জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) খুলনা মহানগর কমিটির সভাপতি মোঃ রফিকুল হক খোকনের ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলার সময় দেশে টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছিল। ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে হাতেখড়ি রফিকুল হকের। তাই দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ভালো ফলের জন্য নয়, শুধু অংশগ্রহণের জন্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন। শরণখোলা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়ে মঠবাড়িয়া উপজেলার দেবীপুর গ্রামের বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
এদিকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করলে পরিবার থেকে বলা হয় কলেজে ভর্তি হতে। কিন্তু মাতৃভূমির ক্রান্তিকালে রফিকুল হক কলেজে ভর্তি হওয়ার পরিবর্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকে কর্তব্য মনে করেন। কিন্তু বিজয়ের ৪৪ বছরেও এই মুক্তিযোদ্ধার নাম সরকারি গেজেটভুক্ত হয়নি। জীবন বাজি রেখে সম্মুখসমরে লড়াই করা রফিকুল হকের ৩-৪ বছর পূর্বে হার্টে বাইপাস অপারেশনে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। চিকিৎসার টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিশাল অংকের ঋণ মাথায় নিয়ে বর্তমানে তিনি খুলনা হাজী মহসীন রোডে ভাড়া বাসায় পরিবারসহ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। রফিকুল হক মঠবাড়িয়া উপজেলার দেবীপুর গ্রামের মৃত মৌলভী জালাল উদ্দিনের ২য় ছেলে। তার মায়ের নাম মৃতা মোসাম্মাৎ নজমুন নেসা।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের (জামুকা) মুক্তিযোদ্ধা নিবন্ধন ফরমে গত বছরের ২২ জুলাই রফিকুল হক খোকনের করা আবেদন সূত্রে জানা যায়, তিনি ১৯৭১ সালের ১৯শে জুন ৯নং সেক্টরের পটুয়াখালী সাব-সেক্টরের বুকাবুনিয়া ট্রেনিং ক্যাম্পে যোগদান করেন। প্রশিক্ষক কেশব লালের অধীনে ৪৫ দিন প্রশিক্ষণ শেষে সুন্দরবন স্টুডেন্ট কাম্পে ফ্রিডম ফোর্সে যোগদান করেন তিনি। এ ক্যাম্প থেকে তুষখালী ও মোরেলগঞ্জে সম্মুখসমরে অংশ নেন। ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদান বাহিনীর আতœসমর্পণের পর স্বাধীন দেশ এবং লাল-সবুজের পতাকাই ছিল তাঁর বড় পাওয়া। যুদ্ধের বিনিময়ে পদ-পদবি, অর্থ-বিত্ত এবং সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ তাঁর কল্পনায়ও আসেনি। তাই নিজের নাম তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজন অনুভব করেননি। তার একমাত্র কন্যা ইশরাত রফিক ইরার প্রশ্ন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে অন্যরা যখন নানান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে সে কেন পায় না? সন্তানের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে রফিকুল হক ২০০২-০৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন করে ব্যর্থ হন।
রফিকুল হকের মুক্তিযুদ্ধকালীন সহযোদ্ধা শরণখোলা বাজারের হেমায়েত উদ্দিন বাদশা (গেজেট নং-১১৫১) জানান, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে রফিকুল হক খোকনসহ তাঁরা একই ক্যাম্পে থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।
ষাটোর্ধ রফিকুল হক খোকন জানান, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জেনারেল (অব.) ওসমানী, মেজর (অব.) জলিল, মেজর (অব.) জয়নাল আবেদীন ও মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনের দেয়া সনদপত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি গেজেটভুক্ত হতে পারছেন না। একমাত্র সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের স্বীকৃতির জন্য তাঁর নামটি গেজেটভুক্ত করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।