ব্রেকিং নিউজ
Home - এক্সক্লুসিভ - স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

স্বাধীনতা যুদ্ধ : যেভাবে শুরু ও বিজয়

নূর হোসাইন মোল্লা >
(৫ম পর্ব)

১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীন বাংলার ভেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশ্যে বেতার ভাষণে এক পর্যায়ে বৃহৎ শক্তিবর্গের নিকট মানবতার নামে আবেদন জানান যে, মানুষ হত্যাকারী পাকিস্তান বাহিনীর হাতে অস্ত্র সরবরাহ না করার জন্যে। তিনি দেশ বাসীকে অবহিত করেন যে, বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পরিকল্পিত যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে নি¤েœাক্ত সামরিক অফিসারগণকে বিভিন্ন অঞ্চলের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছেঃ (১) চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল-মেজর জিয়াউর রহমান, (২) সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চল- মেজর খালেদ মোশাররফ, (৩) ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চল-মেজর কে,এম, সফিউল্লা (৪) কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল- মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, (৫) খুলনা-বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চল-মেজর এম,এ, জলিল। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর পাকিস্তানের সিনিয়র সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা দম্ভোক্তি করে বলেন যে, আমরা চিরদিনের জন্যে পূর্ব পাকিস্তানের মাটি থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হুমকি দূর করতে সংকল্পবদ্ধ। এমনকি প্রদেশকে ৩০ বছরের জন্যে উপনিবেশ হিসেবে শাসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনে ২০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে। জেনারেল টিক্কা খান বলেন, আমি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ চাই না, মাটি চাই। মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী, ইফতেখার জানজুয়া এবং ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব আরবাব ঢাকায় এ নির্দেশ পালন করেন।
১১ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলায় (বর্তমানে মুজিবনগর) জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ৩৫০ জন সদস্য এবং দেশী-বিদেশী সাংবাদিক সহ প্রায় ১০ হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অধ্যাপক এম, ইউসুফ আলী স্বাধীনতা ঘোষণা সনদ পত্র পাঠ করেন ও ৬ সদস্য বিশিষ্ট গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেন। তিনি উপ-রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যগণকে শপথ পাঠ করান।
১৯৭১ সালে ২২ এপ্রিল জামায়াত-ই ইসলামের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি মোঃ আশরাফ হোসেন প্রথমে জামালপুরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন। এ বাহিনী ছিল মেধাসম্পন্ন রাজনৈতিক ক্যাডার। ঢাকায় এ বাহিনী গঠিত হলে সরকার এদিকে দৃষ্টি দেয় এবং মেজর রিয়াজ হোসেন এ বাহিনীর গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত হন। ঢাকার প্রত্যেক থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লায় কমিটি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ভাবে জামায়াত নেতৃত্বে এ বাহিনী পরিচালিত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রত্যেক্ষ তত্ত্বাবধানে এ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং সরকারি কোষাগার থেকে বেতন দেয়া হয়। এ বাহিনীর নেতা ছিল মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদ। এ বাহিনীর কার্যক্রম ছিল বুদ্ধিজীবী হত্যা কেন্দ্রিক। বাংগালী বুদ্ধিজীবীদেরকে তাদের প্রতিপক্ষ এবং পাকিস্তানের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। তাই এ বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবর্তে বাংগালি জাতির বিবেক তথা বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করে দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার বুদ্ধিজীবী হত্যা করে। এ বাহিনী পাক হানাদার বাহিনীকে কু-কর্মে সহায়তা করে বাংলাদেশের ইতিহাসকে কলংকিত করেছে।
পাকিস্তান সেনা বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় আল শামস্ বাহিনী গঠিত হয়। এ বাহিনী ছিল আল বদর বাহিনী মতো একটি ডেথ স্কোয়ার্ড। মাদ্রাসার ছাত্র সংগঠন জমিয়াতে তালাবায়ে আরাবিয়ার আধিক্য ছিল এ বাহিনীতে এ বাহিনীর কার্যক্রম ছিল আল বদর বাহিনীর মতো। আল শামস ও বদর বাহিনী একত্রে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে।
৩০ এপ্রিল ভারত সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করার দায়িত্ব ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ওপর অর্পন করেন। এছাড়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্যে একটি ট্যান্সমিটার বরাদ্দ করেন। ৯ মে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের টের্নিং দেয়ার দায়িত্ব ভারতীয় সেনাবাহিনী গ্রহণ করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধ নুতন প্রাণ পায়। বাংলাদেশ সরকার দিল্লীর নিকট থেকে যে সর্বাত্মক সাহায্য চেয়েছিলেন তা পাননি। কারণ ভারত সরকার তখনও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। একটা রাজনৈতিক সমাধান হয়ে যায় কিনা? পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে ভারত একা পড়ে যায় কিনা? ইত্যাদি চিন্তা ভারত সরকারকে দ্বিধাগ্রস্থ করে। এ অবস্থায় মুক্তিবাহিনীর প্রয়োজনীয় শক্তি বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
চলবে
লেখকঃ (অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক)

Leave a Reply

x

Check Also

মঠবাড়িয়ায় জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটি সংগঠনের উদ্যোগে রোজদারদের ইফতার বিতরণ

মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় স্বেচ্ছাসেবি সংগঠন জাতীয় মানবাধিকার ইউনিটির উদ্যোগে মাহে রমজানে সহস্রাধিক মানুষের ...