ।।

# লেখক: মানব সম্পদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মাছরাঙা টেলিভিশান ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...