ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - পৌরসভার তুলনায় ঢাকা সিটিতে মেয়রের ক্ষমতা কম

পৌরসভার তুলনায় ঢাকা সিটিতে মেয়রের ক্ষমতা কম

পদের দিক থেকে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়রদের পদমর্যাদা বড় হলেও কাজের এখতিয়ারে দেশের যে কোনো পৌর মেয়রের চেয়ে তাদের ক্ষমতা কম। আর আইনের মাধ্যমেই পৌরসভার তুলনায় ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান সিটি করপোরেশনের ক্ষমতা কমেছে।

স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর ৫০ ধারাতে পৌরসভার দায়িত্ব, কার্যাবলী ও কমিটি গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে। এই ধারার উপধারা- (১)-এ পৌরসভার মূল দায়িত্বের বর্ণনা রয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘(ক) স্ব-স্ব এলাকাভুক্ত নাগরিকগণের এই অধ্যাদেশ ও আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিধান অনুসারে সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা প্রদান করা, (খ) পৌর প্রশাসন ও সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা, (গ) পৌর এলাকায় নাগরিকগণের পৌরসেবা প্রদানের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ইমারত নিয়ন্ত্রণসহ নগর উন্নয়ন পরিচালনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, (ঘ) নাগরিক নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষা করা৷’

উপধারা-১ নিশ্চিত করতে উপধারা ২-এ পৌরসভার কার্যাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে- ‘(ক) আবাসিক, শিল্প এবং বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, (খ) পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা করা, (গ) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, (ঘ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন, (ঙ) যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে রাস্তা, ফুটপাথ, জনসাধারণের চলাচল, যাত্রী এবং মালামালের সুবিধার্থে টার্মিনাল নির্মাণ, (চ) জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯নং আইন) এ প্রদত্ত কার্যাবলী, (ছ) পরিবহন ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা, পথচারীদের সুবিধার্থে যাত্রী ছাউনী, সড়ক বাতি, যানবাহনের পার্কিং স্থান এবং বাসস্ট্যান্ড বা বাসস্টপ এর ব্যবস্থা করা, (জ) নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, (ঝ) বাজার ও কসাইখানা স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা, (ঞ) শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন, আমোদ প্রমোদ এবং সাংস্কৃতিক সুযোগ সৃষ্টি ও প্রসারে সহায়তা, পৌর এলাকার সৌন্দর্য্ বৃদ্ধি এবং (ট) আইন, বিধি, প্রবিধি, উপ-আইন বা সরকার প্রদত্ত আদেশ দ্বারা অর্পিত অন্যান্য কার্যাবলী৷’

অন্যদিকে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ সালের আইনের ৪১ ধারায় সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই ধারার উপধারা-১ করপোরেশনের দায়িত্ব ও কার্যাবলী নির্ধারণ করে দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘(ক) করপোরেশনের তহবিলের সংগতি অনুযায়ী তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পাদন করা, (খ) বিধি এবং সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অন্যান্য দায়িত্ব ও কার্যাবলী সম্পাদন করা, (গ) সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অন্য কোন দায়িত্ব বা কার্য সম্পাদনের নির্দেশ প্রদান করিলে উহা সম্পাদন করা৷ (২) মেয়র স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং কাউন্সিলরগণ এই আইনের বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে, করপোরেশনের কার্য পরিচালনা করিবেন এবং করপোরেশনের নিকট যৌথভাবে দায়ী থাকিবেন৷ (৩) সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরগণের দায়িত্ব ও কার্যাবলী বিধি দ্বারা নির্ধারিত হইবে৷’

উল্লেখ্য, পৌরসভা আইনে কোনো পৌরসভার আওতাধীন অঞ্চলে ইমারত নির্মাণ অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা স্ব স্ব পৌরসভাকে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ সব এলাকার আইনশৃঙ্খলা, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পৌরসভার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন আওতাভুক্ত এলাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও এর ট্রাফিক বিভাগ, ডিপিডিসি, ডেসকোসহ বহু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থাকায় পৌরসভার বেশ কিছু কার্যক্ষমতা এ সব সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এতে করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বৃহৎ নগরগুলোর সিটি করপোরেশনের কার্যক্ষমতা পৌরসভা চেয়ে কমে গেছে।

এদিকে আইনের মাধ্যমে ক্ষমতা কমানো এবং বহু সেবাদানকারী সংস্থা থাকায় রাজধানীতে নির্বাচিত মেয়র ও অনির্বাচিত প্রশাসকদের দেওয়া সেবার মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্যও থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন নগরবিদগণ।

তারা মনে করেন, অবিভক্ত ঢাকাকে দুইটি করপোরেশনে বিভক্ত করে বা নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নাগরিক সেবার মান কতটুকু উন্নত হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

নাগরিক সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১১ সালে ‘স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন)’ পরিবর্তন করে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগ করা হয়। তিন বছরেরও বেশি সময় ডিসিসি’র দুই ভাগ প্রশাসক দিয়েই চলছিল।

সীমানা নির্ধারণের জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিভক্ত ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন।

নানা সমস্যায় জর্জরিত ঢাকাবাসীর অধিকাংশ সমস্যার সমাধানই মেয়রদের পক্ষে করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।

দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, প্রশাসক নিয়ন্ত্রিত সিটি করপোরেশন ও মেয়র নির্বাচিত সিটি করপোরেশনের মধ্যে সেবার মানের কী পার্থক্য থাকবে? তাহলে আমি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলব মেয়র খোকার সময়কার সেবার মান ও বিভক্ত ঢাকার প্রশাসকদের এখনকার সেবার মানের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু?’

