ব্রেকিং নিউজ
Home - মঠবাড়িয়া - মঠবাড়িয়ার কৃষক হুমায়ূন সমন্বিত চাষে লাখপতি

মঠবাড়িয়ার কৃষক হুমায়ূন সমন্বিত চাষে লাখপতি

মেহেদী হাসান বাবু : প্রাকৃতিক দূর্যোগ এলেই কৃষি ও কৃষকের জীবন তছনছ করে দেয়। সেই সাথে নদী তীরের গ্রাম নদীর জলোচ্ছাসে নিয়ে আসে লবনের আগ্রাসন। ফসল মার খায়, সেই সাথে পোকা মাকড়ের উপদ্রব নিত্ত নৈমিত্তিক বিষয়। ঘূর্ণিঝড় সিডর আর আইলায় উপকূলীয় কৃষকদের ঘুরে দাড়াতে সমন্বিত কৃষি খামার জরুরী হয়েে পড়ে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বলেশ্বর নদ তীরবর্তী ছোট মাছুয়া গ্রামের কৃষক মো. হুমায়ূন কবির সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন । কৃষিতে নিমগ্ন হুমায়ূন কবির সমন্বিত কৃষি আবাদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হন। আর ফসলের ক্ষতিকর রাসায়নিক সার ও কীট নাশকের ব্যবহার না লোকায়ত জ্ঞান আর কঠোর পরিশ্রমে জৈবসারের ব্যবহারের মাধ্যমে চাষাবাদে সফলতা অর্জন করে তিনি আজ এলাকায় লাখপতি কৃষকের পরিচিত পেয়েছেন। কৃষিতে লোকায়ত জ্ঞানে পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমন্বিত কৃষি খামার উপকূলের অনেক বিপন্ন কৃষকের জীবন বদলে দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চাকুরী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া সফল কৃষক হুমায়ূনের মতে মাছ,গাছ, ফল আর সবজির সমন্বিত আবাদ করে যে কেউ এমন উৎপদানে সফল করতে পারেন।
স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলায় বিপর্যস্ত ছোট মাছুয়া গ্রামের সফল কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে গ্রামটি এখন আদর্শ গ্রামে পরিনত হয়েছে। এই গ্রামের কৃষক হুমায়ুন কবিরের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও ফরমালিং মুক্ত ঘেরের মাছ লবন সহিষ্ণু ক্ষেতের সবজি ও বাগানের রসালো ফল মঠবাড়িয়া,ভাণ্ডারিয়া ও শরনখোলাসহ এ অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। আর উৎপাদিত এ কৃষিপণ্য বাজারজাত করে কৃষি খরচ বাদে তাঁর বছরে আয় হচ্ছে প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকা। তাঁকে অনুসরন করে পতিত জমিতে মাছ সবজি ও ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এলাকার অনেক বেকার যুবক চাষি ।
জানা গেছে, মঠবাড়িয়া পৌর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বলেশ্বর নদের তীরে নিভৃত ছোট মাছুয়া গ্রাম। ওই গ্রামের কৃষক মৃত ফুল মিয়া গাজীর ছেলে মো. হুমায়ুন কবির। তিনি ১৯৭৩ সালে এইচ.এস.সি পাশ করার পর ১৯৮৩ সালে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে চাকুরীতে যোগ দেন। দীর্ঘ ২৯ বছর সফলতার সাথে মঠবাড়িয়ার তুষখালী ও ভাণ্ডারিয়ার তেলিখালী ইউনিয়ন সচিব পদে চাকুরি শেষে ২০১১ সালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করেন। এরপর নিজের চাকুরি ও পেনশনের ১০ লাখ টাকা ও কুয়েত প্রবাসী ছেলে কাছ থেকে ধার নেয়া ১৩ লাখ মোট ২৩ লাখ টাকা নিয়ে বসত বাড়িসহ আশপাশের পতিত ১২ একর জমিতে মাছের ঘের, সবজি ও ফলদ গাছ রোপন করে গড়ে তোলেন সমন্বিত কৃষি খামার। এ কৃষি খামারের অধিকাংশ জমি পৈত্রিক হলেও বাৎসরিক বন্ধকেও কিছু জমি এ খামারের আওতায় রয়েছে। মোট ১২ একর জমির প্রায় ৭ একর জমিতে মাছ চাষের পুকুর ও সাড়ে ৩ একর জমিতে সবজি ও দেড় একর জমিতে ফলদ গাছ। ঘেরের বেড়ী বাধে সাড়িবদ্ধ ভাবে লাগানো হয়েছে কুল, পেপে, কলা আম বিভিন্ন ফলদ গাছ। পুকুর পাড়ে তেরী করা হয়েছে ক্ষেত। এ ক্ষেতে চাষ করা হয়েছে মৌসুমী সবজি কপি, পাতা কপি, মিষ্টি কুমড়া,সীম ও করলা।
