নোংরা রাজনীতির জনপদ হিসেবে, ভাঙ্গাচুড়া রাস্তার নগরী, খুন খারাবীর শহর হিসেবে মঠবাড়িয়া বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।তবু প্রিয় মঠবাড়িয়া আপনার আমার প্রাণের শহর জনপদ। এখানে নানা ঐতিহ্য আছে। সমৃদ্ধি আছে এ জনপদের। সম্ভাবনা আছে । আছে অজস্র খারাপের মাঝে ক্ষুদ্র কিছু ভালো প্রাপ্তি । যেমন ধরেন আমরা বা আমি সহ যারা প্রতিনিয়ত প্রিয় শহরময় ঘুরে বেড়াই প্রতিনিয়ত সুন্দর চোখে বেঁধে যায় মজাদার খাবার সমূহ। সাথে কিছু সাদা কালো রংয়ের মানুষের নির্ভেজাল ভালবাসা খাবারের গল্পটার প্রথমেই বলতে হবে সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারীর সেই বিখ্যাত ‘দই চিড়া’, সাথে পরিমান মতো ঘোল। অবশ্য দোকান মালিক আপনাকে ব্যাগতিগত ভাবে চিনে থাকলে ঘোল এবং দই একটু বেশিই মেলে। স্বাদ দুর্দান্ত।
পরোটা: মঠবাড়িয়ার পরোটা সাথে মুগ ডাল একটা ডিম মামলেট। সকালের বেষ্ট একটা ব্রেকফাস্ট । সন্ধ্যায় মিলবে ছানার সাথে আটা ময়দার রুটি। অন্যান্য খাবারের মধ্যে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের রসালো মিষ্টি।
অমৃতি: অমৃতির স্থানীয় পরিচিতি আমিত্তি । অমৃতির গল্পটা আরো চটকদার। হলফ করে পারি মঠবাড়িয়ার দাদাদের বানানো আমিত্তি জগৎ বিখ্যাত। টং দোকানে চটপটি এবং মাংসের চপ বিক্রিতে এক সময় সেরা ছিল হানিফ ভাই। অবশ্য এখন অনেক চটপটির দোকান হয়ে গেছে। সন্ধ্যার মুহূর্তে এখন চটপটির পল্লীতে গেলে চরম ঝালের ফুচকা, এক বাটি গরম হালিম, হালকা ক্ষিধে মিটানোর জন্য এক প্লেট তেহারি। বেশ জম্পেশ এক খাওয়া দাওয়া। এক সময় চানাচুর বিক্রিতে সেরা ছিল আমাদের নব্বই দশকের সেই পাখি ভাই। তার হাতের বানানো ‘ঘটি গরম’ ছিল এক সময়ের ট্রেন্ড। এখন অবশ্য বাজারের মধ্যে ছগির ভাইয়ের ঝালমুড়ি বেশ মজাদার। সাথে ছগির ভাইয়ের সাথে গাল-গপ্পও মারা যায়। হরেক টাইপ আচার বানাতে পারে। একবার খেলে জিব্বায় লেগে থাকবে। এক সময় পুরী, মোগলাই এর জন্য বিখ্যাত ছিল রেইনট্রিতলার টুকু জমাদ্দারের হোটেল, পরে ফিরে আসলো জিন্দেগী।
কি আর বলবো চাইনিজের যুগে আজকালকার তরুণরা পুরি মোগলাই এর দিকে ঝুঁকে না। চাইনিজ রেস্টুরেন্টের জন্য মঠবাড়িয়া আজ বেশ সমাদৃত। ক্যাফে আড্ডাতো এখন একটা ব্রান্ডে পরিণত হয়েছে। ডে নাইট পরিবর্তন হয়ে ফ্রেন্ডস ক্যাফে হয়েছে । হা হা আমাদের মাটির নিচেও রেস্টুরেন্ট আছে। সব গুলোতেই আপনি আপনার প্রিয়জনকে নিয়ে গিয়ে খুব ভালো মানের খাবার ভক্ষন করতে পারবেন। কিছু খাবার অবশ্য কালের পরিক্রমায় হারিয়ে গেছে কিংবা বিলুপ্তপ্রায়। যেমনঃ মুড়ির মোয়া, বাতাসা, সুমন ভাইয়ের দোকানের বাটারবন, হারুনের দোকানের মাংসের ঝোলের সাথে পুরি ইত্যাদি নানা টাইপ খাবার।
