ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - মঠবাড়িয়ার সাফা ডিগ্রী কলেজ এক মাস ধরে তালাবদ্ধ : শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ পুকুর ঘাটে !

মঠবাড়িয়ার সাফা ডিগ্রী কলেজ এক মাস ধরে তালাবদ্ধ : শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ পুকুর ঘাটে !

বিশেষ প্রতিনিধি >
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার সাফা ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও গাফলতি কবলে পড়ে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ১০২ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটির আহবায়কের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে গত ১৮ ডিসেম্বর কলেজে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। কলেজ ভবন তালাবদ্ধ থাকায় এক মাসেরও বেশী সময় ধরে ১০২ জন ডিগ্রী শিক্ষার্থীসহ কলেজের প্রায় এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। গত দুই দিন ধরে কলেজ ক্যাম্পাসের মূল ফটকে ব্যানারসহ গেট তালাবদ্ধ, কলেজের শ্রেণী কক্ষ ও প্রশাসনিক ভবন তালাবদ্ধ থাকায় ডিগ্রী দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতূর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের কাজ চলছে কলেজের পার্শ্বস্থ পুকুর ঘাটে।

ভূক্তভোগি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রণজিৎ কুমার মিস্ত্রী ও ভর্তি কমিটির আহবায়ক প্রভাষক বাদশা মিয়া তুলকদারের অবহেলার কারণে গত ২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত সময়ে অনলাইনে রেজিষ্ট্রেশন না করায় প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি ১০২ জন শিক্ষার্থী। ফলে তারা ডিগ্রীর শিক্ষার্থী হিসেবে বৈধতা পায়নি। শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে এক বছর ঝড়ে পরায় তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কলেজের সহকারী অধ্যাপক বিনয় কৃষ্ণ বল ও প্রভাষক ইউসুফ আলী জানান, প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষার্থীরা তালাবদ্ধ করে রাখায় আমাদের পুকুর ঘাটে গত কয়েক দিন ধরে প্রায় আড়াইশ ডিগ্রীর শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের কাজ চালাতে হচ্ছে।

সাফা ডিগ্রি কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র মিঠুন শিকদার বলেন, আমরা ২৫’শ থেকে ৩’হাজার টাকা দিয়ে ডিগ্রিতে ভর্তির পর নিয়মিত ক্লাস করেছি ও কলেজে পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু গত নভেম্বর মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে ফরম পূরণের জন্য কলেজে গিয়ে জানতে পারি কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণে আমাদের রেজিস্টেশন হয়নি। এখন আমরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছি।
শিক্ষার্থী জিনিয়া আক্তার জানান, এক বছর আমাদের জীবন থেকে ঝড়ে পরলেও চলতি জানুয়ারী মাসের ১৬ তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে তার ২০১৬-২০১৭ শিক্ষা বর্ষেও ভর্তি হতে পারবে না। কলেজ ছাত্র সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রেজাউল ইসলাম শানু জানান, গত ২০১৫-২০১৬ শির্ক্ষা বর্ষে ভর্তি হতে না পারলে এর মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীর নিয়মিত ছাত্রত্ব হারাবে। যার জন্য আমরা তালাবদ্ধসহ লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছি।

কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, সাফা ডিগ্রি কলেজে ২০১৫-২০১৬ শিক্ষা বর্ষে ১০২ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রনজিৎ চন্দ্র মিস্ত্রী ও ভর্তি কমিটির আহবায়ক প্রভাষক বাদশা মিয়ার কাছে রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য খরচের জন্য ২’হাজার টাকা থেকে ৩’হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ভর্তির পর নির্ধারিত সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে রেজিস্ট্রেশনের জন্য নির্ধারিত ৪৮৫ টাকা জমা দেননি। ফলে ওই শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। গত ১৫ নভেম্বর থেকে ডিগ্রি প্রথম বর্ষের পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ শুরু হয়ে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে । কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় ওই শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণে ব্যর্থ হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করার পর তাঁরা কলেজের অধ্যক্ষকে এ বিষয়ে লিখিত জবাব দিতে বলেন। অধ্যক্ষ লিখিত জবাব দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু ফরম পূরণের সময় শেষ হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে আর কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
ভর্তি কমিটির দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ১০২ জন শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশনের টাকা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে জমা দেয়নি। তাঁদের গাফিলতির কারণে আমাদের শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অথচ এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
ভর্তি কমিটির আহবায়ক প্রভাষক মো. বাদশা মিয়া বলেন, আমি ওই সময় কলেজের অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম। ফলে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে আমি খোঁজ খবর রাখতে পারিনি।

কলেজের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রনজিৎ চন্দ্র মিস্ত্রী তার বিরুদ্ধে আনা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ৪ সদস্য বিশিষ্ট ভর্তি কমিটি যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন করেনি এবং আমাকে অবহিতও করেনি।

সাফা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটির আহবায়কের অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি স্বীকার করে বলেন, আমি পূনঃরায় কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেওয়ার পর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভর্তি কমিটিকে কারন দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়।

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...