কৃষক হুমায়ুন কবির জানান, ২০১১ সালে প্রথম এ কৃষি খামার শুরুর করার পর প্রথম দু’ বছর লাভের ফসল ঘরে ওঠেনি। তবে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে লাভ জনক হয়ে ওঠে চাষাবাদ। চলতি বছর শুরুতেই উন্নত মানের মনোসেক্স তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছ, শীতকালীন সবজির চড়া দাম আসতে শুরু করে। প্রতিদিন ঘের থেকে ৫ মন মাছ ৩০ হাজার, কূল দেড় মন ৩ হাজার, ৮ মন ওল কপি ৪ হাজার, বেগুন ১মন ১ হাজার, দেড় মন সীম, লাউ ১ শত পিস ১ হাজার টাকায় বিক্রিসহ অন্যান্য ফলদ বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। প্রতিদিন ২০ বস্তা মাছের খাবার ২২হাজার টাকা, সবজি পরিচর্যা ২ হাজার ও শ্রমিকের মজুরী ও অন্যান্য খরচসহ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন হুমায়ুনের উবৃত্ত থাকছে ১০/১২ হাজার টাকা।
তিনি কোন ঋণ ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে কৃষি প্রযুক্তি এবং নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত এ ফার্মটিকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে সফল হই। তিনি জানান, ঘেরের পানির তলদেশে মাছের খাবারের পরিত্যাক্ত অংশ ও মাছের মল মূত্রের পলি মাটি প্রতি চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে সেচ দিয়ে শুকিয়ে ১ থেকে দেড় ফুট পলি কাদা উঠিয়ে রোদে শুকিয়ে কম্পোষ্ট সার এবং নিজের গরুর গোবরের জৈব সার ক্ষেতে দিয়ে সবজি ক্ষেত তৈরী করেন। এসময় মাছের ঘেরের পুকুরে চুন, ইউরিয়া ও খৈর দিয়ে নতুন পোনা ছাড়ার জন্য পুকুর তৈরী করা হয়। ক্ষেতে পোকা নিধন প্রযুিক্ত সেক্্রফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। প্রতিদিন মাছের খাবার এখানে সেখানে ছিটিয়ে রাখায় পরিবেশ বান্ধব পাখি ওখানে বসবাস করে এবং এইসব পাখিও পোকা নিধন করে।
বলেশ্বর নদতীরবর্তী আধা কিলোমিটারের মধ্যে এ কৃষি খামারের অবস্থান হওয়ার ফলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য এলাকার বিভিন্ন বাজারের পাইকাররা নৌপথে পরিবহন সুবিধা পাচ্ছে।

এ বিষয়ে তুষখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান হাওলাদার জানান, হুমায়ূন কবির পরিবেশ বান্ধব একজন সফল কৃষক। আমি কৃষক হুমায়ুনের কৃষি খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ধরণের নিজেই একটি খামার গড়ার কথা ভাবছি। হুমায়ূন এলাকার সফল কৃষকের দৃষ্টান্ত।

এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়ার ছোট মাছুয়া কৃষি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার কর্মকার জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং কম্পোষ্ট ও জৈব সার ব্যবহার করে কৃষক হুমায়ূন সফল হয়েছেন । তিনি একজন সমন্বিত কৃষি খামারের সফল চাষি। তার উৎপাদিত মাছ ও সবজি বিষ মুক্ত। কোন কৃষককে সফল হতে হলে সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তুলতে হবে। কারন কৃষি আসলে একটি অন্যটির পরিপূরক। কৃষক হুমায়ূন এলাকার সকল কৃষকের জন্য দৃষ্টান্ত।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...