তিনি বলেন, ‘মেয়র বলেন আর প্রশাসক বলে উভয়ের হাত-পা বেঁধে পানিতে ছেড়ে দিয়ে যদি সাঁতরাতে বলা হয় তাহলে আমার মনে হয় দুজনের একই পরিণতি হবে। আসলে আইনে ও বাস্তবে ক্ষমতা না থাকলে কিছুরই পরিবর্তন হবে না।’

মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আশ্চর্যজনক বিষয় হলো ঢাকার সর্বশেষ মেয়র সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচিত হয়েছেন ১৫ জন সংসদ সদস্যের সমান ভোটে। অর্থাৎ তিনি এককভাবে সেবা করতেন ১৫ জন এমপির জনগণকে। কিন্তু তার ক্ষমতা এমনই ছিল যে, তাকে সবসময় জবাবদিহিতা করতে হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর কাছে। আর এই মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী সর্বোচ্চ হলে একজন এমপি অথবা প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের অনির্বাচিত কেউ।’

তিনি বলেন, ‘পদ ও সম্মান বড় হলেও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের ক্ষমতা একজন পৌর মেয়রের চাইতেও কম। যেমন একজন পৌর মেয়র তার এলাকায় পানি সরবরাহের ক্ষমতা রাখেন, ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কারের ক্ষমতা রাখেন। কিন্তু এ সব ক্ষমতা সিটি করপোরেশন মেয়রের নেই। তিনি যে ল্যাম্পপোস্টে বাতি লাগান ওই ল্যাম্পপোস্ট বসানোরও ক্ষমতা তার নেই। কারণ ওটাও করে অন্য একটা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।’

‘এরপরও যে কয়েকটি সেবা দেওয়ার ক্ষমতা মেয়রের থাকে, একাধিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের আলাদা কর্তৃত্ব থাকায় তাও যথাযথভাবে পালন করতে পারেন না,’ মন্তব্য করেন মোবাশ্বের হোসেন।

তিনি বলেন, ‘যদি একটা উদাহরণ দেই তাহলে স্পষ্ট হবে। ধরুন, সিটি করপোরেশন তার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে একটি ওয়ার্ডের রাস্তার সংস্কার করলো। নতুন পিচ, পাথর দিয়ে সুন্দর রাস্তা তৈরি করলো তারা। ঠিক এর এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়াসা মনে করলো ওই ওয়ার্ডে তাদের নতুন করে পয়ঃনিষ্কাশনের লাইন করতে হবে বা আগেরটা সংস্কার করতে হবে। হঠাৎ একদিন সকালে ওই ওয়ার্ডের জনগণ দেখলো এক সপ্তাহ আগের নতুন রাস্তার মাঝখান থেকে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। নিজেদের কাজ সেরে ওয়াসা সিটি করপোরেশনকে ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দিল। সিটি করপোরেশন ভাঙাচোরা রাস্তা আবার সংস্কার করলো। এরপর দেখা গেল এবার ডিপিডিসি বা ডেসকো এসে হাজির তাদের ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন সংস্কারের জন্য। এভাবেই চলে পুরোটা বছর। বহু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবার মাত্রা এত বেশি যে নগরবাসী তাদের হাত থেকে বাঁচতে চায়।’

এই পরিকল্পনাবিদ আরেকটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘মনে করুন গুলশানে রাজউকের ১০টি আবাসিক প্লট রয়েছে। রাজউক এই প্লট দশজন মালিককে হস্তান্তর করেছে। প্রথমে এই দশজন মালিক গড়ে ৪তলা করে চারটি ভবন নির্মাণ করেছেন। প্রতি তলায় চারটি করে পরিবার মোট ১০টি প্লটে ১৬০টি পরিবার। এই এলাকায় কতটি পরিবার আছে তাদের প্রতিদিন কি পরিমাণ গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদন হয় তা অনুমান করে সিটি করপোরেশন এই এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে। কিন্তু কয়েক বছর পর এই দশ প্লটের মালিক মনে করলো তাদের প্লটে বহুতল ভবন নির্মাণ করবে ডেভেলপার দিয়ে। তখন আবার রাজউকের দ্বারস্ত হওয়া। রাজউক এবার গড়ে ১০তলা করে ১০টি প্লটের জন্য ১০০ তলা ভবনের অনুমোদন দিল। প্রতি তলায় চারটি পরিবার হিসাব করলে এবার দেখা যাবে মোট পরিবারের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৪০০। এখন এই ৪০০ পরিবার থেকে প্রতিদিন যে পরিমাণ গৃহস্থালি বর্জ্য উৎপাদন হবে তা সংগ্রহ বা অপসারণের কাজ কি ১৬০ পরিবারের জন্য নিয়োগ করা কর্মীদের দিয়ে হবে? আসলে রাজউক যদি ভবনের অনুমোদন দিয়ে থাকে তাহলে তার উচিত হবে গৃহস্থালি বর্জ্য ব্যবস্থারও দায়িত্ব নেওয়া। না হলে নাগরিক সেবার মান ঠিক থাকবে না। সমস্যা তো হবে। সেখানে নির্বাচিত হোক আর প্রশাসক হোক।’

সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের (সিইউএস) চেয়ারম্যান ও নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলামও মেয়রদের সীমাবদ্ধতার কথা জানালেন।

দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ঢাকার জনগণের যে সব সমস্যা রয়েছে তার অধিকাংশরই সমাধান করার ক্ষমতা ঢাকা সিটি করপোরেশনের নেই। বরং অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সিটি করপোরেশন তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারছে না। এখানে সমস্যা হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত। বহু সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকাই এখন প্রধান সমস্যা। কে নির্বাচিত বা কে অনির্বাচিত এটা সমস্যা না।’

বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের বর্তমান সভাপতি স্থপতি আবু সাইদ এম আহমেদ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন কখনো একটা সিটির সকল সেবার নিশ্চিত করতে পারে না। আমরা আইনে সিটি করপোরেশনকে স্বায়ত্তশাসিত স্থানীয় সরকার বললেও তাদের ক্ষমতা সরকারের কোনো মন্ত্রণালয়ের অধিদফতর বা বিভাগের সমানও না। বরং সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের তত্ত্বাবধানে কাজ করে।’

আবু সাইদ বলেন, ‘আমরা যদি ইউরোপীয় দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখবো সে সব দেশের কোনো একটা সিটির সকল দায়িত্ব মেয়রের ওপর। লন্ডন শহরে যদি আইনশৃঙ্খলার কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে তা সমাধানের দায়িত্ব মেয়রের। আবার বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বও সিটি মেয়রের। তারা আইনের মাধ্যমে সিটি গভর্নমেন্ট গঠন করতে পেরেছে। নগর সরকার ছাড়া নাগরিকের সকল সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার যানজট নিরসনে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার করা হয়েছে। যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে দেখবো মেয়র হানিফ অর্থাৎ গুলিস্তান যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে। আবার কুড়িল বিশ্বরোডে ফ্লাইওভার তৈরি করেছে রাজউক। মালিবাগ-মৌচাক এলাকায় যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে তার কাজ আবার করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। আসলে এ সব প্রকল্পের সবগুলোই করা হচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশনের এলাকার মধ্যে। কিন্তু কারো সঙ্গে কারো সমন্বয় নেই।’

রাজধানী ঢাকার জনগণের জন্য রয়েছে ৫৪টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এগুলোর প্রত্যেকটিই আলাদা আলাদা সেবা দিয়ে থাকে। আর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এ সব বিভাগের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা।

ঢাকা সিটির অভিভাবক হিসেবে সিটি করপোরেশনকে ধরা হলেও মাত্র ২০টির মতো সেবা দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাদের। আর এ সব সেবার মধ্যে অধিকাংশই দাফতরিক যা দৃশ্যমান নয়। সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ফুটপথ নির্মাণ এবং সংস্কার, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়কবাতি রক্ষণাবেক্ষণ, মশা নিধন, কবরস্থান ও শ্মশানের মতো হাতেগোনা কয়েকটি দৃশমান সেবা দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, তালাক ও বিবাহ নিবন্ধন করা, নাগরিক সনদ বিতরণ, আবাসিক কর আহরণের মতো দাফতরিক সেবাও দিয়ে থাকে সিটি করপোরেশন।

অন্যদিকে রাজধানীতে ভবন নির্মাণ ও ব্যবহারের অনুমোদন দিয়ে থাকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত ও অপসারণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের।

ঢাকার সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব ডিপিডিসি ও ডেসকো’র। গৃহস্থালিতে গ্যাসের সরবরাহের দায়িত্ব তিতাস গ্যাস লিমিটেডের, যানজট নিরসনের দায়িত্ব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের। মাদক ও নিরাপত্তার দায়িত্ব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য প্রকৌশলী আবদুল মান্নান শেখ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রাজউক তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করে। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাই সিটি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি আসুক বা অনির্বাচিত প্রশাসক থাকুক এতে আমাদের কাজের কোনো সমস্যা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা ভাগ হলেও আমাদের দায়িত্ব কিন্তু ভাগ হয়নি। সিটি করপোরেশন দুই ভাগ হলেও আমাদের কাজ একক ঢাকা নিয়ে।’
– See more at: http://bangla.thereport24.com/article/98402/index.html#sthash.mfT8MEGi.dpuf

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় চারবারের সাংসদ ডা. ফরাজিকে বিপুল ভোটে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম শাহনেওয়াজ বিজয়ী

বিশেষ প্রতিনিধি : পিরোজপুর-৩ মঠবাড়িয়া একক আসনে কোনও অপ্রীকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ...