ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - লিবিয়ায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটার ৩ শ্রমিক নিহত, পরিবারে শোকের মাতম

লিবিয়ায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটার ৩ শ্রমিক নিহত, পরিবারে শোকের মাতম

দেবদাস মজুমদার > লিবিয়ায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বরগুনার পাথরঘাটার প্রবাসী দুই শ্রমিক ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার প্রবাসী শ্রমিকসহ মোট তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ আরও দুই শ্রমিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত বুধবার সন্ধ্যায় আল–জাওয়াইয়া শহরের অদূরে মুত্তত এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারে এখন শোকের মাতম চলছে।

নিহত তিন শ্রমিকের মধ্যে মোস্তফা কামালের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ মিঠাখালী গ্রামে। তিনি মৃত ওয়ায়েদ হাওলাদারের ছেলে। অপর নিহত দুই শ্রমিক হলেন- বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার উত্তর কাঠালতলী গ্রামের মো. আলী মিস্ত্রীর ছেলে মো. হানিফা ও মো. আফজাল জোমাদ্দারের ছেলে মো. বেলায়েত হোসেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে মঠবাড়িয়ার নিহত মোস্তফার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানের আহাজারি। অপরদিকে শোকার্ত গ্রামবাসী নিহত পরিবারের স্বজনদের সান্তনা দেন। এ সময় নিহত মোস্তফার স্ত্রী খাদিজা আক্তার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, ‘তার (স্বামী) লগে গত শুক্রবার (১৭ জুন) মোবাইলে শেষ কথা হইছে। জানাইছিল সে ভালই আছে। বুধবার রাইতে কে যেন হ্যার মোবাইল দিয়া জানাইছে আমার স্বামী গ্যাসের আগুনে পুইড়া মারা গেছে। আল্লা এ তোমার কেমন বিচার । এ্যহন মাছুম দুই সন্তান নিয়া আমি কেমনে বাঁচমু।’

শোকার্ত খাদিজা বিলাপ করে বলেন, জীবিত আর পামুনা তারে। শেষ দেখার জন্য আপনেরা মোর স্বামীর লাশটা বাড়িতে আইন্যা দেন।

মোস্তফার বড় ভাই কৃষক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, মোস্তফাকে গত দেড় বছর আগে গ্রামের কয়েকজনের কাছ থেকে ধার দেনা ও জমি বিক্রি করে লিবিয়ায় পাঠাই। সেখানে সে শ্রমিকের কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছিল। কিছু দেনা পরিশোধও করছিল। এমন মুহূর্তে ভাইয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। পাওনাদার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে বাড়িতে আসছে। আমার ভাইতো আর আসবে না ।

তিনি নিহত মোস্তফার লাশ লিবিয়া থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, রক্তের ভাই হারানোর বেদনা কেমনে সইব। অপরদিকে পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম রিপন নিহত ও চিকিৎসাধীন নাগরিকদের দেশে আনার জন্য দাবি জানান।

এ দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে মঠবাড়িয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম ফারুক হাসান জানান, বিষয়টি খুব মর্মান্তিক। মোস্তফার মৃত্যুর বিষয়টি শুক্রবার রাতে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। এখন তার লাশ কিভাবে দেশের বাড়িতে ফিরে আসবে তা সরকারের উদ্যোগের বিষয়।

এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, লিবিয়্য়ায় মর্মান্তিকভাবে কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর শুনেছি। সেখানে মঠবাড়িয়ার এক শ্রমিকও নিহত হয়েছে। তবে এ মূহুর্তে নিহত ওই শ্রমিকদের কোন তথ্য থানা প্রশাসনের কাছে নেই।

নিহত পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় শ্রমিকরা নিজেদের ঘরে গ্যাসের চুলা জ্বালানোর সময়ে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে এবং কক্ষে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে বসবাসরত মঠবাড়িয়া প্রবাসী শ্রমিক বেলাল হোসেন, চুন্নু মিয়া, মো. মোস্তফা, দুলাল খান এবং আবু হানিফের শরীর আগুনে ঝলসে যায়। পরে স্থানীয় অন্যান্য শ্রমিকরা এসে তাঁদের উদ্ধার করে আল-জাওয়াইয়া সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রোগীদের অবস্থার অবনতি হলে তাদের দ্রুত ত্রিপলি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মো. মোস্তফা, বেলায়েত হোসেন এবং আবু হানিফ মারা যান। অপর দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...