ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - আপনার সন্তানকে ভুভুজেলা থেকে দূরে রাখুন— সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাওজাল

আপনার সন্তানকে ভুভুজেলা থেকে দূরে রাখুন— সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাওজাল

ইদানীং বাঙালির একান্ত নিজস্ব ঐতিহ্যের এই উৎসবটিতে বহিরাগত সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই কলুষিত হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীতে নববর্ষের উৎসবে যন্ত্রণা হয়ে আসে আফ্রিকা থেকে আমদানি করা কর্কশ বাঁশি ভুভুজেলা। ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্যমেলায়ও আজ নলখাগড়া বা বাঁশের বাঁশির জায়গা দখল করেছে ক্ষতিকর প্লাস্টিকে তৈরি এ বাঁশি। এর শব্দে বৈশাখী মেলায় যেন বাজ পড়ে! শব্দ ও পরিবেশ দূষণসহ নারীর শ্লীনতাহানী, অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে এই বিশেষ বাঁশিটির বিরুদ্ধে। তাই আসন্ন নববর্ষে ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে এখন থেকে সোচ্চার হয়েছে অনেকে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ইভেন্টও খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ‘ভুভুজেলা মুক্ত পহেলা বৈশাখ চাই ’ নামের একটি ফেসবুক ইভেন্ট বেশ সমর্থন পেয়েছে। পেজটিতে লেখা হয়েছে, ‘এই নববর্ষে আমরা ভুভুজেলা নিষিদ্ধ চাই। নববর্ষের এখনো বাকি এক মাসের উপর। অনেকের কাছে বিষয়টা শীতকালে সারিগানের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু সত্যি কথাটা হলো, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। আর ভুভুজেলার বিষ তো আমরা গত পাঁচ-ছয় বছরেই টের পেয়েছি। কেবল নারী নিপীড়ন নয়, ভুভুজেলার দুঃসহ শব্দদূষণে বিরক্ত হননি এমন মানুষ কমই আছেন। তাই, আসুন এখন থেকেই উৎসবে ভুভুজেলা নিষিদ্ধে সোচ্চার হই। নাহলে হয়তো বড়কর্তাদের কান পর্যন্ত আমাদের আওয়াজ পৌঁছাবে না’।

২ সেখানে আরো লেখা হয়েছে- ‘বিজাতীয় সংস্কৃতির বিকট ভুভুজেলা চাইনা, আমাদের বাঁশের বাঁশিই আমাদের প্রাণের সুর। জঙ্গলে যোগাযোগের জন্য যার উৎপত্তি, এই নগরে তার দরকার নাই। ভুভুজেলা মুক্ত উৎসব চাই। নববর্ষে ভুভুজেলা নিষিদ্ধ হোক’। এছাড়া ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী নির্দলীয় ছাত্র জোট’- নামের একটি ফেসবুক ফ্যান পেজে ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবিতে লেখা হয়েছে বিভিন্ন স্লোগান ও স্ট্যাটাস। পেজটিতে লেখা হয়েছে- ‘সামনেই পহেলা বৈশাখ। নারী নিপীড়নসহ যেকোনো হয়রানি ও শব্দ দূষণ রুখতে এখনই সোচ্চার হোন। ভুভুজেলা কিনবেন না, কেউ বাজালে তাকে নিরুৎসাহিত করুন’। গত বছরের এই ভুভুজেলার অসহনীয় চিত্রপটে দেখা যায়- অসহ্য, বিরক্তিকর এই বাঁশির কর্কশ সুর রমনার বটমূল থেকে টিএসসি পর্যন্ত লাখো মানুষকে চরম যন্ত্রণায় ফেলে। পাশের ব্যক্তিটির কথাও শোনা যাচ্ছিল না এর অত্যাচারে। এদিকে বিজাতীয় সংস্কৃতির ভিড়ে বাঙালি সংস্কৃতির ডুগডুগি, বাঁশি, ঢোল, মাটির তৈজষপত্র ও খেলনা বিক্রি হয়েছে একেবারেই কম। আবার টিএসসিতে নারীদের অর্ধনগ্ন করার সময় আশে পাশের মানুষসহ সবার চিৎকার যাতে না শোনা যায় সেখানে পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন মিলে বিকট শব্দে ভুভুজেলা বাজিয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশ পায়। আর ভুভুজেলা নিষিদ্ধের দাবি ওঠে গত বছর থেকেই। ব্রাজিল এবং অন্যান্য লাতিন আমেরিকার দেশে অনেক আগে দূরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের ডাকার জন্য ভুভুজেলা ব্যবহার করা হতো। ভুভুজেলা নামের এই অদ্ভুত যন্ত্রটি ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপে প্রথম দেখা যায়। বাঁশিটি সকল দর্শকদের আনন্দের খোরাক হিসেবে তখন ব্যবহার শুরু হয়েছিল।লাতিন আমেরিকায় এর উৎপত্তি হলেও ব্রাজিলসহ কিছু দেশে ভুভুজেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।এছাড়া রিয়েল মাদ্রিদসহ বিখ্যাত ফুটবল ক্লাবগুলো এই শব্দের বিরুদ্ধে

