মেহেদী হাসান বাবু > ঈদ মানেই আনন্দে উদ্ভাসিত দেশ, ঈদ মানেই শান্তি সুখের পরিবেশ’।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে নতুন পোশাক! নতুন জামাকাপড় ছাড়া যেন পূর্ণতা পায় না ঈদের আনন্দ। তাই ঈদ সামনে রেখে প্রতিবারের মতো এবারও সাধ্য অনুযায়ী নিজের কিংবা পরিবার-পরিজনের জন্য নতুন পোশাক কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সবাই। ঈদের কেনাকাটাও এরই মধ্যে জমে উঠেছে সব শপিংমল গুলো কিন্তু তার গরিব আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীরা ঠিকমতো নতুন পোশাক কিনাতে পেরেছে কি না সে খবর রাখারও প্রয়োজনবোধ করে না অনেকে। অথচ আমরা জানি- ‘ঈদ মানে কোনখানে ভেদাভেদ নাই, ঈদ মানে প্রাণে প্রাণে সমান সবাই’। ঈদে ভোগ-বিলাসী মানুষদের উদ্দেশে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় বলতে হয়- ‘তোরা ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে- ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ’।
ঈদ উদযাপন করার জন্য নাড়ির টানে সবাই ছোটেন বাড়ির পানে। উদ্দেশ্য স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করা। এটা তাদের অপরাধ নয়। তারপরও বাড়িতে যেতে হলে তাদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। প্রশ্ন হচ্ছে- এই ডিজিটাল যুগে এসেও ঈদ এলেই বাড়ি যাওয়ার জন্য আমাদের ট্রেন বা বাসের ছাদে উঠতে হবে কেন? কেনই বা গাদাগাদি করে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে উঠতে হবে?
প্রতি ঈদেই শোনা যায় এবার ঘরমুখো মানুষ যেন নিরাপদে এবং সহজে বাড়ি যেতে পারেন তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের অব্যবস্থা এতটাই তীব্র যে ব্যবস্থাগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। কালোবাজারে টিকিট এখনও পাওয়া যায়। খানা-খন্দে ভরা রাস্তার দুরবস্থা এখনও দেখতে হয়। গাড়িগুলো এসব রাস্তায় পড়ে মাঝে মাঝেই গাড়িনৃত্যে মেতে ওঠে।
সড়ক-মহাসড়কে মহাযানজট। ভোগান্তিতে ঘরমুখো মানুষ।
কি অদ্ভুত আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা। যে দেশ যত উন্নত তার যোগাযোগ ব্যবস্থাও তত উন্নত।প্রতি ঈদেই মানুষের বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি ফেরার সময় অজানা আতংকে থাকতে হয়। ঠিকভাবে যেতে পারব তো? সময়মতো পৌঁছতে পারব তো? টিকিট পাব তো? লঞ্চে জায়গা পাব তো? না জানি কখন কোন দুর্ঘটনার খবর শুনতে হয়? কোন্ মায়ের বুক খালি হয়? আমাদের দেশে তো আবার ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সবাই মোটামুটি বেশ ত্বরিতগতিতে বক্তৃতা, বিবৃতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কেন হল? কিভাবে হল? কে করল? ওকে বাঁধো, একে ধরো, তদন্ত কমিটি করো। কিছুদিন পর সব শেষ। যেভাবে শেষ হয়েছে রানা প্লাজা কিংবা গত ঈদে পদ্মায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের মতো অনেক দুর্ঘটনার বেলায়। কিন্তু শেষ হয়নি সেসব পরিবারের অবস্থা, যারা দুর্ঘটনায় স্বজন হারিয়েছেন, যারা পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।তারপরও এতসব কষ্ট সহ্য করেও যানজটে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের চোখে-মুখে জ্বলজ্বল করে ঈদের আনন্দ। কখন দেখা হবে স্বজনদের সঙ্গে। একেই বলে নাড়ির টান।
ঈদে যখন আমাদের বাড়ি যেতেই হবে- তাই আমাদেরই স্বার্থে সবাইকে ঘটনা ঘটার আগেই সচেতন হতে হবে, ঘটার পরে নয়। দায়িত্ববান ব্যক্তিরা যখন দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, আইন করেও আইন প্রয়োগে ব্যর্থ হন, তখন আমাদেরই দায়িত্ববান এবং সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যাতায়াতের সময় আমাদের আর একটু সাবধানি হতে হবে।
বিশেষ করে যাতায়াতের সময় আমাদের আর একটু সাবধানি হতে হবে। কারণ ‘সাবধানের যেমন মার নেই, সাবধানির তেমন হার নেই।’ বাস-ট্রেনের ছাদে যেমন ওঠা যাবে না, তেমনি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লঞ্চে ওঠা থেকেও আমাদের বিরত থাকতে হবে, অন্যদেরও বিরত রাখতে হবে। কারণ সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের জীবন। আর একটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকগুলো জীবন। তাই কোনো কোনো মহলের অতি লাভ, অতি লোভ এবং সংশ্লিষ্ট মহলের উদাসীনতায় কোনো দুর্ঘটনা যেন কোনো ঈদেই বিষাদের ছাঁয়া ফেলতে না পারে সেজন্য আমাদের সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।
ঘরমুখো মানুষেরা নিরাপদে পৌঁছে যাক তাদের আপন আপন ঠিকানায়, প্রিয় আপনজনের কাছে। আবার ঈদ শেষে নিরাপদে ফিরে আসুক যার যার কর্মস্থলে।
ঈদ হোক ভেদাভেদ ভোলা মিলনের আনন্দে মুখর।
সবাইকে ঈদ মোবারক।