পরীক্ষা দিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ইমন। মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই কলম-পেন্সিল আর প্রবেশপত্র নিয়ে রওনা হবে দ্বিতীয় দিনের জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে। সঙ্গে নিয়ে যাবে ছায়াসম পিতার দোয়া। কে জানতো জীবনের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাকে শুনতে হবে পিতার মৃত্যুর খবর, দেখতে হবে সেই পিতারই মৃত চেহারা। এ যেনো পুরো আকাশসম যন্ত্রণা ঘিরে ফেলে ইমনকে। তবু থেমে থাকেনি সে। এই যন্ত্রণা বুকে নিয়েই পরীক্ষার হলে গেল ইমন। পিতাকে হারিয়েও ইমন এবছরের জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে হাতেম অালী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ৷
সোমবার সকালে মঠবাড়িয়া দক্ষিণ বন্দরের বাসিন্ধা রুস্তম মৃধা ব্লাড ক্যান্সারে অাক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন । রুস্তম মৃধা স্ত্রী শিউলী বেগম ছাড়া স্মৃতি হিসেবে রেখে যান দুই সন্তান। এর মধ্যে ছোট ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। বড় ছেলে ইমন মঠবাড়িয়ার উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। গতকাল বাবার শেষ বিদায়ের দিন ছিল তার দ্বিতীয় দিনের জেএসসি পরীক্ষা। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রুস্তমের মৃত্যুর খবরে সবাই যেমন শোকাহত, তেমনি চিন্তিত পরীক্ষার্থী ইমনকে নিয়ে। সবাই ইমনের মনে সাহস জোগানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখলেন। তাকে পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে বললেন মা শিউলী বেগম । তার ভাষ্য, একটি বছর লস দেয়া ঠিক হবে না।ইমনও ছিল পরীক্ষার ব্যাপারে কিছুটা আত্ম-প্রত্যয়ী। ওই বাসার সবাই যখন শোকার্ত তখন ইউনিফর্ম পড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যায় ইমন ৷
এদিকে বিকেলে রুস্তমের দাফনের ব্যাবস্থা করা হয়৷ পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফিরে বিকেলে বাবার জানাজা নামাজে অংশ নেয় ইমন । জানাজা শেষে বাবার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। বিকেল ৫টায় বাবার কবরে নিজ হাতে মাটি দিয়ে বাবাকে শেষ বিদায় জানায় ইমন। সন্ধ্যায় অাবার পড়তে বসে পড়ার টেবিলে ৷ কিন্তু বইয়ের পাতায় ভেসে ওঠে বাবার ছবি ৷ অাজ মঙ্গলবার অাবার পরীক্ষা দিতে অাসে শোকার্ত ইমন ৷ বাবাকে হারিয়ে চোখের জল মুছে পরীক্ষার খাতায় লিখে চলে ইমন ৷ এগিয়ে যাও ইমন, এগিয়ে যাও তোমার গন্তব্যে ৷ অামরা অাছি তোমার পাশে ৷