মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : মঠবাড়িয়ায় গত ২২ মার্চ ইউপি নির্বাচনের দিন সাফা ডিগ্রী কলেজ ভোট কেন্দ্রে বিজিবির গুলিতে গুলিবিদ্ধ হেলাল, বাদল ও রাজিবসহ আহতদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল থেকে ফেরত দেয়ায় তারা বাড়িতে চিকিৎসাহীন অবস্থায় মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। আবার অনেকে চিকিৎসার খরচ চালাতে না পারায় পঙ্গুত্ব বরণের আশংকা দেখা দিয়েছে। থানায় আজ্ঞাত মামলা দায়ের হওয়ায় অনেকে আবার গ্রেফতার আতংকে এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে এলাকার অনেক যুবক। এছাড়া ১৭ দিনেও নিখোঁজ দিন মজুর ইউনুচের সন্ধান না পাওয়ায় তার পরিবারের মাঝে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে।
প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনের দিন উপজেলার সাফা ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে ৭৪৬টি নৌকা প্রতীকে সীল মারা ভোট বাতিলকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিজিবি-পুলিশের গুলিতে ঘটনা স্থলে ৫ জন নিহত এবং ১৫/২০ জন আহত হয়। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১২শ’ থেকে ১৩শ’ জনকে আসামি করে মঠবাড়িয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর ওই ইউয়িনের ৫টি গ্রামে গ্রেফতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ দিকে ঘটনার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী দিন মজুর মোঃ ইউনুচের (৩৫) সন্ধান পাচ্ছেনা তার স্বজনরা। ইউনুচ পার্শ্ববতী ভান্ডারিয়া উপজেলা গোলবুনিয়া গ্রামের মৃত মোঃ হামিদ হাওলাদারের ছেলে। ওই দিন বিকালে ঘুম থেকে জেগে সাফ বাজারের বাড়ি থেকে বের হয়ে সে আর বাড়ি ফেরেনি। স্ত্রী তাজেনূর (৩০), মেয়ে পরাভিন (৮ম শ্রেণী), মরিয়ম (৫ম শ্রেনী) এবং ছেলে কাইউম (৬ষ্ঠ শ্রেণী) কে নিয়ে ইউনুচের পরিবার। হাটে-বাজারে ও মানুষের বাড়িতে কাজ করে উপার্জিত অর্থে তার সংসার চলত। গত ১৭ দিন নিখোঁজ থাকায় ইউনুচের পরিবার খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ইউনুচের স্ত্রী তাজেনূর জানান, গুলোগুলি ঘটনায় তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর লাশ কেউ গুম করছে কিংবা তাকে কেউ আটকে রেখে এ প্রশ্ন তার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সেদিন গুলিতে নিম্ন আয়ের আহতদের বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে যন্ত্রণাময় দিন কাটাবার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উদয়তারা বুড়ির চর গ্রামে গিয়ে জানাযায়, ওই গ্রামের মৃত সাইদুর রহমানের ছেলে ঝাল মুড়ি বিক্রেতা মোঃ হেলাল জমাদ্দার (৩৫) সাফা কলেজ কেন্দ্রে ঝাল মুড়ি বিক্রি করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। একটি গুলি তার বাম হাতের কনুইতে লেগে জোড়া স্থানচ্যুত হয়েছে। আরেকটি গুলি তার তলপেট ঘেঁষে যাওয়ায় চামড়া ঝলসে গেছে। বর্তমানে ক্ষত স্থান থেকে অবিরত রক্ত ঝরছে। বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ৩ সন্তান নিয়ে তার সংসার চলত ঝাল মুড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে। বর্তমানে পাড়া-প্রতিবেশীদের দেয়া খাবার খেয়ে তাদের দিন কাটে। টাকার অভাবে চিকিৎসা চলছেনা। হেলালের দুচোখে যেন অন্ধকার নেমে এসছে। ঘরের বিছানায় যন্ত্রনায় কাতর হেলাল জানান, চিকিৎসা না হলে হাতটি হয়ত বাঁকা হয়ে তাকে পঙ্গুত্ব বরন করতে হবে।
হেলালের স্ত্রী খাদিজা (২৩) জানান, ‘‘আগে স্বামী জাল মুড়ি বেইচ্চা সোংসার চালাইতো, এহন টাহার অভাবে মোর স্বামীর চিকিৎসাও চলে না আর অবুঝ তিনটা পোলাপানের খাওনও চলেনা মুই এহন কোথায় দাঁড়ামু’’।
একই ইউনিয়নের আমুরবুনিয়া গ্রামের দলিল উদ্দিনের ছেলে কসাই মোঃ বাদল হাওলাদার উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে এখন বিছানায় কাতরাচ্ছে। বাদল তুষখালী বাজারে মাংসের ব্যবসা করে। বাদল জানান, ওই দিন সন্ধায় ধানী সাফা বাজারে যাওয়ার সময় কলেজের সামনে ভিড় দেখে সেখানে দাড়ান। হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে দৌড় দিলে পেছন থেকে তার পায়ে গুলি লেগে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কয়েক দিন বরিশাল শেবাচিমে চিকিৎসা করলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে চলে আসে। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই গ্রেফতার আতংকে দুরে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছে বলে জানাগেছে।