ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি গণহত্যা দিবস আজ

মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি গণহত্যা দিবস আজ

মো. বেল্লাল হোসাইন <>:

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সূর্যমণি গণহত্যা দিবস আজ রবিবার (৬ অক্টোবর) । এইদিন ভোর রাতে উপজেলার আঙ্গুলকাটা গ্রামের ২৫ হিন্দু বাঙালীকে এক দড়িতে বেঁধে স্থানীয় রাজাকার বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। সূর্যমণি গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার মুক্তিযোদ্ধা, ২৫ শহীদ পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা শোকযাত্রা করে মঠবাড়িয়া শহর হতে আড়াই কিলোমিটার দূরে টিকিকাটা ইউনিয়নের সূর্যমণি বেরিবাঁধের(বর্তমান সøুইজগেট)শহীদ বেদীতে সমবেত হবেন। এ উপলক্ষে শহীদ পরিবারের উদ্যোগে শোকযাত্রা, শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও স্মরণ সভার অনুষ্ঠিত হবে। ‌এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও শহীদ পরিবার সূত্রে জানাগেছে, ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর এই দিন ভোর রাতে মঠবাড়িয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত আঙ্গুলকাটা গ্রাম থেকে ৩৭ জন নিরাপরাধ হিন্দু বাঙালীকে ধরে নিয়ে যায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী। ওই রাতে ৫০/৬০ জনের সংগঠিত একটি রাজাকার বাহিনী ওই গ্রামের হানা দিয়ে ব্যপক ধরপাকড় ও লুটপাট চালায়। ৩৭ জন হিন্দু বাঙালীকে ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি থেকে ধরে এনে তাঁদের মধ্যে ৭ জনকে রাতভর থানায় আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। এদের মধ্যে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরের দিন ৭ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাকী ৩০ জনকে মঠবাড়িয়া শহর হতে আড়াই কিলোটিার দূরে সূর্যমণি বেড়িবাঁধ সংলগ্ন খালের পাড়ে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় ভগ্যক্রমে গুলি খেয়ে বেঁচে যায় পাঁচ জন বেঁচে গেলে বাকী ২৫ জন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ,সমর্থন ও মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দানের অপরাধে স্বাধীনতা বিরোধীরা তাঁদের ওপর এ নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়।

স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও ২৫ শহীদের রক্তে রঞ্জিত সূর্যমনি গ্রামে ওই বধ্যভূমিতে আজও আজও কোন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। এমনকি এই জীবনদানের যথাযথ স্বীকৃতিও পায়নি শহীদ পরিবারগুলো। তবে ওই স্থানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করার জন্য ২০০১ সালের ৭ জানুয়ারী তৎকালীন বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আ.খ.ম জাহাঙ্গীর হোসেন ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ।
সেদিন যাঁরা সূর্যমণিতে শহীদ হয়েছিলেন তাঁরা হলেন, জিতেন্দ্র নাথ মিত্র, শৈলেন মিত্র, বিনোদ বিহারী, ফনী ভূষন মিত্র, ঝন্টু মিত্র, নগেন কির্ত্তুনীয়া, অমল মিত্র, সুধাংশ হালদার, বিরাংশু হালদার, মধুসুদন হালদার, প্রিয়নাথ হালদার, সীতানাথ হাওলাদার, অন্নদা হাওলাদার, অনিল হাওলাদার, হিমাংশু মাঝি, জিতেন মাঝি, সুধীর মাষ্টার, অমেলেন্দু হাওলাদার, অচীন মিত্র, অরুণ মিত্র, নিরোধ পাইক ও কমল মন্ডল ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।

এ সময় স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে আটক হয়ে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা সুনীল মিত্র বলেন,ওই রাতে আমার বাবা ও ছোটভাইকে সহ আমাকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আমার বাবা ও ভাইকে থানায় আটক করে নির্যাতনের পর ছেড়ে দেওয়া হলে আমার নিরাপরাধ ছোটভাই অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শৈলেন মিত্রকে স্বাধীনতা বিরোধীরা সূর্যমণিতে গুলি করে হত্যা করে।
শহীদ বিরাংশু কুমার হালদারের ছেলে বিকাশ চন্দ্র হালদার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা স্বজনহারা হয়েছি। তবে শহীদ পরিবারগুরোর প্রতি কেউ নজর দেয়নি । গণহত্যার স্থানে আজও স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত হলনা। এই উপক্ষো দু:খজনক।

সূর্যমণি বধ্যভূমি সুরক্ষা কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা পরিমল চন্দ্র হালদার সূর্যমণি গণহত্যায় ২৫ শহীদের স্বীকৃতি ও ওই স্থানে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন,মুক্তিযুদ্ধের এত ত্যাগের পরও শহীদ পরিবার ও গণহত্যার স্থান উপেক্ষিত থাকা দুঃখজনক।

এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মো. বাচ্চু মিয়া আকন বলেন,স্বাধীনতার এত বছর পরেও এসব শহীদের স্বীকৃতি না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এ জীবনদানের স্বীকৃতি ও সূর্যমণি বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ হতে দাবি জানাচ্ছি।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...