ব্রেকিং নিউজ
Home - উপকূলের মুখ - নৌকাঘরে লাল মিয়ার বসতি

নৌকাঘরে লাল মিয়ার বসতি

দেবদাস মজুমদার > জগৎ সংসারে প্রতিবন্ধী লাল মিয়ার(৪৫) মা বাবা ভাইবোন কয়েক যুগ ধরে নিখোঁজ । স্ত্রী খাদিজা বেগম আর তিন সন্তান শারিরীক প্রতিবন্ধী লাল মিয়ার জগৎ সংসার। একদা নৌকায় বিষখালীতে ভাসমান ছিল ঘর গেরস্থালী । সেই সাথে খেয়াঘাটে নৌকার মাঝি যাত্রী পারাপার করে পাঁচ সদস্যে ভরণ পোষণ চলে। স্থলে বসতির জমি জমা নাই । তাই জলে নৌকায় ভাসমান সংসার। এভাবে ঝুঁকির ভাসমান জীবন সংসার চলেনা। স্থানীয়রা লাল মিয়াকে তাই তীরে উঠিয়ে দেন । এভাবে একদিন নৌকাঘরটি বিষখালী নদীর প্রবহমান বিশাল জলরাশি ছেড়ে তীরে উঠে আসে। এখন পরের জমিতেই লাল মিয়ার এখন নৌকাঘরে বসবাস।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমূয়া বন্দর খেঁয়াঘাটের মাঝি প্রতিবন্ধী লাল মিয়া নৌকার ওপর ঘর বানিয়ে জীবনযাপন করছেন।
সম্প্রতি সরেজমিনে কাঁঠালিয়া উপজেলার আমূয়া বন্দরের কাছে কৃষক বাবুল হাওলাদারের বসতঘর লাগোয়া পতিত জমিতে ১৭ ফুট দৈর্ঘ্য একটি কাঠের নৌকাঘর। কাঠ ও টিন নির্মিত তিন কক্ষ বিশিষ্ট নৌকা ঘরেই পাঁচ সদস্যের লাল মিয়ার সংসার। ভূমিহীন লাল মিয়ার এই সমাজে যেন যাযাবরের মত জীবন। অন্যের পতিত জমিতে বসানো হয়েছে এ নৌকাঘরটি। অপরিসর এ নৌকাঘরে পাঁচ সদস্যে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন লাল মিয়া।
তিনি জানান, বরিশালের বাখরগঞ্জ উপজেলার শিয়ালগুনি গ্রামের প্রতিবন্ধী লাল মিয়ার পৈত্রিক নিবাস ছিল। তার পিতার নাম মালেক হাওলাদার । তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে লাল মিয়াই কেবল জন্ম থেকে প্রবিন্ধী। এ কারনে পরিবারের অবহেলা আর সমাজের উপেক্ষা ছিল। তার পরিবার বরিশাল শহরের এক বস্তিতে বসবাস করতেন। দিনমজুর বাবার পক্ষে এত সদস্যের ভরণপোষণ চলছিলনা। এমন জীবনে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করেন প্রতিবন্ধী লাল মিয়া । অভাবের সংসারে স্কুল ছেড়ে ১৪ বছর বয়সে লাল মিয়া প্রতিবেশী এক ট্রাকড্রাইভারের সাথে ভারতে চলে যান। এরপর ভারতে ১০/১২ বছর ধরে ভিক্ষাবৃত্তির জীবন শেষে দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য দেশে ফিরে সে আর তার পরিবারের কাউকে খুঁজে পাননি। পরে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সদরে একটি পাবলিক টয়লেট তদারকির কাজ পান। পাশাপাশি বিষখালী নদীতে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। এমন অবস্থায় কাঁঠালিয়ার আমূয়ায় বিয়ে করেন। এরপর পাবলিক টয়লেটের কাজ ছেড়ে গত দুই বছর ধরে আমূয়া বন্দর খেয়াঘাটে নৌকায় যাত্রী পারপার করে আসছেন। নিজের বসতির জমি না থাকায় ১৭ ফুট দৈর্ঘ্যরে একটি নৌকার ওপর ২৫ হাজার টাকা ব্যায় করে তিন কক্ষের একটি ঘর বানিয়ে ভাসমান সংসার চলছিল।
জলে ভাসমান সংসারে ঘটে দু:খজনক ঘটনা, একদিন রাতে ঘুমের ঘোরে পাঁচবছর বয়সি সাগর নামে প্রথ ছেলে সন্তান নৌকা থেকে নদীতে পড়ে মারা যায়। এরপর নৌকার মূল কাঠামোটি পুরানো নাজুক ঞয়ে পড়ে। গত দুই বছর আগে স্থানীয় লোকজন লাল মিয়াকে তার ভাসমান সংসার নিয়ে তীরে উঠে বসবাসের জন্য অনুরোধ করে। এরপর সন্তানহারা স্ত্রী খাদিজাকে নিয়ে স্থানীয় বাবুল হাওলাদার নামে সহৃদয় এক ব্যাক্তি তার বাড়ির পতিত ভিটায় লাল মিয়ার নৌকা ঘরটি বসিয়ে দেন। সেই থেকে সাগর(৯),শাওন(৭) আর শামীম(৫)নামে তিন ছেলেকে নিয়ে নৌকাঘরেই আছে লাল মিয়ার সংসার। খোঁঘাটে নৌকা চালিয়ে কোনমতে চলছে লাল মিয়ার সংসার।
লাল মিয়া বলেন, বেতাগীতে টয়লেটের তদারকির সময় প্রতিবন্ধীর ভাতা পেতেন। এখন সে ভাতাও পাননা। বসতঘর তোলার মত নিজের কোন জমি না থাকায় কোথাও স্থায়ী ঘর তোলা সম্ভব হচ্ছেনা। বসতঘরের জন্য একটু জমি আর একটু ক্ষুদ্র ব্যবসার পূনর্বাসন পেলে হয়ত ভালভাবে বাঁতে পারতাম ।
এ ব্যাপারে আমূয়া বালিকা বিদ্যালয় এ- কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. শামীম মোল্লা বলেন, লাল মিয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী ভূমিহীন। একটা খুপড়ি ঘর তোলার মতও জমি তার নেই। নৌকায়ঘর বানিয়ে পরিবারটি বসবাস করে। তাও আবার পরের জমিতে। পরিবারটি সরকারী খাস জমি পেলে একটা বসতঘর বানিয়ে থাকতে পারতেন।
এ ব্যাপারে আমূয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আকতারুজ্জামান নিচাম বলেন, লাল মিয়া এখানকার ভোটার নন। তবে সে ভোটার হওয়ার আবেদন করেছেন। ভোটার হলে তাকে খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়ে পূণর্বাসন করা হবে।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...