ব্রেকিং নিউজ
Home - খোলা কলাম - মালিকের গ্যারেজে থাকি মামা”

মালিকের গ্যারেজে থাকি মামা”

সাইফুল বাতেন টিটো > আমি প্রায়-ই টাকা পয়সার সমস্যায় পরে থাকি। মাঝে মধ্যে এতো সমস্যায় পড়ি যে রিক্সা ভারাটাও থাকে না। গত বছর জুলাই আগস্টের কথা। সেদিন আমার শুটিং শেষ হতে হতে রাত এগারোটা বেজে গিয়েছিলো। আমার বাসার গেট বন্ধ হয় বারটায়। আমি যখন কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ডে নামলাম তখন এগারোটা পয়তাল্লিস। মোবাইলে বারবার সংকেত দিচ্ছে এখুনি বন্ধ হয়ে যাবে। নেমেই রিক্সা খোঁজা শুরু করলাম। হঠাত সেই মৃত প্রায় মোবাইলে মোবাইলে কল করল অসুস্থ বউ।
-আমি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথায় মরে যাচ্ছি, আমার জন্য একটা সারজেল নিয়ে এসো। কান থেকে ফোনটা নামিয়েই বন্ধ করে দিলাম। এখন ফোনটা চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে আমার আর বাসায় ঢোকার উপায় থাকবে না।
অগত্যা আমি ফার্মেসী তে গিয়ে একটি সারজেল কিনলাম। দাম দিতে গিয়ে দেখি পকেটে একটি মাত্র ২০ টাকার নোট। একটা সারজেলের দাম সাত টাকা। আমার কাছে ওষুধের দাম দেয়ার পর থাকবে মাত্র তের টাকা। এই টাকায় তো আমার বাসা পর্যন্ত রিক্সা যাবে না। আমার বাসা পর্যন্ত ভাড়া একেবারে কম করে হলেও ২০ টাকা। কখনও ২৫ টাকাও নেয়। কত বাজে বলতে পারছি না কারণ ফোন বন্ধ করে রেখেছি। তবে এখন রিক্সায় না গিয়ে হেঁটে বাসায় গেলে গেট বন্ধ পাবো। তখন সারা রাত গেট ধাক্কালেও কেউ গেট খুলবে না। একমাত্র উপায় হল দারোয়ানকে ফোন দেয়া। দারয়ান প্রায় বৃদ্ধ এক চাচা। একবার ঘুমিয়ে পড়লে তাকে ৮/১০ বার ফোন না দিলে সে আর উঠবে না। ততবার তাকে ফোন দেয়ার মতো চার্জ একদম-ই নাই। কি করি। তের টাকা নিয়ে ২০ টাকার পথের রিক্সায় তো আর উঠতে পারি না। বউকেও তো বলতে পারব না যে কিছু টাকা নিয়ে নিচে নাম। সে অসুস্থ। কি করি? ভাবছি জোরে হাটা দেবো কিনা। যে করে হোক বাসায় তো পউছাতে হবে। হটাৎ একটা রিক্সা এলো।
-কই যাবেন মামা?
-অমুক জায়গায় যাব কিন্তু একটা সমস্যা। অমুক জায়গায় ভাড়া কত নিবেন?
– ঐ তো যা ভাড়া, বিশ টাকা দেবেন।
-ঐ খানেই তো ঝামেলা মামা। আমার কাছে তো ২০ টাকা নেই। কিন্তু রিকশায় না গেলে বাসায় ঢুকতে পারব না।
-ওঠেন মামা।
-কিন্তু আমার কাছে তো আছে মাত্র তের টাকা।
– আরে আপ্নারে উঠতে কইছি ওঠেন।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে রিক্সায় উঠে পরলাম। সে রিক্সা চালাতে চালাতে বলল
-প্রতিদিন-ই তো বিশ টাকা দেন। আজ না হয় তের টাকা দিলেন।
আমি কোন কথা বললাম না। কি আর বলব?
রিক্সা আমার বাসার গেটে থামতে থামতে দেখি দারয়ান গেট লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি রিক্সা থেকে নামতে নামতে বললাম
-আপনার নাম কি ভাই?
-আমার নাম মাসুদ।
-আপনার বাড়ি কোথায় আপনার?
-বাড়ি এক সময় ছিল লালমনিরহাটে। সব টুকুই নদিতে নিয়া গেছে। এখন যেখানে রাইত হয় সেই খানে আমার বাড়ি। হা হা হা হা হা। আপনার বাড়ি কই মামা।
-পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায়। আপনি কই থাকেন এখন?
-মালিকের গ্যারেজে থাকি মামা। দুই রিক্সা এক কইরা এক পাদানিতে ইট আর ছালা দিয়া মাথা দি আর এক পাদানিতে পা রাখি। খোলা জায়গা তো মামা বাতাসে ঘুম চইলা আসে। একটু যা মশায় ডিস্টার্ব করে। আমি আমার মোবাইলটা কষ্ট করে আরেকবার অন করলাম।
-আপনার একটা ছবি তুলব মামা?
-তোলেন তোলেন।
আমি মাসুদের দুয়েকটি ছবি তুলে দারোয়ানের তাড়া খেয়ে ভিতরে ঢুকলাম। সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে উঠতে টের পেলাম আমার দুগাল বেয়ে পানি পড়ছে।
আজ মহান মে দিবস। এই পৃথিবী গড়া মাসুদের মতো কোটি কোটি নিঃস্ব মানুষে ঘামে। যাদের ঋণ শোধ করা আমাদের মতো মানুষের দ্বারা সম্ভব না। আমি মাসুদকে আর কোনদিন খুঁজে পাইনি। জানি না মাসুদ কোথায় আছে কেমন আছে।তবে মাসুদেরা ভালই থাকে। খারাপ থাকি আমরা যারা প্রতি মুহূর্তে আরও তৃপ্ত হতে চাই। মাসুদ ভাই জানি না আপনি কোথায় আছেন। এও জানি না আপনি আমার এই লেখাটি পরবেন কিনা। আপনাকে মহান মে দিবসের রক্তিম শুভেচ্ছা।
আমি আপনার কাছে আজ ঋণী। শুধু আমি-ই না পুরো দেশ আপনাদের কাছে ঋণী, ঋণী পুরো পৃথিবী।
> লেখক পরিচিতি : সাইফুল বাতেন টিটো, গণমাধ্যম কর্মী ।

Leave a Reply

x

Check Also

প্রতিবেশীর যখন করোনা পজিটিভ

মঠবাড়িয়ায় করোনা এখন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন পর্যায়ে আছে। অর্থাৎ ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে। তাই আমাদের অতিরিক্ত সাবধানতা ...