৩ উৎপত্তি ভুভুজেলা শব্দটির উৎপত্তি অজানা এবং এর উদ্ভাবকের পরিচয়ও বিরোধপূর্ণ। ২০১০ সালের শুরুর দিকে এ নিয়ে আরও বিতর্কের সূচনা হয়। ফ্রেডি সাদ্দাম মাকে দাবি করেন যে তিনিই সর্বপ্রথম ১৯৬৫ সালে সাইকেলের ভেঁপু থেকে ভুভুজেলা উদ্ভাবন করেন এবং এর সপক্ষে ১৯৭০,১৯৮০ ,১৯৯০ দশকে তোলা কিছু ছবিও পেশ করেন। [৫] প্লাস্টিক কোম্পানী মাসিনসিড্যান (Masincedane) দাবি করে তারাই সর্বপ্রথম ভুভুজেলা উদ্ভাবন করেন। [৬] এদিকে নাজারেথ ব্যাপ্টিস্ট চার্চও দাবি করে ভুভুজেলা তাদের চার্চের। [৭] আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভুভুজেলার ব্যবহার বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ভুভুজেলার অপব্যবহারের কারণ দেখিয়ে স্টেডিয়াম থেকে তা নিষিদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবল প্রশাসন একে দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবলের অঙ্গ হিসেবে উপস্থাপন করে এবং শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন মহলের বিরোধীতা সত্ত্বেও ফিফা ২০০৯ কনফেডারেশন কাপ এবং ২০১০ বিশ্বকাপ ফুটবলে ভুভুজেলা ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

৪ ভুভুজেলা ( ইংরেজি : Vuvuzela) এক ধরনের শিঙ্গা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র যা লেপাটাটা ( সোয়ানা ভাষায়) এবং ইংরেজি ভাষায় প্লাস্টিক ট্রাম্পেট নামেও পরিচিত। এটি সাধারণত ৬৫ সেমি (২.১৩ ফিট) লম্বা এবং প্লাস্টিকের তৈরি হয়ে থাকে যা উচ্চস্বরে বিকট সুর উৎপন্ন করে । ব্রাজিল এবং অন্যান্য ল্যাটিন আমেরিকান দেশসমূহে এ ধরনেরই কমেটা নামক অপর একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানো হয়ে থাকে। দূরবর্তী গ্রামের গ্রামবাসীদের ডাকার জন্য পূর্বে ভুভুজেলা ব্যবহার করা হত। [১] এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন ফুটবল ম্যাচে দর্শকদের মাঝে ভুভুজেলার ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় এবং এ কারণে এটি দক্ষিণ আফ্রিকান ফুটবলের প্রতীকে পরিণত হয়েছে। [২] ভুভুজেলা বাদ্যযন্ত্রটির তীব্র ও জোরালো আওয়াজ এরই মধ্যে ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। [২] তবে ভুভুজেলা তার তীব্র আওয়াজের কারণে এরই মধ্যে সমালোচনারও সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এর জোরালো আওয়াজ মানুষের শ্রবণ শক্তি হারানোর কারণ হতে পারে। [৩] একারণে নতুন ধরনের ভুভুজেলা বাজারে ছাড়া হয়েছে যা পূর্বের চাইতে ২০ ডেসিবল কম শব্দ উৎপন্ন করে।
>প্রতিবেদনের ছবি তুলেছেন : নজরুল ইসলাম

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় বিএনপির নির্বাচন বিরোধী প্রচারপত্র বিলি

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় আওয়ামীলীগের একতরফা নির্বাচন বন্ধের দাবী ও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না ...