ব্রেকিং নিউজ
Home - জাতীয় - উপকূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই : কলাগাছ আর মাটির মিনারে মাতৃভাষা দিবস

উপকূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই : কলাগাছ আর মাটির মিনারে মাতৃভাষা দিবস

মেহেদী হাসান বাবু ফরাজি :
মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে এক হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত লেখা করা করছে। বিদ্যালয়ে নানা স্থাপনা থাকলে নেই খেলার মাঠ। সেই সাথে একটি শহীদ মিনারও নেই। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচি। তবে শহীদ মিনার না থাকায় কোমলমতি শিশুরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারেনা। ফলে ভাষা দিবস স্কুলে পালিত হয় অনেকটাই দায়সারাভাবে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ৫৬ নম্বর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ই শুকু নয় পিরোজপুর উপকূলীয় এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ১০ ভাগ প্রতিষ্ঠানেই কোন শহীদ মিনার নেই। ফলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সংশ্লিষ্ট স্কুল গুলোতে পালিত হয় শহীদ মিনার ছাড়া। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার বেদীতে ভাষা শহীদদের যথাযথভাবে ফুল দিয়ে সম্মাননা জানাতে পারেননা। শহীদ মিনার না থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ অথবা ইট ও মাটির শহীদ মিনার বানিয়ে জাতির এমন চেতনার দিবসটি পালন করে আসছে। এ ক্ষেত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো দুরের কথা বেশীরভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ গুলোতে আজও শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। সরকার জাতির এমন শোক ও দ্রোহের চেতনার মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খোলা রেখে ভাষা দিবসের নানা কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দিলেও কার্যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোন শহীদ মিনার গড়ে না তোলায় গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ এ দিবসের কর্মসূচি পালিত হয় শহীদ মিনার ছাড়া। ভাষা সংগ্রামের অনন্য প্রতীক শহীদ মিনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এখনও উপেক্ষিত রয়েছে।
মঠবাড়িয়ার মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র নাইমুর রহমান ইমরান বলে, মাতৃভাষা দিবস আমাদের গর্ব ও গৌরবের । আমরা স্কুলে দিবসটি পালন করি। তবে আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় শহরের শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দেই। আমাদের স্কুলে একটা শহীদ মিনার থাকলে ভাল হত।
অনুসন্ধানে জানাগেছে,পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মোট ৩০৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাত্র চারটি স্কুলে শহীদ মিনার আছে । এর মধ্যে ৫১ নম্বর উত্তর মিঠাখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবার মহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ১১ নমবর তুষখালী সরকারী প্রাধমিক বিদ্যালয় ৭১ নম্বর পশ্চিম মিংগা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৬৭ নম্বর পূর্ব সেনের টিকিকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া বাকী ২০১টি স্কুলে কোন শহীদ মিনার নেই।
মঠবাড়িয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাইনুল ইসলাম স্কুলে শহীদ মিনার না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, স্কুলে শহীদ মিনার গড়ে তোলার মত যায়গা নেই। তাছাড়া এ বিষয়ে এর আগে কেউ উদ্যোগও নেয়নি। তবে শহীদ মিনার স্কুলে থাকা খুব জরুরী।
এছাড়া ৪৭টি মাধ্যমিক স্কুলের অর্ধেক প্রতিষ্ঠানেই কোন শহীদ মিনার নেই। আবার যে কয়টি প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে তা আকারে ছোট কোথাও আবার বেদী ছাড়া মিনার দন্ডায়মান থাকলেও তা অরক্ষিত অবস্থা বিরাজ করছে। মঠবাড়িয়ার তুষখালী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থাকলে তা জ্বরাজীর্ণ । এ প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারটির কোন বেদী নেই। অবহেলা আর উপেক্ষায় যেন পড়ে আছে শহীদ মিনারটি।
উপজেলার ৪৯টি মাদ্রাসার কোথাও শহীদ মিনার নেই। উপজেলার কলেজ গুলোর অর্ধেক প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। ৮টি কলেজের চারটিতে শহীদ মিনার নেই । এগুলো হলো মিরুখালী কলেজ, মুসল্লীবাড়ি এমএস টেকনিক্যাল কলেজ, সোনাখালী ডা. রুস্তুম আলী ফরাজি করেজ ও ভগীরথপুর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজে আজও কোন শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়নি। ফলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয় শহীদ মিনার ছাড়া।
এ বিষয়ে মিরুখালী স্কুল এ- কলেজের অধ্যক্ষ মো. আরমগীর হোসেন বরেন, আমাদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রতীক এই শহীদ মিনার। এ মিনার আমাদের চেতনা চীর ভাস্বর । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার গড়ে তুলতে না পারাটা যথার্থ মনে করিনা।
মঠবাড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিক উদ্দিন আহম্মেদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো শহীদ মিনার না থাকার বিষয়ে বলেন, মার্তৃভাষা দিবস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পালিত হয় এজন্য শুধু নয় বাঙালীর চেতনার এ মিনার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা উচিত। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে শহীদ মিনার গড়তে উদ্যোগী করার চেষ্টা করছি। সরকারী পরিপত্র জারীর মাধ্যমে এটি দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব বলে মনে করি।
অপর দিকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার সাত ইউনিয়নে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ মিলিয়ে মোট ২৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ১০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও কোন শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। হাতে গোনা যে কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে তা যেমন অতি খর্বকায় স্থাপনা তেমনি তাও অরক্ষিত ও সংস্কার বিহীন । উপজেলার ১৬৩টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র তিনটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ নম্বর নদমূলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১০৩ ইকড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৮৬ নম্বর গৌরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোট আকারে শহীদ মিনার রয়েছে। বাকী ১৬০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আজও কোন শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়নি। এছাড়া উপজেলার ৩৭টি মাদ্রাসার একটিতেও কোন শহীদ মিনার নেই। ৩৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাত্র ৯টি বিদ্যালয়ে খর্বকায় অরক্ষিত শহীদ মিনার রয়েছে। বাকী ২৯টি মাধ্যমিক স্কুলে কোন শহীদ মিনার নেই। তবে উপজেলার চারটি কলেজে শহীদ মিনার রয়েছে । অপ্রশস্ত শহীদ মিনারের বেদী সারাবছর জুড়ে থাকছে অরক্ষিত ।
এ বিষয়য়ে ভান্ডারিয়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীরে ছাত্র মো. মনির হোসেন বলে, আমাগো স্কুলে কোন শহীদ মিনার নাই। মাতৃভাষা দিবসে স্কুলে আমরা অনুষ্ঠান করি। ইট দিয়ে শহীদ মিনার বানাই তারপর তাতে ফুল দেই। আমাদের একটা শহীদ মিনার থাকলে ভাল হয়।
ভান্ডারিয়া সদরের ৭৬নম্বর কামিনী প্রভা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান মোল্লা বলেন, স্কুলে শহীদ মিনার গড়ে তোলা হয়নি। তবে ভাষা দিবসে স্কুলে শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। শহীদ মিনার আসলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই থাকা দরকার। এ নিয়ে ভাবা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জহিরুল আলম স্কুল গুলোতে শহীদ মিনার না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ভান্ডারিয়ার ৩৮টি মাধ্যমিক স্কুলে ৮/১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকতে পারে । যা আছে তাও অপ্রশস্ত বেদীতে ছোট আকারের মিনার । তবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত।
এ ব্যাপারে ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান করা হবে। তবে সকল জন প্রতিনিধিদেন এব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিৎ।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...