ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - বিবিচিনি শাহী মসজিদ উপকূলের ঐতিহ্য

বিবিচিনি শাহী মসজিদ উপকূলের ঐতিহ্য

দেবদাস মজুমদার >
কালের সাক্ষি বিবিচিনি শাহী মসজিদ। আয়তনে বৃহৎ না হলেও প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পুরোনো এই মসজিদ । মোঘল স্থাপত্য রীতির নিদর্শন। উপকূলীয় বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা সদর থেকে ১০ কি. মি. দূরে বিবিচিনি ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীর বিবিচিনি শাহী মসজিদটি এখনও কালে সাক্ষ্য বহন করে চলেছে ।
জনশ্রুতি মতে ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (র.) পারস্য থেকে এ এলাকায় ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে বেতাগীর বিবিচিনিতে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাঁর কন্যা চিনিবিবি এবং ইছাবিবির নামানুসারে বিবিচিনি গ্রামের নামকরণ করা হয়। আর মসজিদটি নির্মাণের পর নাম রাখা হয় বিবিচিনি শাহী মসজিদ। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট এবং প্রস্থ ৩৩ ফুট। চারদিকের দেয়ালগুলো ৬ ফুট চওড়া এবং এর গাঁথুনিতে ব্যবহৃত ইটগুলো মোগল আমলের ইটের মাপের সমান। মসজিটির বিশেষত এই যে এটি সমতল ভূমিতে একটি উচু টিলার ওপর নির্মিত।
সমতল ভূমি থেকে মসজিদের স্থান বা ভিত্তিভূমিটি প্রায় ৩০ ফুট টিলার উপর অবস্থিত। তবে তার উপরও প্রায় ২৫ ফুট উঁচুতে রয়েছে মসজিদের মূল স্থাপনটি। এ ছাড়া মসজিদের পাশে রয়েছে ৩টি কবর। কবর ৩টি সাধারণ কবরের মতো হলেও লম্বা ১৫/১৬ হাত এবং এটিই এই কবরগুলোর ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য।
স্থানীয়দের মতে সেখানে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (র.) এবং তার কন্যা চিনিবিবি এবং ইছাবিবি। সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ (র.) পরলোকগমন করেন এবং মসজিদের পার্শ্বে তাকে সমাহিত করা হয়। উল্লেখ্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক মসজিদটি তালিকাভুক্ত করে ইতোমধ্যেই প্রাচীন এই মসজিদটির সংস্কার করা হয়েছে।
এই শাহী মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক ঘটনা, অনেক ইতিহাস। স্থানীয় লোকজনের জল্পনা কল্পনার যেনো শেষ নেই এই মসজিদকে নিয়ে। অনেকেই মনে করেন, এই মসজিদটি তৈরি করেছিল পরীরা। তাই কেউ কেউ এই মসজিদকে পরীর মসজিদ বলেও জানে। এই ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যার নাম এই মসজিদের নামে সঙ্গে একই সুতোয় গাঁথা তিনি হলেন- মহান আধ্যাত্মিক সাধনার শক্তিমান পুরুষ হযরত শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ্। ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে সুদূর পারস্য থেকে তিনি ইসলাম প্রচারের উদ্দেশে দিল্লীতে আসেন। ওই সময় মোঘল সম্রাট শাহজাহানের ছেলে শাহ্ সুজা বঙ্গ দেশের সুবাদার এই মহান সাধকের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। কয়েক জন শিষ্যকে সঙ্গে নিয়ে এই আধ্যাত্মিক সাধক দক্ষিণ বাংলার বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলা বিবিচিনি গ্রামে এসে আস্তানা গাড়েন। পরবর্তীতে তার শিষ্য শাহ্ সুজার অনুরোধে এই গ্রামেই তিনি এক গম্বুজ বিশিষ্ট শাহী মসজিদটি নির্মাণ করেন। তৎকালীন সময় এই সাধক পুরুষ শাহ্ নেয়ামত উল্লাহর অনেক অলৌকিক কীর্তি দেখে বিভিন্ন ধর্মাবম্বীর মানুষ তার কাছে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা লাভ করে। কথিত আছে, তখনকার সময় বিষখালী নদীর পানি পানযোগ্য ছিলনা কারণ পানি ছিল প্রচুর লবনাক্ত। তিনি মানুষের এই লবনাক্ত পানি পানের কষ্টের কথা ভেবে তার আধ্যাত্মিক সাধনার আশ্চর্য তস্বীহ্টি বিষখালির পানিতে ধুয়ে দিলে লবনাক্ত পানি পরিণত হয় মিঠা পানিতে এবং পানি পানের উপযোগী হয়। আজ পর্যন্ত সেই পানি একই অবস্থায় আছে। ওই সময় বিষখালী নদীতে ছিল কুমিরের অবাধ বিচরণ। তার আলৌকিক ক্ষমতার প্রভাবে বিবিচিনি সংলগ্ন বিষখালী নদী এলাকায় কোনো কুমির আসতো না। এই নিয়ম আজও বলবতৎ আছে। এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক আশ্চর্য ঘটনা। প্রতিদিন দূর-দূরন্ত থেকে ছুটে আসে অসংখ্য নারী-পুরুষ তাদের মানত পূরণ করার জন্য। তাদের কাছ থেকে জানা জায়, এখানে মানত করলেই করলেই নাকি তাদের মনবাসনা পূর্ণ হয়। অগনিত মানুষ এসে এখানে নামাজ আদায় করে। এবং মসজিদটি পরিভ্রমস করে স্পর্শ করে জীবনের সংকট মোচনে প্রার্শনা করেন। মসজিদের উত্তর পাশেই রয়েছে ছোট্ট একটি টিনের ঘর। এই ঘরে নারীরা তাদের মানতের নামাজ আদায় করেন। মসজিদের সদর দরজার পাশেই রয়েছে একটি মানতের বাক্স। এই বাক্সতে প্রতিদিন মানুষ এসে তাদের মানতের টাকা ফেলেন। মসজিদ পরিচালনার জন্য একটি কার্যকরী কমিটি আছে। কমিটির সভাপতি বেতাগী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। তার নির্দেশে প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে মানতের বাক্স খোলা হয়।
মোঘল স্থাপত্যের গৌরব ও মর্যাদার সাক্ষী হিসেবে ইতিহাস খ্যাত বৃটেন যাদুঘরে এই শাহী মসজিদের নাম উল্লেখ আছে। যা পাঁচশত বছর আগের নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অনেক বছর এই ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ সংস্কারবিহীন অবস্থায় থাকার পর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য একজন কেয়ার টেকার নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে তিনিই এই মসজিদের দেখাশুনা করছেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সালে মসজিদের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
উপকূলের ঐতিহ্য বিবিচিনি শাহী মসজিদটিরিআরও উন্নয়ন করা দরকার।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় বিএনপির নির্বাচন বিরোধী প্রচারপত্র বিলি

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামীলীগের একতরফা নির্বাচন বন্ধের দাবী ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না ...