এবার একটু অন্য ধরনের খাবারের দিকে নজর দেয়া যাক। শীতকালের সিজনাল চিতই এবং চডা খাওয়ার জন্য যেতে পারেন কালীরহাট বাজারে খলিল ভাইর দোকানে, সাথে থাকে হরেক রকমের ভর্তা এবং ঝোল গুড়ের সাথে নারিকেল। আপনি চাইলে মাছুয়ার স্টিমার ঘাটে যেতে পারেন সাথে পাবেন নেপাল দাদার হরেক রকমের চা এবং তার বিপরীতে এক মুরব্বির হাতে বানানো পিয়াজু ও ছোলা-মুড়ি। স্টিমার ঘাটে পাবেন লিটন ভাইয়ের বিক্রি করা তাজা ডাব। মটর বাইক থাকলে যেতে পারেন ওয়াপদা দিয়ে আরেকটু সামনে ডিসি মার্কেট।সেখানের ডিম দিয়ে বানানো ঝাল মুড়িটাও কিন্তু বেষ্ট! এবার ফিরে যাই মিরুখালীর বিখ্যাত রস-মালাইয়ের দিকে। আপনি মঠবাড়ীয়ার নিবাসী হলে জীবনে একবার হলেও আপনার মিরুখালীর রস মালাই খাওয়া উচিত।
আমড়াগাছিয়ার রস মালাইটাও মজার। মিষ্টির লোভনীয় স্বাদ নিতে হলে গুলিশাখালী বাজারের শহীদ ভাইয়ের দোকানের মিষ্টি অবশ্যই খাওয়া উচিত। যারা পানপ্রেমী তাদের জন্য বান্ধবপাড়ার মাসুম ভাইয়ের পানের দোকানে যেতেই হবে। মাসুম ভাইয়ের অমলিন হাসিটাও জোশ।কথিত আছে মাসুম ভাইয়ের পান খাওয়ার জন্য মঠবাড়িয়ার জনসাধারণরা গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যায়। সোনাখালীর কাঁচা পাকা দাঁড়ির হুজুরের ঝালমুড়িও সেরা। জানখালী বাজারের আঙ্গুলগজাটাও কম মজা নয়। চা খাওয়ার জন্য আছে আমাদের বিখ্যাত কামাল ভাই, নবী ভাই, নজরুল ভাই প্রমুখ।দুধ চায়ের জন্য বিখ্যাত হলো বয়াতির হাট (সিংগা)। এই দোকানের এক কাপ চা পানের জন্য শীতের রাতেও গভীর রাত পর্যন্ত মানুষ বসে থাকে। ভাত খাওয়ার হোটেলের জন্য বর্তমানে আফজালের হোটেলই সেরা। লিখলাম যতক্ষন মনে আসলো। পরিশেষে একটা কথা বলা দরকার, খুব বেশি মঠবাড়িয়াকে নিয়ে নাক সিটকাবেন না। এটা আপনারই শহর। অনলাইন দুনিয়াতে আপনার একটি নেগিটিভ লেখনীতে হাজারো মানুষ এই শহরকে নিয়ে নেগিটিভ ভাবতে থাকে। আসুন পজেটিভ মঠবাড়িয়া গড়তে সবাই যার যার স্থান থেকে কাজ করে যাই।কারন এই শহর আপনার আমার সকলের… আমাদের যা কিছু ভালো তার প্রচারণা চালাই। শুধু খাবার নয় আমাদের শিক্ষা বিস্তার, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, তারুণ্যের সামাজিক মানবিক উদ্যোগ গুলোিআমাদের মঠবাড়িয়াকে আরও এগিয়ে নিতে পারে।
লেখক >>মিনহাজ মুঈন, শিক্ষক।