আমিন রোমান >
উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার এক হরতাল চলা বিকেলে ব্যাগ কাঁধে রাস্তার পাশে দাডিয়ে ছিলাম প্রাইভেট পড়তে যাবার উদ্দেশ্যে। হঠাৎ আর্মির পোষাক পরা এক ভদ্রলোক আমার সামনে তার বাইক থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো- -কোথায় যাবা ? -সাভার -বাইকে ওঠো আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম ! সে আমাকে সাহস দেবার জন্য বললো, ভয় পেয়ো না, আমি আর্মি। তার বাইকের পিছনে উঠে হরতালের ফাঁকা রাস্তায় হো হো করে চলছি আমরা। যাত্রা পথের এই অল্প সময়টুকুতে আমি তাকে নিয়ে যে পরিমান নেতিবাচক এবং ইতিবাচক চিন্তা করেছি তা দিয়ে একটি মহাকাব্যের প্রান দেয়া সম্ভব। সাভার বাসস্টান্ডে চৌরঙ্গী মার্কেটের পাশে এসে আমরা থামলাম। ভদ্রলোক আমাকে দাঁড়াতে বল চলে গেলেন। ফেরার সময় হাতে নিয়ে এলেন তখনকার সময়ে সবচেয়ে লোভনীয় আইসক্রিম চকচকে কাগজে মোডানা দুটি চকবার। নিজে একটা রেখে আমাকে দিলেন অন্যটি। অপরিচিত লোকের দেয়া কিছু খাওয়া উচিত না জানতাম কিন্তু আমি তো তার সাথে অনেকক্ষন ধরে পরিচিত এবং আইসক্রিমের লোভ সামলাতে পারলাম না। খাওয়ার ফাঁকেফাঁকে উনি বলে চলেন- দেখ, যেকোন প্রয়োজনে অন্যের সাহায্য নিবা, অনেকেই তোমাকে হতাশ করবে কিন্তু কেউ না কেউ ঠিকই হাত বাড়িয়ে দিবে। হরতালের সময় বাইক চালানো যেকারো সহযোগীতা তুমি নিতে পারো। হয়তো একটু লজ্জা আর ভয় কাজ করবে কিন্তু তুমি বৈধ পথে লাভবান হবে। শিখে নিলাম এবং ভুলি নাই আজও সেই পরামর্শ। সেদিনের পর থেকে আমার কাছে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট মানেই দ্রুত গতি আর স্বল্প ব্যয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো। হে শিক্ষাগুরু, জানিনা কেমন আছেন, কোথায় আছেন। যেখানেই হোক ভাল থাকুন মানুষের ভালবাসা নিয়ে। আপনাকে টুপি খোলা সালাম। বেঁচে থাকুক মনুষ্যত্ব, বেঁচে থাকুক মানুষের ভালবাসা।