১২ ডিসেম্বর সেতুর ৭নং পিলারের পাইলিংয়ের কাজ উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুমুখী পদ্মা মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের সূচনা করবেন।
আর এই মেগা প্রজেক্টকে কেন্দ্র করে পদ্মা নদীর দুই পাড়ে দিনরাত চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়ার সার্ভিস এলাকায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রায় ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। শনিবার থেকে শুরু হবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ ও নদী শাসণ কাজ।” মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, “প্রকল্পের নির্ধারিত সময় ২০১৮ সালের মধ্যেই পদ্মা নির্মাণ সম্ভব হবে এবং যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।”
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মিত হলে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ১৯ জেলা। সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনও চলবে। পদ্মা সেতু কেবল দেশের দক্ষিণ আর পূর্বাঞ্চলের সেতুবন্ধ হবে না, এই সেতু এশিয়ান হাইওয়ের রুট এএই-১ এর অংশ হিসেবেও ব্যবহার হবে।
পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু ঘিরে হংকংয়ের আদলে নগর গড়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়া ও জাজিরার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিপুল কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। বিশাল এলাকা ঘিরে চলছে নানা ধরনের কর্মযজ্ঞ। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের ব্যস্ততা প্রকল্প এলাকাজুড়ে।
নানা ধরনের নির্মাণ সামগ্রী, যন্ত্র ও শব্দ পুরো এলাকাজুড়ে। এতদিন টেস্ট পাইলিং চললেও শনিবার থেকে শুরু হবে মূল পাইলিং। এজন্য নদীতে জড়ো করা হয়েছে বিশাল বিশাল ক্রেন, ড্রেজার। নদীর পাড়ে বিরাট বিরাট কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে চলছে অবিরত কাজ।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মামুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের জানান,সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৭ নম্বর পিলারটির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হবে, যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।নদী শাসনের জন্য মাটি ভরাটের কাজ চলছে, তীরে কনষ্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি করা হচ্ছে ব্লক।
প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানসূচিতে রয়েছে, সকাল পৌনে দশটার দিকে জাজিয়ায় নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করে সেখানে মূল সেতু নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এরপর তিনি বেলা আড়াইটায় মাওয়াতে একটি জনসভায় ভাষণ দেবেন।
উপ-প্রেস সচিব মামুন বলেন, “শেখ হাসিনা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের জাল ছিড়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবতায় রূপ দিয়েছেন। এতে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে নিখাঁদ-খাঁটি দেশ প্রেমের চ্যালেঞ্জের বিজয় দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।”
রাজধানীর সঙ্গে পদ্মা সেতুর যোগাযোগ সহজ করতে ইতোমধ্যেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই মাওয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত চারলেনের সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বিজয়নগর থেকে ঢাকা-মাওয়া সড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী একটি ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে।
এছাড়া জাজিরা পয়েন্ট থেকে খুলনা, বেনাপোল, কুয়াকাটা পর্যন্তও চার লেনের সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।