ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - বিষখালীর বিরল বামোশ

বিষখালীর বিরল বামোশ

দেবদাস মজুমদার > বিচিত্র মাছ বামোশ। কুুঁচে সদৃশ বিশালাকৃতির এ মাছটির শরীর বেশ তেলতেলে। মাছটি বেশ শক্তিশালীও । হাতে তুলে ধরে রাখা মুশকিল হাত ফসকে যায় ।
উপকূলীয় বরগুনার বামনার বিষখালী নদীতে সম্প্রতি এক জেলের জালে ধরা পড়েছিল বিরল প্রজাতির এ বামোশ মাছ। প্রায় সাড়ে ছয় কেজি ওজনের বামোশ মাছটি বাইন অথবা কুচে সদৃশ হলেও এটি খুব সুস্বাদু ও দামি মাছ বলে সনাক্ত করেছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। সম্প্রতি বিষখালী নদীতে উপজেলার রামনা গ্রামের জেলে বাদল হাওলাদারের জালে মাছটি ধরা পড়ে। সাড়ে ছয় কেজি ওজনের মাছটি জেলে বাদল হাওলাদার রামনা লঞ্চঘাট বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসলে মাছটি ঘিরে উৎসুক মানুষের ভীড় জমে। এক হাজার টাকায় স্থানীয় এক ক্রেতা মাছটি কিনে নেন।
রামনা গ্রামের জেলে বাদল হাওলাদার জানান, তিনি এর আগে বিষখালী নদীতে আরও একটি বামোশ মাছ পেয়েছিলেন। তবে সে মাছটি ছিল ছোট আকৃতির। এতবড় বামোশ এর আগে তিনি আর দেখেননি। মাছটি খুব দামি ও স্বাদের। তেলতেলে শরীরের মাছটি হাতে ধরে রাখা মুশকিল। বেশ শক্তিশালী মাছটি।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, বামোশ মাছ উপকূলের নদ নদীতে বেশ বিরল। বাংলা নাম : বামোশ,বাউস,বানেহারা, English name : Indian-longfin cel, Local Name : Bamosh, Baush, Banehara, Scientific Name : Anguilla bengalensis .
বামোশ মাছের দেহ বেশ লম্বা । মাছটি বেশ শক্তিশালী এবং নলাকার। এর চোখ মুখের কোনে অবস্থিত। পৃষ্ঠীয় পাখনা পায়ূ পাখনার বেশ অগ্রে অবস্থিত। পৃষ্ঠীয় ও পায়ূ পাখনা সুগঠিত,পুচ্ছ পাখনার সাথে সম্মিলিত। বক্ষ পাখনা খাটো,মাথার অর্ধেক মাত্র। আঁইশ ছোট,পার্শ্বরেখা স্পষ্ট। দেহের উপরিভাগ বাদামী, পার্শ্বদেশ ও নিম্নভাগ হলদে। পৃষ্ঠদেশ ঘন কালো দাগ ও ছোপযুক্ত। এটি একটি দামি মাছ। এটি সাগর অভিসারী ,প্রজননের সময় সময় সাগরে অভিপ্রয়াণ করে । বালিতে বসবাসকারী ছোট ছোট অমেরুদ-ী প্রাণী, মাছ ইত্যাদি খেয়ে থাকে। মাছটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১১৮ সেমি হয়। ভারতের অঞ্চলভেদে বামোশ মাছের পরিচিতি থুমবি, মালুমগুলু এবং আহির নামে।
আন্তর্জাতিক খাদ্য ও কৃষি(FAO) সংস্থার ২০০৯ সালের তথ্য মতে, বামোশ মাছ ৮০ হাজার টনের ওপরে সারা বিশ্বে বাৎসরিক রপ্তানী হয়। এর মধ্যে চীন ও তাইওয়ান ৭৫ ভাগ রপ্তানী করে। যার ৭৫ ভাগের কাছাকাছি জাপান আমদানী করে। জাপানে এ মাছের বিশাল একটা বাণিজ্যিক বাজার রয়েছে।

বাংলাদেশের মৎস্য গবেষক মো. শফি এবং মো. কুদ্দুসের যৌথ গবেষণার(২০০১ সাল) তথ্য মতে, বামোশ মাছ এক লাখ পর্যন্ত ডিম পাড়ে। বাংলাদেশে ভৈরব সেতুর কাছের নদে সবচেয়ে বেশী মাছ ধরা পড়ে।

বামনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রাজিউল ইসলাম জানান,পুরুষ বামোশ সাত কেজি ওজনের হতে পারে। বিষখালীতে ধরা পড়া বামোশটি সাড়ে ছয় কেজি ওজনের। পূর্ণাঙ্গ বামোশ পাওয়া এখন অনেকটাই বিরল। কারণ এ প্রজাতির মাছ আমাদের উপকূলের নদ নদীতে হর হামেশা দেখা মেলেনা। আমাদের দেশে কংস, সোমেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও কর্ণফুলিতে বামোশ মাছ মেলে। তবে ঠিক আগের মত নয়। ১০-১৫ বছর বয়সী পুরুষ বামোশ সাগড়ে যায় সেখানে ব্রিডিং শেষে সম্ভবত মারা যায়। এরা ছোট ছোট শামুক,ঝিনুক, চিংড়ি, কেঁচো ও পোকা মাকড় খেয়ে বাঁচে। আমাদের দেশে এ মাছ বানেহারা, বামোশ, বাও বায়েম, বোয়া বায়েম ও তেলকমা নামে অঞ্চলভেদে পরিচিত। মাছটি বেশ দামি ও সুস্বাদু। তিনি আরও জানান, বামোশ মাছের শ্লেষ্মা ও গমের আটা সহযোগে আর্থাইটিস রোগের ঔষধ তৈরী হয়। এছাড়া চামড়া শিল্পে এ মাছের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। তবে এ প্রজাতির মাছ এখন অনেকটাই বিলুপ্তির দিকে। আমাদের দেশে এ মাছটির যথাযথ গবেষণা প্রয়োজন।

সূত্র : বারসিক নিউজ ডটকম

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় বিএনপির নির্বাচন বিরোধী প্রচারপত্র বিলি

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামীলীগের একতরফা নির্বাচন বন্ধের দাবী ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না ...