আবদুল লতিফ খসরু >
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৩ জানুয়ারী নিজ ফেইসবুকে লিখেছিলাম যদি শনিবার খুজে পাওয়া যায় সেই মানসিক ভারসাম্যহীন লোকটাকে। অপেক্ষার পালা শেষে অবশেষে আজ বুধবার সকালে আমার কাঙ্খিত সেই মানুষটিকে খুজে পেলাম পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলা চত্বরে। কাছে গিয়ে ইশারা ইঙ্গিতে জানতে চাইলাম কোন কিছু খাওয়া হয়েছে কিনা ? লোকটি মাথা নেড়ে আমাকে বুঝিয়ে দিল কিছুই খাওয়া হয়নি তার । পাশেই ছিল চায়ের দোকান। তাৎক্ষনিক সেখান থেকে পরটা ভাজী নিয়ে নিজ হাতে খাওয়ালাম তাকে। সে এমনই ক্ষুধার্ত একে একে ১০টি পরটা খেল। নাস্তার পর পানি পান করালাম নিজ হাতে। চা পান করালাম। একপর্যায়ে লোকটির হাতে পায়ের নখ কেটে দিলাম, চুল গোফ দাড়ি নিজ হাতে ছেঁটে দিলাম। কথা ছিল ওনাকে গোসল করানোর। তাৎক্ষনিক ভাবে গোসলের উদ্যোগ নিলাম।
পরে স্থানীয় একটি অফিস থেকে পানি ও বালতির ব্যবস্থা করলাম। সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে শুরু করলাম লোকটির গোসলের কাজ। নিজ হাতে পরিস্কার গায়ে লেগে থাকা দীর্ঘ দিনের মল মূত্র। পেলাম অন্য রকম আত্ম তৃপ্তি। আমি যখন এই কাজটি করছিলাম তখন দাড়িয়ে থাকা উৎসুক জনতা দেখছিল। তার পরেও আমাকে সহায়তা করার জন্য কয়েকজন যুবককে আমন্ত্রন জানালে তারা আমাকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে। এক পর্যায়ে ঐ পথ ধরে যাচ্ছিল কাউখালী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ মিল্টন। অবাক বিস্ময়ে তিনি তাকিয়ে দেখছিলেন আমার এই উদ্যোগটি।
আমি তাৎক্ষনিক চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে লোকটির জন্য নতুন পোষাকের আবদার করলে তিনি তাৎক্ষনিক লোকটির জন্য লুঙ্গী, সোয়েটার তোয়ালের ব্যবস্থা করলেন। চেয়ারম্যান সাহেবের দেওয়া কাপড় লোকটির গায়ে নিজ হাতে পরিয়ে দিলাম। আজ সারাদিন লেগে ছিলাম তার পিছনে। সকালের ধারাবাহিকতায় দুপুরে উন্নতমানের খাবার খাইয়ে দিলাম নিজ হাতে। পূর্বের দেওয়া কম্বলটি ফেলে দিয়েছে অনেক আগেই। তাই আজ আবার নতুন করে দিলাম আরও একটি কম্বল।
দেখলাম সেই মানসিক বিকৃত লোকটি নতুন আর এক মানুষের রূপ। তার চোখে মুখে দেখলাম আনন্দের ঝিলিক।আজ দেখলে আপনাদের কাছে মনে হবে একজন সুস্থ ফুর ফুরে মেজাজের মানুষ। মনে হয় ফিরে পেল সে এক নতুন জীবন। এটা কোন লোক দেখানো কাজ নয়। একটি মানবিক উদ্যোগ। জানিনা কোন মায়ের সন্তান, ভীনদেশি পথহারা মানুষ। হয়তো আমার এই উদ্যোগের ফলে আপনাদের সহায়তায় সামাজিক যোগাযোগ ও গনমাধ্যমের মাধ্যমে হয়তো ফিরে পেতে পারে স্বজনরা তাকে।
তাই আসুন মানুষ মানুষের জন্য এই ব্রত নিয়ে আমরা সকলে মিলে মানবিক মূল্যবোধকে ধারন করে যার যার অবস্থান থেকে একটু সহায়তা করি এই সব মানুষদের।
লেখক : সামাজিক উদ্যোক্তা, কাউখালী. পিরোজপুর।