ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

নূর হোসাইন মোল্লা >

( শেষ পর্ব )
আত্মসমর্পনের দিনই যুক্তরাষ্ট্র তাঁর নাগরিকদের এদেশ থেকে সড়িয়ে নেয়ার অজুহাতে সপ্তম নৌবহর প্রবেশ করে বঙ্গসাগরের দক্ষিণ প্রান্তে। কিন্তু বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের দখল থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ভারত মহাসাগরে অবস্থানরত সোভিয়েত ইউনিয়ন ৬ষ্ঠ নৌবহর যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরকে অনুসরণ করে। অবস্থা বেগতি দেখে এক ঘন্টার পর সপ্তম নৌবহর প্রত্যাহার করে।
আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সার্বিক সহায়তা করেছে। আমাদের ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাদের টেনির্ং দিয়েছে এবং ১ লাখ ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র সশস্ত্র দিয়েছে। ভারতের ৫টি রাজ্যের ৮২৫ টি স্থানের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দিয়েছে ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জন মানুষ। এরমধ্যে পশ্চিম বঙ্গে ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন, ত্রিপুরায় ১৪ লাখ ১৩ হাজার, মেঘালয় ৬ লাখ ৬৮ হাজার আসামে ৩ লাখ ১৩ হাজার এবং বিহারে ৯ হাজার। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত ৪ ডিভিশন সৈন্য দিয়েছে। এরমধ্যে যুদ্ধে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৯৭৮ জন, আহত হয়েছে ৫ হাজার ২৫ জন এবং নিখোঁজ হয়েছে ১ হাজার ৬৬২ জন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করার জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানী, সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভৃতি দেশে সফর করেন। ভারতবাসীর সাহায্য ও সহযোগিতা আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।
১৬ ডিসেম্বর এদেশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্য মুক্ত হয় বটে, কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। এদেশে ভারতীয় সৈন্য বাহিনী অবস্থান করে। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে ভারতের জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষ্ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধী বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে ১৯৭২ সালের ৬-৭ ফ্রেরুয়ারি ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান। উল্লেখ্য, পশ্চিম বাংলায় বঙ্গবন্ধুর যথেষ্ট ইমেজ ছিল। বঙ্গবন্ধুর ইমেজ কংগেসের অনুকূলে নেয়ার জন্যে মিসেস গান্ধী তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ৬ ফ্রেরুয়ারি বিকেলে কলকাতা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড ময়দানে অনুষ্ঠিত স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় তিনি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে দৃঢ়কণ্ঠে বলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি পন্ডিত জওহর লাল নেহেরুর কন্যা এবং মতিলাল নেহেরুর নাতনী। দয়া করে আমার দেশ থেকে আপনার সেনা বাহিনী দ্রুত সড়িয়ে আনুন। ১৭ মার্চ আমার জন্ম দিবস। আমার জন্ম দিবসের পূর্বেই আমার বাংলাদেশ সম্পূর্ণ স্বাধীন দেখতে চাই। মিসেস গান্ধী ১৭ মার্চের পূর্বেই তাঁর সেনা বাহিনী বাংলাদেশ থেকে সড়িয়ে নেয়ার জন্যে ভারতের সেনা বাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশাকে নির্দেশ প্রদান করেন। ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ ভারতীয় সেনা বাহিনীর একটি দল ঢাকা ষ্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেথ মুজিবুর রহমানকে বিদায়ী গার্ড অব অনার প্রদান করেন। ১৫ মার্চ ভারতীয় সেনা বাহিনীর সর্বশেষ দলটি বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায়। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাকিস্তানী হানাদার মুক্ত হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ হয় ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চ, যে দিন বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সব সৈন্য বিদায় নেয়। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকার মিত্র হিসেবে সেনা বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন আমাদের দেশ থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিতারিত করার জন্যে, দখল করার জন্যে নয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সরকার সার্বিক সহযোগিতা করেছে আমাদের ৮০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং দিয়েছে এবং এক লাখ ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্র দিয়েছে। ভারতের পাঁচটি রাজ্যের ৮২৫টি স্থানের শিবিরে আশ্রয় দিয়ে ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন মানুষ এদের মধ্যে পশ্চিম বঙ্গে ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন, ত্রিপুরায় ১৪ লাখ ১৩ হাজার, মেঘালয় ৬ লাখ ৬৮ হাজার, আসামে ৩ লাখ ১৩ হাজার এবং বিহারে ৯ হাজার । আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভার ৪ ডিভিশন সেন্য দিয়ে । এর মধ্যে যুদ্ধে নিহত হয়ে ১ হাজার ৯৭৮জন , আহত হয়েছেন ৫ হাজার ২৫জন এবং নিখোঁজ হয়েছে ১ হাজার ৬৬২ জন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভৃতি দেশ সফর করেন। ভারতবাসীর সাহায্য ও সহযোগিতা আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।

স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী হত্যা করেছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ। আগুনে পুড়িয়েছে লাখ লাখ বাড়ী-ঘর, ধ্বংস করেছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ এবং লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত করেছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ নারী। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও নারী নির্যাতন মানব ইতিহাসে একটি জঘন্যতম ঘটনা। এরূপ নিষ্ঠুর ঘটনা মানব সভ্যতার ইতিহাসে বিরল। ভিয়েতনামে মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যরা যে সব গণহত্যা করেছে তার মধ্যে মাইলাই নামক গ্রামে যে নিষ্ঠুর গণহত্যা করেছে তা বিশ্ববাসীকে নিস্তদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে অসংখ্য মাইলাই হত্যাকান্ডের বিষয়টি প্রথমে বিশ্ববাসীর নজরে আসেনি। এ নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের জন্যে এ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল তাঁদের- Political Killings by Government মন্তব্য করে যে,They do not do anything, noting. So we realized that the army is a School of Murderer.’

লেখকঃ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক

মোবাঃ ০১৭৩০-৯৩৫৮৮৭

 

 

 

 

 

 

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...