দেবদাস মজুমদার >
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় শত বছরের পুরানো কোরবানীর গরুর হাট জমে উঠেছে। উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্যিক বন্দর ভা-ারিয়া উপজেলার দক্ষিণ শিয়ালকাঠি গ্রামে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রতিবছরের মত বসছে এ গরুর হাট । সপ্তাহে দুইদিন শনি ও মঙ্গলবার গরুর হাট বসলেও প্রতিবছর ঈদউল আযহা উপলক্ষে পুরো সপ্তাহ ধরে এখানে গরুর হাট জমে ওঠে। এজন্য গরু ব্যবসায়িরা এ হাটে আলাদা করে স্টল স্থাপন করে বেচা কেনা করেন । তবে তুলনা মূলকভাবে হাটের দিনেই বেশী গরু বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। এবার এ হাটে দেশি গরুর আমদানি বেশী।
স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, প্রতি বছর ভারতীয় গরুর দখলে থাকে এ গরুর হাট । তবে এবার এ চিত্র ভিন্ন রকম। এ বছর দেশি খামারীদের গরু সংখ্যাই বেশী । এ হাটে স্থানীয় খামারীর পাশাপাশি যশোরের কেশবপুর, ঝিনাইদহ,সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে এসেছে বিক্রির জন্য আসেন। হাটে এ উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলা কাঠালিয়া, রাজাপুর, কাউখালী, মঠবাড়িয়া, জিয়ানগরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্রেতা ও বিক্রেতারদের সমাগমে হাট এখন মুখরিত।
ক্রেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটি গরুর দাম ১০ হাজার থেক ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশী। মঙ্গলবার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গরুর দাম সর্বনি¤œ ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।
পাশ্ববর্তী কাঠালিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ফারুক সিকদারের খামারের একটি গরু গতকাল বৃহস্পতিবার ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম ওঠে। তবে আড়াই লাখ টাকার নিচে বিক্রি করা হবে না বলে জানান বিক্রেতা শাখাওয়াত হোসেন অপু।
ভা-ারিয়ার গরু ব্যবসায়ী মো. শামিম মিয়া জানান, এ হাটে স্থানীয় শতাধিক জন ব্যবসায়ী ছাড়াও দুর দুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গরু-ছাগল নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। এছাড়াও কৃষকেরাও বছরের এ দিনটির অপেক্ষায় আগে থেকেই দেশি গরুর পরিচর্যা করে বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসে।
গরু ক্রেতা আবদুর রহমান জানান, হাটে খাজনা না থাকায় তিনি ৬০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনে হাট সংলগ্ন শিয়ালকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংস্কারের জন্য মাত্র ১০০ টাকা প্রদান করতে হয়েছে।
কাঠালিয়ার মহিষকান্দি গ্রামের গরু ব্যবসায়ি মো. শেরাজ হাওলাদার জানান, এ বছর ৩৫টি গরু বিক্রি করতে এনেছি। গরুর দাম একটু ভাল, এ পর্যন্ত ১০টি গরু বিক্রি হয়েছে। এ হাটে দেশী গরুর এবার আমদানী বেশী।
তিনি জানান, ভারতীয় গরু আসলে গরুর দাম অনেক কমে যাবে এবং ভারতীয় গরু আসতে শুরু করেছে। দুই তিন দিনের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে। তবে গরু ব্যবসায়ী ভারতীয় গরুর কথা স্বীকার করতে নারাজ। প্রশাসনিক ঝামেলা এরাতে ভারতীয় গরুগুলোকে তারা দেশী বলে চালিয়ে দিচ্ছেন।
এদিকে উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ ও থানা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে গরুর হাটে জাল টাকা রোধ এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশী টহল জোরদারসহ রোগাক্রান্ত গরু সনাক্ত এবং চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারী মেডিকেল ক্যাম্প এবং জাল টাকা সনাক্তে মেশিন স্থাপন করেছেন । ফলে গরুর হাটে এসে প্রতারিত কিংবা কোন ঝামেলার শিকার হতে হচ্ছেনা ক্রেতাও ও বিক্রেতাদের।