ফারুক হোসেন খান,কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি >
ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার বাঁশবুনিয়া ও আওরাবুনিয়া দুই বধ্যভূমি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর বাঁশবুনিয়ায় বধ্যভূমিতে ক্সুদ্র পরিসরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও আওরাবুনিয়ায় কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই। বর্তমানে বধ্যভূমি দুটি এখন অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় তা গোচারন ভূমিতে পরিনত হয়েছে।
জানাগেছে ,মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সনের ২৫ মে বুধবার সকালে পাক-বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের সহায়তায় বাঁশবুনিয়া আমুয়া ও ছোনাউটা গ্রাম চারদিক ঘেরাও করে। পাক সেনারা ঘরে ঘরে গিয়ে তল্লাশী চালিয়ে মুক্তিকামী ৩৯জনকে আটক করে। তারপর স্থানীয় তালতলা বাজারের পূর্ব পাশের নদীর পাড়ে দাড় করিয়ে একের পর এক গুলি করে নির্মমভাবে তাদের হত্যা করা হয়। এ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুরো ইউনিয়নজুড়ে একটানা অভিযান চালায় পাক-বাহিনী। এসময় বাঁশবুনিয়ার ৩০জন আমুয়ায় ৮জন ও ছোনাউটা গ্রামে ১জন শহীদ হয়েছিলেন। এর পরের দিন আওরাবুনিয়া ইউনিয়নে ২১জনকে হত্যা করে দেশীয় দোসরদের সহায়তায় পাক-বাহিনী।
সেদিন যাঁরা জীবন দিয়েছিলেন, বাঁশবুনিয়া গ্রামের দেবেন্দ্র নাথ দাস, হরেন্দ্র নাথ দাস, সুকুমার দত্ত, অম্বিকা চরন নাথ, সম্ভু নাথ, বাবুরাম মালাকার, সুর্যকান্ত মন্ডল, কালিকান্ত মন্ডল, প্রফুল্ল হালদার, কাশিশ্বর শীল, রাজু শীল, নারায়ণ হালদার, কালিকান্ত হালদার, শ্যামল কান্তি হালদার, গনেশ হালদার, মায়া রানী, গঙ্গাচরন মাঝি, রাম কানাই মিস্ত্রি, কালুবালা, আবুল হাসেম মাঝি, আফজাল হোসেন, আবদুল বারী হাওলাদার, হাতেম আলী হাজী, হরেন্দ্র কুমার মিস্ত্রি, ঝুন্ডু দাস, মালতি রানী ও সুর্যকান্ত মাঝি। আমুয়া গ্রামের তোফাজ্জেল হোসেন, রাজা মিয়া, রমনী চন্দ্র দাস, শিশু কুমার দাস, নিত্যনন্দ রজকদাস, জিতেন্দ্র দেবনাথ, অমূল্য চন্দ্র নাথ, শ্রী হরি পদ, সোনাতন ঠাকুর এবং ছোনাউটা গ্রামের গনেশ চন্দ্র রায়।
উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার নুরুল হক চাঁন জমাদ্দার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের এ দুটি বধ্যভূমি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয়া উচিত ছিল।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সহকারি কমান্ডার নারায়ণ চন্দ্র কাঞ্জিলাল বলেন, শুধূ শিখা প্রজ্বলন ছাড়া কোন দিবসে এখানে কিছুই হয়না।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহিউদ্দিন তালুকদার মনি বধ্যভূমি দুটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, বাঁশবুনিয়া বধ্যভূমিতে নিহতদের স্মরনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারিভাবে বধ্যভুমির চারপাশে সীমানা প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করা হবে।
কাঁঠালিয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডাঃ শরীফ মুহম্মদ ফয়েজুল আলম বলেন,বধ্যভূমি দুটি সংরক্ষনের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্ধের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।